Advertisement
E-Paper

জমি মিললেও নয়া ঠিকানায় টালবাহানা

বহু বছর ধরে পড়ে থাকা ফাঁকা জমিতে গজিয়ে ওঠা ঘাস দুব্বো এ বার ছাঁটতেই হচ্ছে! খাস লুটিয়েন দিল্লির বুকে সরকারি বাংলোতে রমরমিয়ে চলা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিসগুলিতে তালা লাগানোর সময়ও আসন্ন।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩২
দিল্লিতে লুটিয়েনের তৈরি একটি বাংলো।

দিল্লিতে লুটিয়েনের তৈরি একটি বাংলো।

বহু বছর ধরে পড়ে থাকা ফাঁকা জমিতে গজিয়ে ওঠা ঘাস দুব্বো এ বার ছাঁটতেই হচ্ছে! খাস লুটিয়েন দিল্লির বুকে সরকারি বাংলোতে রমরমিয়ে চলা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিসগুলিতে তালা লাগানোর সময়ও আসন্ন।

সরকারি সূত্রের খবর, কিছু দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সব রাজনৈতিক দলের কাছে একটি নোটিস পাঠাতে চলেছে। তাতে বলা হবে, ২০১৭-র প্রথমার্ধের মধ্যে খালি করতে হবে লুটিয়েন এলাকা। আট বছর আগে থেকেই নগরোন্নয়ন মন্ত্রক বিপুল ভর্তুকিতে যে ১০টি রাজনৈতিক দলকে (কংগ্রেস বিজেপি তৃণমূল-সহ) জমি দিয়েছে, তাতে অবিলম্বে অফিস তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। যদি এক বছরের মধ্যে সেই ভবন তৈরি না হয়, তা হলে জমি ফিরিয়ে নেওয়া হবে— এমন কথাও থাকবে ওই নোটিসে। ঘরোয়া ভাবে রাজনৈতিক দলগুলিকে বিষয়টি ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শাসক দল বিজেপি-কেও জানানো হয়েছে, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে তাদের জন্য যে জমি ২০১০ সালে দেওয়া হয়েছে, সেটি ফেলে না রেখে অফিস গড়ার কাজ শুরু করে দিতে। বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে অশোক রোড নয়, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গই হতে চলেছে তাদের দলীয় অফিসের ঠিকানা। বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহ জানিয়েছেন, ‘‘নতুন ভবনটিতে থাকবে আধুনিক প্রযুক্তি। যথেষ্ট সবুজ জমি ছাড়া হবে, সোলার প্যানেলও বসানো হবে।’’ বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘অমিত শাহ দলের দফতরে বড় লাইব্রেরি ও গবেষণার ব্যবস্থা রাখতে চাইছেন, অশোক রোডের অফিসের মাপে সে সব আঁটছে না। ফলে আমাদের বড় আধুনিক অফিসের দরকার ছিলই।’’

‘দরকার’ টা বুঝতে অনেক বছর কাটিয়ে দিল বিজেপি! তবে এত বছরে যে বোধোদয় হয়নি তা এখন হওয়ার কারণ, নরেন্দ্র মোদীর কড়া তাগাদা। সরকারি বাংলোগুলি খালি হলে তা প্রবীণ সাংসদদের বাসস্থানের কাজে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের থেকেও প্রবল চাপ রয়েছে। লুটিয়েন দিল্লিতে বড় রাজনৈতিক দলের দফতরগুলি নিরাপত্তার জন্য বড় সমস্যা। সব সময়েই সেখানে সরকারের শীর্ষ নেতা মন্ত্রীদের যাতায়াত লেগেই থাকে। ফলে মাঝেমধ্যেই রাস্তা বন্ধ করে দিতে হয়। ওই চত্বরেই সংসদ, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় সমস্ত মন্ত্রক ছড়িয়ে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারি অফিস আর দলের দফতরের সহাবস্থানে নাকাল হতে হয় পুলিশ ও আম জনতাকে। তব এটাও ঘটনা যে লুটিয়েন দিল্লির মোহ এবং মর্যাদা সহজে ছাড়তে চায় না দলগুলি। আর তাই অন্যদের উপর চাপ বাড়াতে হলে ‘আপনি আচরি ধর্ম’ যে অত্যন্ত জরুরি, মোদী তা জানেন। সে জন্যই বিজেপির দফতরের নির্মাণ দ্রুত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ সব বিষয়ে অনেক এগিয়ে লালুপ্রসাদ। দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে জমি পেয়েই আরজেডির তিনতলা দফতর বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। নাম দিয়েছেন, রাবড়ী ভবন!

লুটিয়েন দিল্লির সরকারি বাংলোগুলি রাজনৈতিক দখলমুক্ত করার সূত্রপাত হয় দশ বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশিকার পরে। ২০০৬ সালে ইউপিএ সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ৩ বছরের মধ্যে সব বড় রাজনৈতিক দলকে লুটিয়েন দিল্লির বাইরে সস্তায় জমি দেওয়া হবে। দলগুলির সাংসদ সংখ্যা অনুযায়ী জমিরও আয়তনও স্থির করা হয়েছিল। জায়গাটিও এমন ভাবে বাছা হয় যাতে তা মধ্য দিল্লির থেকে বেশি দূরে না হয়। বিজেপি ও কংগ্রেস সহ বেশিরভাগ দলকেই জমি দেওয়া হয় দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের জমির শিলান্যাস করেন সনিয়া গাঁধী। কথা ছিল ২০১৩ –র মধ্যে নতুন ভবন তৈরি করে ২৪ আকবর রোড থেকে উঠে যাবে কংগ্রেস। কিন্তু শিলান্যাসই সার, কাজ আর এগোয়নি। ২৪ আকবর রোডের বিলাসবহুল অফিস ছাড়তে চায়নি সনিয়ার দল।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে দু’টি কাজ করে মোদী সরকার। এক, কংগ্রেসকে নোটিস পাঠায় দ্রুত নতুন জমিতে ভবনের কাজ শেষ করতে। দুই, নতুন মন্ত্রিসভা বিজেপি-র জন্য বাড়তি দু’একর জমি বরাদ্দ করে। সে সময়ে কংগ্রেসের মোতিলাল ভোরা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে জানান, আকবর রোড থেকে নতুন জমিতে যেতে তাঁদের আরও তিন বছর সময় লাগবে। সেই সময় যেন তাঁদের দেওয়া হয়। এখন নগরোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে বলা হচ্ছে, সেই মেয়াদও আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা। কংগ্রেসের নতুন পার্টি অফিসের প্রস্তাবিত নাম, ইন্দিরা গাঁধী ভবন। মজার ব্যাপার হল, ভবন এখনও তৈরি হয়নি কিন্তু সঙ্ঘের প্রেরণা দীনদয়ালের নামাঙ্কিত রাস্তায় তাদের ঠিকানা না রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে! তাই সদর দরজাটিকে অবজ্ঞা করে খিড়কির দিকের রাস্তাটিকেই(রোজ অ্যাভেনিউ) নতুন ঠিকানা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। তবে সেখানে দ্রুত উঠে যেতে মোদী সরকারের চাপকে আজও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না দল। কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের মন্তব্য, ‘‘চল্লিশ বছরের পুরনো পার্টি অফিস তো এক কথায় তুলে নিয়ে যাওয়া যায় না। আমরা চিঠি লিখে নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে জানিয়েছিলাম যে সময় লাগবে। এ বার কাজ শুরু হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং থেকে হাইটেক টেলিকনফারেন্সের ব্যবস্থা, প্রেক্ষাগৃহ, লাইব্রেরি সবই থাকবে।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই রোজ অ্যাভিনিউতেই সিপিএমকে ২০০৮ সালে দু’একর জমি দিয়েছিল তৎকালীন ইউপিএ সরকার। সেই জমিও শিলান্যাস করার পর পড়ে রয়েছে। দলের সাংসদ মহম্মদ সেলিমের ব্যাখ্যা, “জমিটা দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণ ওখানে জবরদখল ছিল। বছর দু’য়েক আগে সেটা সরানো সম্ভব হয়েছে। গত বছর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। তবে মোট দু’টি প্লটের একটিতে এখনও জবরদখল রয়েছে। সেটা সরানোর চেষ্টা চলছে।’’

ওই এলাকায় তৃণমূলকেও ২০০৯ সালে একটি জমি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই জমিতে আইনগত সমস্যা থাকায় তৃণমূল নিতে রাজি হয়নি। পরে সেটি নিয়ে নেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের সময়ে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু নতুন জমির প্রস্তাব দিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, নগরোন্নয়ন মন্ত্রক দলকে জানিয়েছে, তাদের জন্য তিনটি জমি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে যেন একটিকে বেছে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ, বাড়ি তৈরি করতে হবে এক বছরের মধ্যে। তবে মুকুল রায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘কোন তিনটি জমি আমাদের দেখতে বলা হচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট করেনি নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। সেটা জানালেই বাছাই করা হবে।’’

Lutyens' Delhi political party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy