Advertisement
E-Paper

বরাকও দখল করবেন, আশায় গগৈ

বিজেপির সঙ্গে অসম গণ পরিষদ (অগপ) জোট বাঁধায় অন্তত বরাক উপত্যকায় কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তাঁর আশ্বাস, ফের ক্ষমতায় এলে বরাক-ব্রহ্মপুত্রকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবেন তিনি। বরাকের মানুষের অভিযোগ শুনতে সেখানেই তৈরি হবে চারটি ডাইরেক্টরেট, সচিবালয়ের শাখা।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:০২
সাক্ষাত্কারের ফাঁকে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বাসভবনে। উজ্জল দেবের তোলা ছবি।

সাক্ষাত্কারের ফাঁকে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বাসভবনে। উজ্জল দেবের তোলা ছবি।

বিজেপির সঙ্গে অসম গণ পরিষদ (অগপ) জোট বাঁধায় অন্তত বরাক উপত্যকায় কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তাঁর আশ্বাস, ফের ক্ষমতায় এলে বরাক-ব্রহ্মপুত্রকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবেন তিনি। বরাকের মানুষের অভিযোগ শুনতে সেখানেই তৈরি হবে চারটি ডাইরেক্টরেট, সচিবালয়ের শাখা।

আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আজ গগৈ হিন্দু বাঙালিদের বিরোধিতার প্রশ্নে সর্বানন্দ সোনোয়াল ও প্রফুল্ল মহন্তকে এক হাত নেন। তিনি বলেন, ‘‘সর্বানন্দ সোনোয়ালের জন্য আইএমডিটি আইন প্রত্যাহার করা হল। প্রফুল্ল মহন্ত বাঙালি খেদাও আন্দোলনের অন্যতম মূল নেতা। তাঁরা একজোট হয়ে ক্ষমতায় এলে হিন্দু বাঙালিদের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে তা বরাক ও ব্রহ্মপুত্রের মানুষ জানেন। মনে হয় না তাঁরা সেই ভুল করবেন।’’

গগৈয়ের দাবি, ২০১৪ সাল পর্যন্ত অসমে আসা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব গগৈই প্রথম দেন। তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য এবং হিমন্তবিশ্ব শর্মা। গগৈ বলেন, ‘‘হিমন্তের নিজের কেন্দ্র জালুকবাড়ির পান্ডু-মালিগাঁওয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বাঙালিপ্রধান। তাই বাঙালিদের বিরুদ্ধে বেশি সরব হচ্ছেন না হিমন্ত। কিন্তু এক সময় আসুর নেতা থাকা সর্বানন্দ, প্রফুল্ল মহন্ত ও হিমন্তের মনোভাব বাঙালিদের ভোলার কথা নয়। শুধু হিন্দু বাঙালি নয়, গুপ্তহত্যার নায়ক হিসেবে অসমিয়রাও মহন্তকে ক্ষমা করবেন না।’’

নিজের পরিবারের প্রসঙ্গ তুলে গগৈ বলেন, ~~আমার স্ত্রীর মাসি তিলোত্তমা গগৈ অসমের প্রথম মহিলা ডক্টরেট। তিনি বাঙালিকে বিয়ে করেছেন। আমার এক বৌদিও বাঙালি। আমার সঙ্গে বরাবরই বাঙালিদের খুব ভাল সম্পর্ক। এখন আবার আমার পুত্রবধূ ব্রিটিশ। তাই আমার পরিবারই সহিষ্ণুতার বড় উদাহরণ।’’

গগৈ আরও জানান, সর্বানন্দ সোনোয়ালের নামে খুনের চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। পরে হয়তো তিনি মুক্ত হয়েছেন। হিমন্তর বিরুদ্ধে সারদা-লুই বার্জার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার মতো অভিযোগ আছে। মহন্ত গুপ্তহত্যার মূল মাথা। এমন তিন জন জোট বেঁধেছেন যখন, তখনই কংগ্রেস মানুষের কাছে একমাত্র বিকল্প হয়ে গিয়েছে।

গগৈ অগপ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপিকে হারানোর জন্যে কংগ্রেসের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল অগপ।’’ তার প্রমাণ কী আছে? গগৈ বলেন, ‘‘আমি বলছি সেটাই প্রমাণ। অন্য কোনও প্রমাণ নেই। ওরা আমাদের সাহায্য চেয়েছে, আমরা যে ভাবে হয় সাহায্য করেছিলাম। যদি টাকা না নিয়ে থাকে তা হলে অগপ আমার কথার প্রতিবাদ করুক।’’

নাগরিকত্ব প্রশ্নে বিজেপি এখন কংগ্রেসের মতেই সায় দিয়েছে। কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তা হলে কংগ্রেসের তাস তো বিজেপির হাতে চলে গেল।

মুখ্যমন্ত্রী তা মানতে নারাজ। উল্টে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ওই বিষয়ে চমকের রাজনীতি করছে। তাঁরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েই কাজ সারল। কিন্তু তার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। এখন আমাকে মানুষ ভুল বুঝছে। আমি কোন আইন দেখিয়ে সন্দেহজনক নাগরিকদের গ্রেফতারি রুখব বা কাউকে নাগরিকত্ব দেব? বিজ্ঞপ্তি কোনও সরকারি আইন নয়। কেন্দ্রকে বারবার বলেছি, এ নিয়ে তারা বিল পেশ করুক। তা কিন্তু করা হচ্ছে না।’’ তাঁর বক্তব্য, বিজেপির জোট শরিক অগপ জানিয়েছে, তাঁরা ওই বিজ্ঞপ্তি মানে না। ওই ঘোষণা অসম চুক্তির বিরোধী। তাই জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বোঝা যাচ্ছে কী হতে চলেছে।

গত লোকসভা নির্বাচনে বরাকের জন্য হাজার কোটির প্যাকের দিলেও বরাক পেয়েছে মাত্র ৪০০ কোটি। এ বার আরও ২ হাজার কোটির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গগৈ। কিন্তু টাকার প্রতিশ্রুতি দিলেই কি ভোট মিলবে?

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্যাকেজ ঘোষণা মানেই টাকা দিয়ে দেওয়া নয়। মোটা টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু প্রকল্প শেষ করতে তো সময় লাগবে। ৪০০ কোটির কাজ হয়েছে বরাকে সেটা কম কথা নয়। একটা বগিবিল, একটা ব্রডগেজ শেষ করতে কত বছর গড়িয়ে যায়। আমি বরাকের জন্যে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লাগলে তা-ও দেব।’’

কিন্তু মেঘালয় পেরিয়ে মালিডহর দিয়ে বরাকে ঢুকলে বা চুরাইবাড়ি দিয়ে বরাক পেরোলে রাস্তাই বলে দেয় অসম শেষ। রাজ্য ও কেন্দ্রের চাপান-উতোরে বরাকবাসী আর কত দিন অভিভাবকহীন থাকবে?

মুখ্যমন্ত্রী মেনে নেন বরাকে এখনও রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। তার জন্য তিনি এক দিকে যেমন স্থানীয় বিধায়কদের উপর দায় চাপান, অন্য দিকে দাবি করেন, বরাকের কাজের জন্য টেন্ডার ডেকেও যোগ্য ঠিকাদার পাওয়া যায় না। তিনি জানান, কাঁচামালের জোগান না থাকা, বিভিন্ন সামগ্রী আমদানিতে খরচ বেশি হওয়া ও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে ভাল ঠিকাদাররা বরাকের প্রকল্প নিতে আগ্রহী নন। তবে কংগ্রেস এই সমস্যা কাটাতে চেষ্টা করছে। আর জাতীয় সড়কের দায়িত্ব জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের।

অমিয়া গগৈ, শরৎ শইকিয়াদের মতো প্রবীণ বিধায়করা টিকিট না পেলেও কোন জাদুতে গাড়িচোর চক্রকে সাহায্য করার অপরাধে জেল খাটা রুমি নাথ ফের বড়খলায় টিকিট পেলেন? গত কয়েক বছরে একাধিক বিবাহ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, মারধর-সহ বিভিন্ন নেতিবাচক কারণে শিরোনামে এসেছেন রুমিদেবী। তাঁকে নিয়ে দলও যথেষ্ট বিব্রত ছিল। তাও কেন রুমিকেই বেছে নিল কংগ্রেস?

রুমি প্রশ্নে দলের অস্বস্তি মেনে নেন গগৈও। কিন্তু তাঁর মতে, উপযুক্ত বিকল্প নেতা না থাকার জন্যেই সব দিক ভেবে রুমিকে ফের টিকিট দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রুমির অপরাধ এখনও প্রমাণিত হয়নি। আর দল যুব প্রজন্মকে এগিয়ে দিতে চাইছে। এই কারণেই অমিয়া গগৈ, শরৎ শইকিয়ার বদলেও নতুন প্রার্থী এসেছেন।’’

বয়স যদি বিচার্য হয়, তবে প্রদেশ সভাপতি অঞ্জন দত্ত, শিবসাগরের বিধায়ক প্রণব গগৈয়ের বদলে অন্য কাউকে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিলেও কেন মানা হয়নি? গগৈ বলেন, ‘‘প্রণববাবুর জনপ্রিয়তা ও জেতার সম্ভাবনা বেশি। তাঁর কেন্দ্র তাঁর চেয়ে যোগ্য প্রার্থী ছিল না।’’

এআইইউডিএফের সঙ্গে কংগ্রেসের গোপন বোঝাপড়ার কথা খোদ তাদের দলনেতা বদরুদ্দিন আজমল বলে বেড়াচ্ছেন। হিন্দু ভোট হারানোর ভয়েই কী সরাসরি জোটে গেল না কংগ্রেস? নির্বাচনের পরে কি জোট হচ্ছেই?

সে কথা উড়িয়ে গগৈ বলেন, ‘‘আমরা একলাই লড়ব, একলাই জিতে ক্ষমতায় আসব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। জোটে গেলে বিজেপি-অগপ-বিপিএফের মতোই অবস্থা হবে। তিন জন তিন দিক থেকে পিছনে টানবে। তিনের দাবিপূরণ করতে গিয়ে জনতার দাবি আর মেটানো হবে না। মানুষের কাছে এটাই প্রশ্ন, আপনারা শক্তিশালী একদলীয় সরকারের সুবিধী চান নাকি খিচুড়ি জোটের হাতে নিজেদের তুলে দিয়ে অন্ধকার ভবিষ্যৎ চান?’’

নিজের কেন্দ্রে সাংসদ কামাখ্যাপ্রসাদ তাসাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কেমন মনে হচ্ছে?

গগৈ বলেন, ‘‘এটাই আমার শেষ নির্বাচন। ওখানকার মানুষের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার কিছু নেই। ওখানে দিনের পর দিন জনসভা না করলেও চলবে। কামাখ্যাকে 'বেস্ট অফ লাক' ছাড়া কিছু বলার নেই। তিতাবরবাসী তাসাকে ভালবেসে ভোট দিলে দেবেন।’’

মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সর্বানন্দ মাজুলি থেকে দাঁড়ানোয় গগৈ ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘‘নিজের জন্মভূমি ডিব্রুগড় থেকে কেন দাঁড়ালেন না সর্বা? কারণ সেখানকার মানুষ তাঁকে ভালমতো চেনেন। তাই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে লড়তে হয় তাঁকে।’’ গগৈয়ের দাবি, ‘‘সর্বানন্দ ক্ষমতাহীন পুতুল। বিজেপির মহেন্দ্র সিংহ, রাম মাধবরা তাঁকে চালাচ্ছেন। বিজেপির রাজ্যের নেতাদের উপরে দিল্লির বিশ্বাস নেই। তাই মহেন্দ্র সিংহ পাকাপাকি এখানেই থেকে গেলেন।’’

১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু মানছেন না মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া তখনই হয় যখন সরকার ভাল কাজ না করে। অসমে কংগ্রেস সরকার সার্বিক উন্নয়ন এনেছে। গত ১৫ বছরে হিন্দু-মুসলিম, বাঙালি-অসমীয়া, বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে সমন্বয় ও সম্প্রীতির পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে। প্রায় সব জঙ্গি সংগঠনকে মূল স্রোতে এনে রাজ্যে শান্তি ফিরিয়েছে কংগ্রেস। এর পরেও জনতা অন্য কাকে ভোট দেবে? কংগ্রেস আসার আগে রাজ্যে কী অবস্থা ছিল সবাই জানে।

বিজেপি হিন্দু ভোটের বড় অংশ কেড়ে নেবে বলেও মানছেন না গগৈ। দাবি, প্রকৃত হিন্দুত্ব সর্বধর্মসহিষ্ণুতা শেখায়। শঙ্করদেব-আজান ফকিরে ভেদ করে না। তিনি বলেন, ‘‘আমি সব ধর্মের মূল আদর্শকে তুলে ধরতে চাই। তা হলে রাজ্যে ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা বিফল করা যাবে।’’

Tarun Gogoi assembly election Assam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy