Advertisement
২১ মে ২০২৪

সংসদে মোদী, এসেছিলে তবু আসো নাই...

ক্ষণিকের জন্য আজ লোকসভায় দেখা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাকুল্যে মিনিট পাঁচেক। একটি কথাও বলেননি। তার মধ্যেই অবশ্য লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। এর পর আর ফিরে আসেননি প্রধানমন্ত্রী।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৯
Share: Save:

ক্ষণিকের জন্য আজ লোকসভায় দেখা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাকুল্যে মিনিট পাঁচেক। একটি কথাও বলেননি। তার মধ্যেই অবশ্য লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। এর পর আর ফিরে আসেননি প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, কালও রাজ্যসভায় থাকতে পারেন মোদী।

কিন্তু এই ক্ষণিকের উপস্থিতি নিয়েই গোটা বিজেপি শিবির ঝাঁপিয়ে পড়েছে— এই দেখুন প্রধানমন্ত্রী সংসদে। যে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চাইছিলেন, তারাই এখন আর আলোচনা করছে না। সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, অসম থেকে মধ্যপ্রদেশে উপনির্বাচনের জয় দেখিয়ে দিয়েছে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর পাশে। মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ বলছেন, জওহরলাল নেহরু থেকে আজ পর্যন্ত সব প্রধানমন্ত্রীর হাজিরার খতিয়ান খতিয়ে দেখুন, মোদীর উপস্থিতিই সব থেকে বেশি।

কিন্তু কোথায় কী? লোকসভার রেকর্ড ঘেঁটে যা বেরিয়ে আসছে, তাতে এক দিনও অধিবেশনে আসেননি প্রধানমন্ত্রী। আসলে সাংসদরা যখন লোকসভা বা রাজ্যসভায় যান, নিয়ম হল বাইরে রাখা ডায়েরিতে নিয়মিত স্বাক্ষর করা। সেই স্বাক্ষরই লিপিবদ্ধ করে, কোন সাংসদ কত দিন সংসদে উপস্থিত থাকলেন। এর ভিত্তিতে ভাতাও পান সাংসদরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লোকসভা বা রাজ্যসভায় এক দিনও আসেননি, এমন নয়। অথচ সই না-করার জন্য তিনি কত দিন সংসদে হাজির থেকেছেন, সেই হিসাবটি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় অবশ্য বলছে, প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত সংসদ ভবনে আসেন। সংসদে নিজের দফতরে বসে রোজ সকালে দলের নেতাদের সঙ্গে সংসদের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। লোকসভা বা রাজ্যসভায় না গেলেও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার দেখেন। কিন্তু বিরোধীরা বলছে, তিনি সই করেন না আসলে হিসাবটি গুলিয়ে দিতেই। রাহুল গাঁধী আজও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গানের কনসার্টে গিয়েও বক্তৃতা করছেন। সংসদে এসে কথা বলতে আপত্তি কোথায়? কীসের ভয়? নোট বাতিলের সিদ্ধান্তটি তো তাঁর। প্রধানমন্ত্রীর উচিত সংসদে সারাক্ষণ বসে বিরোধীদের কথা শোনা।’’

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে এখনও জীবিত তিন জন। অটলবিহারী বাজপেয়ী, এইচ ডি দেবগৌড়া ও মনমোহন সিংহ। বাজপেয়ী অসুস্থ। তিনি আর সাংসদও নন। কিন্তু দেবগৌড়া আর মনমোহন সিংহ দু’জনেই সংসদের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় দেবগৌড়া প্রায়ই ঘুমিয়ে পড়তেন বলে অভিযোগ উঠত। সেই দেবগৌড়ারও সংসদে উপস্থিতির হার ৫৫ শতাংশ। কোনও অধিবেশনে তাঁর উপস্থিতির হার ২০ শতাংশের নীচে, কোথাও ৮০ শতাংশের বেশি হাজির থেকেছেন। আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ‘স্ট্রাইক রেট’ তো ৯৫ শতাংশ। একমাত্র এ বছরের বর্ষা অধিবেশনে তাঁর উপস্থিতির হার ছিল ৭৫ শতাংশ। আর লোকসভায় হারের পর ২০১৪ সালের শীতকালীন অধিবেশনে তাঁর উপস্থিতি ছিল ৯৫ শতাংশ। বাকি সব অধিবেশনে মনমোহন একশোয় একশোয়।

কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচিত ছিল মনমোহন সিংহের থেকে পরামর্শ নেওয়া। তিনি সংসদে আসছেন না। বাইরে থেকে অ্যাপের মাধ্যমে জনতার মত চাইছেন।’’ চাপের মুখে পড়ে বিজেপি নেতারা আজ সন্ধ্যায় বলেন, বিরোধী দলের সঙ্গেও আলোচনায় রাজি সরকার পক্ষ। আগমিকাল রাজ্যসভায় থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের মত, আগামিকাল রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রশ্ন আছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর সেখানে থাকা উচিত।

গত বুধবার সংসদের অধিবেশন শুরু হতেই বিরোধীরা নোট বাতিল নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর হাজির থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। তখন থেকেই বিরোধীরা একজোট হয়ে দাবি তুলতে থাকে, প্রধানমন্ত্রী সংসদে না এলে আলোচনাও হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi Parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE