মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আক্রমণে জল ঢেলে দিয়ে প্রথম রাউন্ডে উল্লসিত ছিল শাসক দল। কিন্তু খেলায় সমতা ফেরাতে কাল যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছেন রাহুল গাঁধী, তাতে বিজেপি-ই এখন অস্বস্তিতে পড়েছে!
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ-আগমনকে ঘিরে বেশ কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। পরিস্থিতি সামলাতে কাল রাহুল বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতি কোন পথে চালাতে হবে তার পাঠ নিতে মনমোহন সিংহকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এক ঘণ্টা ধরে মনমোহনের পাঠশালায় ক্লাস করেছেন তিনি।’’ টানাপড়েনের তৃতীয় দিনে আজ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দাবি করেন, ‘‘মোদীজি নিজেই এক জন বড় মাপের অর্থনীতিবিদ। তিনি দেশের অর্থনীতিকে ইতিবাচক দিকে চালিত করেছেন। যা আগের সরকারের রথী-মহারথীরাও করতে পারেননি!’’ মনমোহনের আমলে হওয়া কয়লা খনির বণ্টন ঘিরে দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে স্মৃতি বলেন, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কয়লা খনি নিলাম করে লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে। যে টাকা দেশের পরিকাঠামোর উন্নয়নে লাগানো হচ্ছে। এ থেকেই স্পষ্ট, মোদী কত বড় অর্থনীতিবিদ।
মূল ঘটনা গত পরশুর। সরকারের বর্ষপূর্তির পর দিন, অর্থাৎ বুধবার, অর্থনীতির প্রশ্নে মোদী সরকারের ঝাঁঝালো সমালোচনা করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পরেই সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গিয়ে মোদীর সঙ্গে দেখা করেন মনমোহন। তৎক্ষণাৎ সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। সেই ছবি দেখেই জল্পনা শুরু হয়ে যায়, স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে তাঁকে সম্প্রতি নোটিস ধরিয়েছে সিবিআই। তাই জন্যই কি মনমোহন মোদীর সঙ্গে আপস করা শুরু করেছেন?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করেন, কৌশলে ওই ছবি আপলোড করে দিয়ে মনমোহনের সে দিনকার যাবতীয় আক্রমণে জল ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। এই ক্ষত মেরামতে সে দিন রাত থেকে সচেষ্ট হন মনমোহন নিজেই। বিবৃতি জারি করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
কিন্তু তাতেও বিভ্রান্তি বজায় থাকায় গতকাল মাঠে নামেন রাহুল। রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘‘মনমোহনজি বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতির অধোগতি হচ্ছে। তাই তাঁর মতো বিচক্ষণ অর্থনীতিবিদের কাছ থেকে অর্থনীতির পাঠ নিতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।’’
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও আজ বলেন, ‘‘মূল কৌতুহল ছিল মনমোহন সিংহ নিজে থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কি না, তাই নিয়ে। কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, মোদীই তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। এ বিষয়ে সরকারের কিছু বলার থাকলে, তারা জানাক।’’
কংগ্রেসের এই শ্লেষ স্বাভাবিক ভাবেই শাসক দলের হজম হয়নি। তাই আজ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ঘরোয়া ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। সরকারি সূত্রের দাবি, সে দিন আমন্ত্রিতের তালিকায় ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়াও। একমাত্র মনমোহনকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এই জল্পনার কোনও ভিত্তি নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy