E-Paper

করমণ্ডল: উদ্ধার-তথ্য সংরক্ষণ ওড়িশায়

শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সে বারে ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল সুপার সাইক্লোন। যাতে বিপর্যস্ত হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার পরিবার। এর পরও ‘ফণী’, ‘মোকা’র মতো বহু ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী ওড়িশা।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ০৮:৪৪
Coromandel Express Accident

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা। —ফাইল চিত্র।

অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগেও নিজেদের প্রস্তুত করেছে ওড়িশা। সেই ধারা বজায় রেখে এ বারও বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্য ও ‘শিক্ষা’ ভবিষ্যতের স্বার্থে সংরক্ষণে উদ্যোগী হল নবীন পট্টনায়কের সরকার।

শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সে বারে ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল সুপার সাইক্লোন। যাতে বিপর্যস্ত হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার পরিবার। এর পরও ‘ফণী’, ‘মোকা’র মতো বহু ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী ওড়িশা। তবে ’৯৯ সালের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরের বার তারা অনেক প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। ঠিক একই ভাবে করমণ্ডলের দুর্ঘটনা থেকেও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ‘ওড়িশা স্টেট ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ বা ‘ওডসমা’। তথ্য সংরক্ষণে সব থেকে গুরুত্ব পাচ্ছে উদ্ধার পরিকল্পনা। কারা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলেন, বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় কী ভাবে হয়েছিল, কী যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়েছিল— সব তথ্য সংরক্ষিত হবে। ওডসমা-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর জ্ঞানরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘এই ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনার মতো বিপর্যয় আমাদের ওড়িশায় প্রথম। এই উদ্ধার প্রক্রিয়া থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে।’’ বালেশ্বরের জেলাশাসক দত্তাত্রেয় ভাউসাহেব শিন্দেও মানছেন, ‘‘সংরক্ষণের কাজে ওডসমা-র দল নেমেছে। এই বিপর্যয় মোকাবিলার তথ্য সংরক্ষণ ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।’’

গত ২ জুন করমণ্ডল এবং যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাঁপিয়েছিল ওড়িশা পুলিশ, ওড়িশা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, বায়ুসেনা, সেনাবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল, রেল সুরক্ষা বাহিনী, দমকল, চিকিৎসক, নার্স-সহ দুর্ঘটনাস্থল বাহানাগার বহু সাধারণ মানুষও। জানা যাচ্ছে, সংরক্ষণের প্রাথমিক পর্বে এঁদের বয়ান রেকর্ড করা হবে। উদ্ধার পরিকল্পনার একটি ব্লু-প্রিন্টও তৈরি করা হবে। কী ভাবে উদ্ধারকাজ চলল, গ্যাস কাটার কী ভাবে চালানো হল, জখম ও নিহতদের কী ভাবে হাসপাতালে পাঠানো হল— সব খুঁটিনাটি তথ্য ঠাঁই পাবে সেখানে। পুস্তিকা আকারে সংরক্ষণের সঙ্গেই তথ্যচিত্রও তৈরি করা হবে। ওড়িশা বিপর্যয় মোকাবিলা দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘অতীতে আমাদের বিপর্যয় মোকাবিলার মডেল জাতীয়, এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে। এ বারের অভিজ্ঞতা আলাদা। সেই শিক্ষা যাতে হারিয়ে না যায় তাই এই উদ্যোগ।’’

পশ্চিমবঙ্গও দেখেছে গাইসাল, জ্ঞানেশ্বরী, সাঁইথিয়ার মতো ট্রেন দুর্ঘটনা। সে সব দুর্ঘটনার তথ্য কি সংরক্ষিত রয়েছে এ রাজ্যে? এ প্রশ্নে ঢোঁক গিলছে পশ্চিমবঙ্গের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। রাজ্যের ওই দফতরের ডিরেক্টর পালডেন শেরপা বলেন, ‘‘আমার কাছে এ সম্পর্কে তথ্য কিছু নেই। জেলাগুলি অনেক সময় তথ্য সংরক্ষণ করে। তা ছাড়া গাইসাল, জ্ঞানেশ্বরী— এ সব অনেক আগের বিষয়। এ ব্যাপারে আমার জানা নেই।’’ জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার সময় খড়্গপুর মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক ছিলেন আশিস মহাপাত্র। এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত। আশিস বলছিলেন, ‘‘জ্ঞানেশ্বরীর সময় ঝাড়গ্রামের বাহিনী কাজ করেছিল। আমরাও পরোক্ষ ভাবে উদ্ধারে জড়িয়েছিলাম। কিন্তু সেই বিপর্যয় মোকাবিলার তথ্য সংরক্ষণ হয়নি।’’ যদিও পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই আটকানো সম্ভব হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Coromandel Express accident Odisha naveen patnaik

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy