Advertisement
০২ মে ২০২৪

শ্বশুরবাড়িতে আনাগোনা ছিল পিটারের

স্ত্রী ইন্দ্রাণীর গুয়াহাটির বাড়িতে কখনও আসেননি এবং ইন্দ্রাণীর বাবা-মায়ের সঙ্গেও তাঁর কখনও দেখা হয়নি বলে দাবি করেছিলেন পিটার মুখোপাধ্যায়। প্রাক্তন টিভি ব্যারনের ওই দাবি কিন্তু মানছেন না ইন্দ্রাণীর নিকটাত্মীয় এবং মিখাইল বরা-র বন্ধুরা।

পুলিশি ঘেরাটোপে ইন্দ্রাণী। মুম্বইয়ে। ছবি: এএফপি

পুলিশি ঘেরাটোপে ইন্দ্রাণী। মুম্বইয়ে। ছবি: এএফপি

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

স্ত্রী ইন্দ্রাণীর গুয়াহাটির বাড়িতে কখনও আসেননি এবং ইন্দ্রাণীর বাবা-মায়ের সঙ্গেও তাঁর কখনও দেখা হয়নি বলে দাবি করেছিলেন পিটার মুখোপাধ্যায়। প্রাক্তন টিভি ব্যারনের ওই দাবি কিন্তু মানছেন না ইন্দ্রাণীর নিকটাত্মীয় এবং মিখাইল বরা-র বন্ধুরা।

ইন্দ্রাণীর মা দুর্গারানি বরা-র সঙ্গে রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত, ইন্দ্রাণীর অতি নিকট আত্মীয় রবিবার বরং উল্টো কথাই বললেন। দাবি করলেন, পিটার যে কেবল গুয়াহাটি এসেছিলেন তা-ই নয়, সুন্দরপুরে বরা-দের বাড়িতেও এসেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লখিমপুরের বাসিন্দা ওই ভদ্রলোকের এ-ও দাবি, দুর্গাদেবী এবং তাঁর স্বামী উপেন্দ্র বরা-কে একবার বিদেশে বেড়াতেও নিয়ে গিয়েছিলেন পিটার। ওই একই কথা শোনা গিয়েছে মিখাইলের বন্ধু প্রণয় বরা-র মুখেও।

বর্তমানে ইন্দ্রাণীর মা একেবারেই শয্যাশায়ী। ইন্দ্রাণীর ছেলে মিখাইল পুলিশের সঙ্গে মুম্বই গিয়েছেন। জিএনআরসি হাসপাতালের এক নার্স এই সময়টা উপেন্দ্রবাবু ও দুর্গাদেবীর দেখভাল করছেন। সেই নার্সই জানাচ্ছেন, দুর্গাদেবী স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছেন। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। উপেন্দ্রবাবুও বার্ধক্যজনিত রোগ এবং ব্লাড সুগারে কাবু। জানা গিয়েছে, ঘরদোর খুবই নোংরা। যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে মদের বোতল। মিখাইল এর আগে সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছিলেন, দাদু-দিদিমাকে দেখভাল করার জন্যই তাঁর চাকরি ছেড়ে এখানে থাকা। কিন্তু ঘরের অবস্থা দেখে নার্স ও প্রতিবেশীদের ধারণা, মিখাইল মুখে যা-ই বলুন, বাস্তবে মোটেই দাদু-দিদিমার যত্ন নেন না। ইন্দ্রাণীর পাঠানো টাকা সম্ভবত মোচ্ছবেই উড়ে যায়।


বাড়িতে শয্যাশায়ী ইন্দ্রাণীর মা দুর্গারানি বরা। — নিজস্ব চিত্র।

ওই নিকটাত্মীয় এবং মিখাইলের বন্ধুরা বলেন, মিখাইলের সঙ্গে পিটারের সম্পর্কও ভাল ছিল। মিখাইলের এক বন্ধু এ দিন দাবি করেন, শিনার সঙ্গেই মিখাইলকে ইউরোপ ভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন পিটার-ইন্দ্রাণী। সুন্দরপুরের বাড়ির ভোলও বদলে দেন পিটারই। ২০০৫ সালে বাড়ির কাজ শেষ হওয়ার পর ইন্দ্রাণী পার্টি দিয়েছিলেন। তবে পিটার সেখানে ছিলেন না। কিন্তু মিখাইল যে দাবি করছেন, মাত্র তিন বার তাঁর সঙ্গে পিটারের দেখা হয়েছে, তা সত্য নয় বলেই বন্ধুদের বক্তব্য।

মিখাইলের বন্ধুরা আরও আশ্চর্য হয়েছেন, মিখাইল তাঁদের কাছে বহু সত্য গোপন করে যাওয়ায়। কী রকম? শিনা খুন হওয়ার দিন যে মিখাইল মুম্বইয়ে ছিলেন, সে কথা বন্ধুরা জানতেন না। সঞ্জীব খন্নার সঙ্গে যে মিখাইলের দেখা হয়েছিল, সেটাও না। এর ফলে গোটা ঘটনায় মিখাইলের ভূমিকা নিয়েই অজস্র প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বন্ধুদের মনে। যেমন, শিনা খুন হওয়ার দিন মিখাইলকেও যদি সন্দেহজনক পানীয় খাওয়ানো হয়ে থাকে, তা হলে মিখাইল সে কথা তখনই পুলিশকে জানাননি কেন? এত কিছুর পরেও তিনি ইন্দ্রাণীর কথা মতো কাজই বা করছিলেন কেন? শিনা খুন হওয়ার পরে তাঁর অফিসে, ভাড়া বাড়িতে শিনার ই-মেল থেকে যে চিঠি গিয়েছিল, সেটা মিখাইলই পাঠিয়েছিলেন বলে পুলিশ জেনেছে।

কেন এ কাজ করলেন মিখাইল? বন্ধুদের দাবি, ২০১২-র মাঝামাঝি শিনার উধাও হয়ে যাওয়া এবং চাকরি ছেড়ে মিখাইলের সু্ন্দরপুরে চলে আসার ঘটনা খুব কাছাকাছিই ঘটে। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল অবধি যে ছেলের নেশামুক্তির জন্য চিকিৎসা চালিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী, শিনা-হত্যার পরে, টাকা দিয়ে তাঁরই মুখ বন্ধ করিয়েছিলেন কি? শিনার ই-মেল-ফেসবুক ইত্যাদির পাসওয়ার্ড যখন মিখাইলের কাছে ছিলই, তখন শিনার আমেরিকা-বাসের ভুয়ো ছবিও কি তিনিই ইন্দ্রাণীর কথামতো পোস্ট করতেন? ইদানীং টাকা দেওয়া বন্ধ করাতেই কি ছেলে শেষমেশ মায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন?

বন্ধুদের সন্দেহ কিন্তু যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE