নিয়ন্ত্রণরেখায় সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটালো পাকিস্তান। শুক্রবার রাত থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একাধিক চৌকি লক্ষ্য করে মর্টার ছুড়তে শুরু করে পাক রেঞ্জার্স। সেই সঙ্গে লাগাতার গুলিবৃষ্টি। পাক গোলায় ৮ বছরের এক শিশু-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েক জন। তার মধ্যে বিএসএফের এক জওয়ানও আছেন। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও।
ভারত-পাক বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মধ্যেই গত ১৪ দিনে ১৬ বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করল পাকিস্তান। শুক্রবার রাতে কাশ্মীরের আরনিয়া, আর এস পুরা এবং পুঞ্চের হামিরপুর সাব সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ২২টি সেনা ছাউনি ও সীমান্তবর্তী ১৩টি গ্রামে মর্টার ও গুলি ছোড়ে পাক সীমান্তরক্ষী বাহিনী, রেঞ্জার্স। পাক রেঞ্জার্সের ছোড়া মর্টারের শেল এসে পড়ে জোরধা ফার্ম গ্রামের বাসিন্দা আক্রম হুসেনের বাড়িতে। বিস্ফোরণে উড়ে যায় বাড়ির ছাদ। মৃত্যু হয় আক্রম ও তাঁর ছেলে আসলামের। শনিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত বিএসএফ ও পাক রেঞ্জার্সের মধ্যে গুলির লড়াই চলে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে জরুরি ভিত্তিতে জম্মুর সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি থেকে সরানো হয়েছে ৩ হাজার বাসিন্দাকে।
এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। চাপের মুখে পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পাল্টা আঙুল তুলেছে বিএসএফ-এর দিকেই। সীমান্তের উত্তেজনা কমাতে দু’দেশের ‘ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস’ (ডিজিএমও)-এর বৈঠকের ডাক দেন সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ।
নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক বাহিনীর বেপরোয়া গুলিবৃষ্টির পিছনে অন্য কারণ আছে বলে সন্দেহ সেনাকর্তাদের। তাঁদের আশঙ্কা, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে অন্য বারের মতো এ বারেও শীতের আগে এ ভাবে জঙ্গি ঢোকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পাক বাহিনী। শুক্রবার রাতে জম্মুর আখনুর সেক্টরে টহলদারির সময়ে বিএসএফের নজরে আসে চাকলা পোস্টের কাছে ধসে গিয়েছে খানিকটা জমি। জুলাইয়ে ওই একই জায়গা দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল জঙ্গিরা। তারই প্রেক্ষিতে সেনা অফিসারদের আশঙ্কা, ওই অঞ্চল বরাবর হয়তো কোনও সুড়ঙ্গ খোঁড়ার চেষ্টা চলছে। সেনা সূত্রের বক্তব্য, আর দু’-তিন মাসের মধ্যেই শীত নেমে আসবে উপত্যকায়। তখন আর জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটানো সম্ভব নয়। বিএসএফের দাবি, সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীকে অন্য দিকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে পাক সেনা। যাতে অনায়াসেই সুড়ঙ্গ মারফত ভারতে ঢুকতে পারে পাক জঙ্গিরা। সুড়ঙ্গ-রহস্যের সমাধানে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন ভারতীয় সেনার ইঞ্জিনিয়ার এবং টেকনিক্যাল বিভাগের কর্মীরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, নওয়াজ শরিফ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলাতে উদ্যোগী হন। প্রথম থেকেই তাঁর চেষ্টায় জল ঢালতে উদ্যোগী হয়েছে পাক সেনা-আইএসআইয়ের একাংশ। নওয়াজের বিরুদ্ধে ইমরান খান, তাহিরুল কাদরিদের বিক্ষোভে পাক সেনা গোপনে মদত দিচ্ছে বলেও ধারণা ভারতীয় গোয়েন্দাদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, নওয়াজকে নড়বড়ে করে দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্তে হামলা চালিয়ে ভারত-পাক আলোচনা প্রক্রিয়া পুরোপুরি হিমঘরে পাঠিয়ে দিতে চায় পাক সেনা-আইএসআই।
আজিজ অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে বলছেন, “মিথ্যে দোষারোপ না করে এ ব্যাপারে সত্যিই যদি প্রমাণ থাকে তা হলে তা পাকিস্তানকে জানাক ভারত সরকার।” আজ যুদ্ধজাহাজ ‘কামোর্তা’-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “পাকিস্তানের তরফে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় সেনা এবং বিএসএফ দক্ষতার সঙ্গেই প্রতিটি সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে।”
বিক্ষিপ্ত হিংসার কথা শোনা গিয়েছে কাশ্মীরের অন্য প্রান্ত থেকেও। গত কাল রাতে উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারার জালুরায় জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সেনার। তবে জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy