প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
তাঁর জমানায় দেশের ‘শুভ মুহূর্তে’ কিছু ব্যক্তি ‘কালো টিকা’ লাগানোর দায়িত্ব নিয়েছে বলে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নাম না করে রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করলেন।
আদানি-কাণ্ড নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি তদন্তের দাবির মুখে বিজেপি পাল্টা চালে রাহুল গান্ধী বিদেশে গিয়ে ভারতের দুর্নাম করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে। সেই রণকৌশলেই শনিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০২৩-এ প্রথম আড়াই মাস বা ৭৫ দিনে নিজের সরকারের কাজের খতিয়ান দিয়ে বলেছেন, ভারতের সাফল্য নিয়ে গোটা বিশ্বে কথা হচ্ছে। এই আশাবাদের মধ্যেও নিরাশা, হতাশা, ভারতকে খাটো করে দেখানোর কথা, মনোবল ভেঙে দেওয়ার কথাও হচ্ছে। মোদী বলেন, ‘‘আমরা তো জানি, শুভ কাজ থাকলে আমাদের কালো টিকা লাগানোর পরম্পরা রয়েছে। কিছু ব্যক্তি সেই কালো টিকা লাগানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। যাতে নজর না লাগে।”
প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগের মধ্যে নতুন করে মোদী-আদানি সম্পর্ক ও আদানি গোষ্ঠীকে সরকারের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেপিসি তদন্তের দাবিতে সংসদে অচলাবস্থা চলছে। রাহুল গান্ধী অভিযোগ তুলেছেন, দেশের গণতন্ত্রে আঘাত আসছে। নির্বাচন কমিশনের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকেও করায়ত্ত করার চেষ্টা করছে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার।
এ নিয়ে প্রথম থেকেই নীরব প্রধানমন্ত্রী আজও আদানি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি ও তাঁর দল রাহুলের মন্তব্যকে ‘বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম’ বলে আখ্যা দিলেও মোদী আজ রাহুলের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কোভিডের মধ্যেও একাধিক রাজ্যে ভোট হয়েছে। সেখানেও ভোটে অংশগ্রহণ বেড়েছে। অতিমারির ধাক্কা সত্ত্বেও অর্থনীতি মজবুত রয়েছে। ব্যাঙ্ক মজবুত রয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের শক্তিই প্রমাণ হয়। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়া নিয়ে কার্যত রাহুলের অভিযোগের জবাবে মোদী বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে কারও অসুবিধা হচ্ছে। তাই সমালোচনা হচ্ছে।’’ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডিকে কাজে লাগানোর অভিযোগের জবাবে মোদী জানান, আগে এত এত লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নামত। এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হচ্ছে। তাতে আতঙ্কিত দুর্নীতিগ্রস্তরা এককাট্টা হয়ে রাস্তায় নামছেন।
সাধারণত প্রধানমন্ত্রী যে কোনও অনুষ্ঠানে গত আট-নয় বছরের সাফল্য বা কাজের খতিয়ান শুনিয়ে থাকেন। আজ প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরের প্রথম ৭৫ দিনের কাজের খতিয়ান শুনিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এই ৭৫ দিনেই ‘পরিবেশবন্ধু’বাজেট পেশ, কর্নাটকে নতুন বন্দর, মুম্বইয়ে মেট্রোর নতুন ধাপ, দীর্ঘ নদী ক্রুজ়, বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেসওয়ে, দিল্লি-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ চালু, ২০ শতাংশ ইথানল-যুক্ত পেট্রল চালু, এশিয়ার বৃহত্তম হেলিকপ্টার কারখানার শিলান্যাস, এয়ারইন্ডিয়ার বিরাট বরাত, কুনো অভয়ারণ্যে ১২টি চিতার আগমন, দু’টি অস্কার জয়, ২৮টি জি-২০ সম্মেলন, ভারত-বাংলাদেশ পাইপলাইন চালু হয়েছে।
কংগ্রেসের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী বলেননি, এই ৭৫ দিনেই তাঁর বন্ধু আদানি গোষ্ঠীর প্রতারণার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসায় সাধারণ মানুষের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। মোদী এ বিষয়ে মুখ না খুললেও কেন্দ্রীয়স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার রাতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আদানি-কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই কমিটি তৈরি করেছে। সেবি-ও তদন্ত করছে। কেউ ভুল করে থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। সুপ্রিম কোর্টের কমিটিকে ঢাল করে তিনি বলেছেন, বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়ায় সকলের আস্থা থাকা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy