নামেই পার্ক। সারা বছর সেটির গেটে তালা ঝোলে। এমনই অবস্থা করিমগঞ্জের শম্ভুসাগর পার্কের।
স্থানীয় সূত্রে খবর, অনেক আগে এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দূর করতে শম্ভুনাথ সেন পুরকায়স্থ ও কৃষ্ণকিশোর সেন পুরকায়স্থ সেখানে একটি পুকুর তৈরি করেছিলেন। ১৯১৩ সালে করিমগঞ্জে পুরসভা গঠনের পর পুকুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যায় পুরসভার হাতে। পরে পুকুরটির চার দিক ঘিরে একটি পার্ক তৈরি করা হয়। পুকুর থেকে সরাসরি জল নেওয়া বন্ধ করে পুরসভা। সেখানে একটি টিউব-কলের ব্যবস্থা করা হয়। ওই সময় পার্কে ঢুকতে প্রবেশ মূল্য দিতে হত না। দিনের যে কোনও সময় শহরবাসী সেখানে ঘুরতে পারতেন।
ছবিটা বদলে যায় ২০০৪ সালে। তৎকালীন পুরপ্রধান ছিলেন দেবর্ষি ভট্টাচার্য। দেবর্ষিবাবু পার্কটিকে নতুন চেহারায় সাজানোর উদ্যোগ নেন। সেখানে কাঠের বেঞ্চের পরিবর্তে কংক্রিটের বেঞ্চ তৈরি করা হয়। কয়েকটি পাথরের পুতুল ও একটি টয় ট্রেন বসানো হয়। সঙ্গে ছিল নতুন ধাঁচের আলো।
সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা! ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর রাজ্যের তৎকালীন আবগারি মন্ত্রী গৌতম রায় নতুন ভাবে সাজানো পার্কটির উদ্বোধন করেন। সেই দিন মন্ত্রী উঠেছিলেন টয় ট্রেনে। কিন্ত সেটির ইঞ্জিন কোনও ভাবে অচল হয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত ভিড় ট্রেনটিকে ঠেলে কিছু দূর নিয়ে যান। মন্ত্রীর টয় ট্রেনে চড়ার ইচ্ছা সে ভাবেই পূর্ণ করা হয়। কিন্তু সকলে বুঝতে পারেন, টয় ট্রেনটি নিম্নমানের। ট্রেনটিকে মেরামত করার কাজ শুরু হয়। তখন নতুন ফরমান জারি করেন দেবর্ষিবাবু। তিনি জানিয়ে দেন, এর পর থেকে টিকিট কেটে ঢুকতে হবে শম্ভুসাগর পার্কে। কয়েক দিন টয় ট্রেন নির্বিঘ্নে চলে। শহরের শিশুদের ভিড় জমত সেখানে। কিন্তু বেশি দিনের জন্য নয়। ফের অচল হয়ে যায় ট্রেনটি। বাচ্চাদের নিয়ে ওই পার্কের গেটে পৌঁছলে অভিভাবকদের বলে দেওয়া হয়, ট্রেন অচল— তাই গেট আর খুলবে না।
২০০৯ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুরপ্রধান হন চিকিৎসক মানস দাস। কিন্তু তাঁর কার্যকালের প্রথম দিকে ওই পার্ক নিয়ে হেলদোল ছিল না পুরসভার। শহরবাসী সেখানে ঢুকতে পারছেন কি না, টয় ট্রেনটির কেমন হাল— তা নিয়ে পুরসভার কেউই খোঁজ নেননি বলে অভিযোগ। পার্কটি ঠিকমতো পরিষ্কারও করা হতো না। পরিত্যক্ত পার্কটি কার্যত জঙ্গলে বদলে যায়। মানুসবাবুর মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু দিন আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে শম্ভুসাগর পার্কে জঙ্গল পরিষ্কার ও দেওয়াল মেরামত করা হয়। তবে তুলে ফেলা হয় টয় ট্রেনের লাইন। এখন ওই ট্রেনের ইঞ্জিন, কামরা, লাইন পুরসভা অফিসের পিছন দিকে খোলা আকাশের নীচে পড়ে রয়েছে।
সরকারি টাকা খরচ করে পার্কের মেরামত করা হলেও, এখনও শম্ভুসাগরের গেটের তালা খোলেনি। কয়েক বছর ধরে এমনই পরিস্থিতি রয়েছে। করিমগঞ্জের নাগরিকদের ভরসা এখন নবনিযুক্ত পুরনেত্রী শিখা সুত্রধর। শিখাদেবী আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি এ নিয়ে পদক্ষেপ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy