Advertisement
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্কুল আছে, ছাত্র আছে, উধাও শিক্ষক

সপ্তাহের সাতটি বারের নাম, রামধনুর রঙ কিংবা দেশের নাম বলা তো দূরের কথা মা-বাবার নামের বানানও ঠিক মতো বলতে পারল না দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা। এমনকী স্বয়ং প্রধান শিক্ষকও জানেন না অসমের শিক্ষামন্ত্রীর নাম।

শিক্ষক আসেননি এখনও। লাফাশাইলে তাই ছাত্রছাত্রীরা মেতেছে হুল্লোড়ে। ছবি: শীর্ষেন্দু শী।

শিক্ষক আসেননি এখনও। লাফাশাইলে তাই ছাত্রছাত্রীরা মেতেছে হুল্লোড়ে। ছবি: শীর্ষেন্দু শী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০২:৪৮
Share: Save:

সপ্তাহের সাতটি বারের নাম, রামধনুর রঙ কিংবা দেশের নাম বলা তো দূরের কথা মা-বাবার নামের বানানও ঠিক মতো বলতে পারল না দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা। এমনকী স্বয়ং প্রধান শিক্ষকও জানেন না অসমের শিক্ষামন্ত্রীর নাম।

করিমগঞ্জের ১৩৪৬ নম্বর নিজ লাফাশাইল প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ অনেক দিনের। অভিযোগের তালিকা এই রকম: শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না। আসেন তো আবার সময়ে আসেন না। পড়াশোনাও ঠিক মতো করান না। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে গিয়ে খেলাধুলোয় সময় কাটিয়েই বাড়ি ফিরে আসে। ইত্যাদি নানা অভিযোগ নিয়ে স্কুলের প্রধানশিক্ষক থেকে ব্লক অফিস, জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর, এমনকী জেলাশাসকের অফিস পর্যন্ত দৌড়েছেন তাঁরা। কিন্তু কাকস্যপরিবেদনা। কোনও হেলদোল নেই কোনও মহলেরই। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়েই স্থানীয় অভিভাবকরা স্কুলের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে জেলা সদর থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যান স্থানীয় সাংবাদিকদের। অবশ্যই সাংবাদিকদের যাওয়ার খবর গোপন রাখা হয়।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ন’টায় স্কুল শুরু হওয়ার কথা। তার মিনিট কুড়ি আগেই সাংবাদিকরা পৌঁছে যান লাফাশাইলে। ১৯৮৭ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী লাফাশাইল এলাকার শিশুদের শিক্ষার কথা চিন্তা করে এক বিঘা জমি দান করেছিলেন সেখানকারই বর্ষীয়ান বাসিন্দা ইজ্জাদুর রহমান। সেই দানের জমিতেই গড়ে ওঠে ১৩৪৬ নম্বর নিজ লাফাশাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০২। প্রধান শিক্ষক-সহ মোট শিক্ষকের সংখ্যা ৩। সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রছাত্রী স্কুলে হাজির। এ বার অপেক্ষা। অপেক্ষা না বলে বরং বলা ভাল, শুরু শিশুদের খেলাধুলো। খেলা ধুলো চলছেই। কারণ স্কুলে তো কোনও শিক্ষক নেই। স্কুল শুরু হবে কী করে?

ঘড়ির কাঁটা ঘপরতে থাকে। সাড়ে ন’টা, দশটা, সাড়ে দশটা। শিক্ষকদের দেখা নেই। সাড়ে দশটার পর অকুস্থলে হাজির হলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন চৌধুরী। এত দেরিতে স্কুলে আসার কারণ জানতে চাওয়া হলে তাঁর সাফাই, রাস্তায় তাঁর সাইকেলটা নাকি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আর অন্য শিক্ষকরা? উত্তমকুমার নাথ, টেট শিক্ষিকা দেবশ্রী পাল করিমগঞ্জ শহরে থাকেন। তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে আসতে পারেন না। প্রতিদিনই দেরি হয়। কী ভাবে আসেন শহর থেকে? গাড়িতে করেই আসেন। এ তো গেল শিক্ষকদের হাজিরার বিষয়। এরপরের প্রশ্ন, পড়াশোনা কেমন চলছে? প্রধান শিক্ষকের সামনেই সাংবাদিকরা দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রেহানা, রায়না, রেশমি, সাজিদকে জিজ্ঞাসা করেন নানা প্রশ্ন। উত্তর জানে না তারা। মা-বাবার নামের বানান, তাও তারা বলতে পারেননি। অভিভাবকদের বক্তব্য, ‘‘বলবে কী করে? শেখানোই হয় না তো।’’ এ বার প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন চৌধুরীকে অসমের শিক্ষামন্ত্রী, অসমের রাজ্যপালের নাম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারলেন না। ১১টা নাগাদ স্কুলে হাজির হন অপর শিক্ষক উত্তমকুমার নাথ। তাঁর সাফাই, ‘‘অন্য দিন ঠিক সময়ে স্কুলে উপস্থিত হন। আজকেই একটু দেরি (পড়ুন দু’ঘণ্টা দেরি) হয়ে গেল।’’ অসমের শিক্ষামন্ত্রীর নাম তিনিও জানেন না বলে অকপটে স্বীকার করে নিলেন উত্তমবাবু।

অসম সরকারের শিক্ষামন্ত্রী শরত বরকটকি শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের জয়গান গাইলেও বাস্তবিক ছবি লাফাশাইলে এলেই দেখতে পাবেন নমুনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Karimganj school Poor education asam abdul matin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy