Advertisement
E-Paper

রাজনীতিতেই ভেসে রইল নেতাজি-আবেগ

আজ একশো। এর পরে প্রতি মাসে ২৫টি করে। দফায় দফায় গোপন ফাইল প্রকাশের পিছনে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার যে কৌশল, তারই সাক্ষী হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১১৯তম জন্মবার্ষিকী।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১০
নথি প্রকাশের আগে নেতাজিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য মোদীর। ছবি: পিটিআই।

নথি প্রকাশের আগে নেতাজিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য মোদীর। ছবি: পিটিআই।

আজ একশো। এর পরে প্রতি মাসে ২৫টি করে। দফায় দফায় গোপন ফাইল প্রকাশের পিছনে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার যে কৌশল, তারই সাক্ষী হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১১৯তম জন্মবার্ষিকী।

শনিবার সাত সকালেই নেতাজির জন্মদিনকে ‘দেশের জন্য এক বিশেষ দিন’ হিসেবে তুলে ধরে টুইটারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লেখেন, ‘আজ থেকেই শুরু হচ্ছে নেতাজির গোপন ফাইল প্রকাশ্যে আনার কাজ’। এর কয়েক ঘণ্টা পরে জাতীয় লেখ্যাগারে নেতাজি সংক্রান্ত ১০০টি ফাইল প্রকাশ করেন তিনি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, এখন থেকে প্রতি মাসে ২৫টি করে ফাইল প্রকাশ্যে আনা হবে। আর তার পর থেকেই শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক চাপানউতোর! উত্তরবঙ্গ সফররত মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করলেন, ‘‘এই একশোটি ফাইল প্রকাশ করে কিছুই হবে না। অনেক তথ্যই আড়ালে থেকে যাচ্ছে।’’

রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য, বিহারে ভোট বিপর্যয় এবং সহিষ্ণুতা প্রশ্নে কোণঠাসা মোদী নেতাজি আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছেন সনিয়া গাঁধীর দলকে চাপে ফেলার জন্য। আবার মমতাও পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নেতাজি আবেগের পালে তৃণমূলী বাতাস লাগাতে সক্রিয়। নেতাজি-প্রশ্নে তিনি যে মোদীর থেকে বেশি সক্রিয় ও উদ্যোগী, তা গত কয়েক মাস ধরেই তুলে ধরতে চেয়েছেন মমতা। এ দিনের পরে নেতাজিকে নিয়ে মোদী-মমতার সেই দড়ি টানাটানি আরও একবার সামনে এল।

গত বছরই মোদী সরকারকে চাপে ফেলে আচমকা রাজ্য সরকারের কাছে থাকা ৬৪টি ফাইল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন মমতা। বাধ্য হয়ে মোদী সরকারকেও ঘোষণা করতে হয়, তারাও নেতাজি-সম্পর্কিত গোপন ফাইল প্রকাশ্যে আনবে। নেতাজি ফাইল প্রকাশ করা নিয়ে ‘অ্যাডভান্টেজ’ পেয়ে যাওয়া মমতাকে সহজে জমি ছাড়তে চাননি মোদী। গত নভেম্বরেই স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাশাপাশি একাধিক বার নেতাজি পরিবারের এমন অংশের সঙ্গে বারবার দেখা করেছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি মারা যাননি।

গত সপ্তাহে কলকাতায় তাইহোকু প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেছিলেন, ১৯৪৫ সালের ওই বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছিল বলে তিনি মানেন না। এ নিয়ে একটি কমিটিও গড়ে ফেলেন তিনি। আর আজ মোদী নেতাজি-নথি প্রকাশ করার পরে মমতা জানান, নেতাজি রাশিয়াতেও ছিলেন। রুশ সরকার সেই সব ফাইল প্রকাশ করলে তবেই অনেক তথ্য সামনে আসবে। সেই সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘গাঁধীজিকে জাতির জনক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। নেতাজিও জাতির পিতা।’’ মোদী অবশ্য আজ আর নেতাজিকে নিয়ে নতুন কিছু ঘোষণা করেননি! তবে অনেকেই বলছেন, হাতে থাকা ৬৪টি ফাইলে নেতাজির অন্তর্ধান, আইএনএ-সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য কিছু না থাকলেও তা নিয়ে প্রচার করতে ছাড়েনি তৃণমূল। এ বারে বিজেপিও নেতাজি-ফাইল সামনে এনে সেই কাজটিই করবে।

নেতাজিকে নিয়ে এই দড়ি টানাটানিতে ক্ষুব্ধ অনেকেই। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, নেতাজিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। নেতাজি জীবিত— বাঙালি তথা দেশবাসীর এই প্রিয় বিশ্বাসকে হাওয়া দেওয়া এবং তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের একাংশের নেতাজি-বিরোধী ভূমিকাকে ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরে কংগ্রেসকে চাপে ফেলা— বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কৌশল এটাই। আর এই কারণেই ফরওয়ার্ড ব্লক-সহ বিভিন্ন পক্ষের দাবি সত্ত্বেও এক ধাক্কায় সমস্ত ফাইল প্রকাশ্যে আনার রাস্তায় হাঁটছে না মোদী সরকার। সামনেই অসম, পশ্চিমবঙ্গ কেরল এবং তামিলনাড়ুর নির্বাচন। এমন একটি সময়ে প্রত্যেক মাসে ২৫টি করে ফাইল প্রকাশ্যে আনার বিষয়টি যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ বলে মনে করা হচ্ছে।

মোদী-মমতা এই দ্বৈরথকে কটাক্ষ করেছেন অনেকে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যেমন বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে যেন কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা চলছে! ওঁরা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নিন না!’’ প্রায় একই সুরে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও বলেন, ‘‘এর আগে মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি সংক্রান্ত কিছু ফাইল প্রকাশ করে হাততালি কুড়নোর চেষ্টা করেছিলেন। এ বার মোদীও সেই চেষ্টাই করলেন!’’

কটাক্ষের পাশাপাশি আছে ক্ষোভও। প্রবীণ ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষ যেমন সরাসরি আক্রমণ করেছেন মোদীকে। তাঁর কথায়, ‘‘নেতাজিকে নিয়ে রহস্য গড়ে তোলাটা একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আর সেই ষড়যন্ত্র চাপা দিতেই নেতাজির জন্মদিনকে ব্যবহার করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন মোদী।’’ নেতাজি পরিবারের সদস্য তথা তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুও মনে করেন, ‘‘নেতাজির জন্মদিনে তাঁর জীবন থেকে সম্প্রীতি এবং ঐক্যের শিক্ষা নিতে পারতাম আমরা। কিন্তু মোদী সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য নেহরুকে হেয় করা।’’ এই সব ফাইল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে অস্বস্তিতে ছিল কংগ্রেস। তাদের আশঙ্কা ছিল, ফাইল প্রকাশ্যে এলে সমস্যা হতেও পারে। এ দিন সেই উদ্বেগ কাটায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে তারা।

দিল্লিতে উদ্বোধন নেতাজি ভবনের

সিপিএম বা সিপিআই-এর দিল্লিতে দলীয় অফিস থাকলেও এত দিন ফরওয়ার্ড ব্লকের কোনও অফিস ছিল না। তেমনই নেতাজির নামাঙ্কিত কোনও ভবনও ছিল না রাজধানীতে। আজ সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে এত দিনের অভাবটি পূরণ হল। করোলবাগে সদ্যনির্মিত ভবনটির উদ্বোধন করলেন ফব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, সিপিআই-এর ডি রাজা, আরএসপি-র অবনী রায়ের মত বাম নেতারা সমাজবাদী বামশক্তিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সুভাষচন্দ্রের ভূমিকাকে স্মরণ করেন। ফব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস জানান, ‘‘মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ই চার বাম দলের নেতারা তাঁকে চিঠি দিয়ে ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবস ঘোষণা করার দাবি জানান। কিন্তু তা মানা হয়নি।’’ সীতারামের কথায়, ‘‘দিল্লিতে নেতাজি ভবন যে হতে পারে সেটাই কখনও ভাবিনি। ফব-কে ধন্যবাদ।’’

national news netaji files
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy