নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী। অসমে শাসক বিজেপির জোট শরিক অগপ-র শীর্ষ নেতা প্রফুল্ল মহন্ত সংশোধনী রুখতে ঘাঁটি গেড়েছেন দিল্লিতে। যে কোনও উপায়ে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব আটকানোর জন্য আজ তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন। রাতে যান লালকৃষ্ণ আডবাণীর কাছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই এ দিন মালিগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই বলেন, ‘‘বরাকে পৃথক সরকারি ভাষা থাকা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, গোটা রাজ্যে যেন অসমিয়াকেই সরকারি ভাষা বলে গণ্য করা হয়।’’
কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ই নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার প্রস্তাব আসে। ভোটের দিকে তাকিয়ে তখন কংগ্রেস ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের জেরে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের রাজ্যে আশ্রয় দিতে তৈরি ছিল। অগপ অবশ্য বরাবরই এই নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু বিজেপির হাত ধরে ক্ষমতায় আসার পরে অগপকে বিজেপির তথা কেন্দ্রের নীতি মেনে নিতে হচ্ছে। কিন্তু সুযোগ বুঝে অবস্থান বদলে ফেলেছে কংগ্রেস।
তরুণ গগৈ এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এক দিকে অসম আন্দোলনে নিহতদের স্মৃতিতে শহিদ দিবস করছে। অন্য দিকে তারাই শরণার্থীদের রাজ্যে পাকাপাকি ভাবে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।’’ তাঁর অভিযোগ, যে অসম গণ পরিষদের নেতাদের ডাকে (তখন তাঁরা আসুর নেতা ছিলেন) ৮৫৫ জন শহিদ হয়েছিলেন, সেই নেতারা এখন ক্ষমতার লোভে বিজেপির সামনে নতজানু। রাজ্য বিজেপি বা কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস নেই তাঁদের। গগৈ বলেন, ‘‘সর্বানন্দ সোনোয়াল আইএমডিটি প্রত্যাহার করিয়েছিলেন। তিনিই এখন অসম চুক্তি বিরোধী কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি রাম আর হিমন্তবিশ্ব শর্মা লক্ষ্মণের ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ অসমে রামরাজ্য তৈরি করার পরিকল্পনায় মগ্ন।’’
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্য সরকার নাগরিকপঞ্জি নবীকরণে আদৌ আগ্রহী নয়। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে এনআরসির কাজ ফেলে রাখা হচ্ছে।
এ দিকে, অসম চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত এখন দলের অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে সরাসরি নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। ‘অসম আন্দোলন সংগ্রামী মঞ্চ’ গড়ে তিনি দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না দেন। এমনকী রাজ্য সরকারের আয়োজন করা শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানেও হাজির হননি অসম আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মহন্ত। তাঁর দাবি, অসম চুক্তির এত বছর পরেও তা পুরো রূপায়িত হল না। তার ব্যবস্থা না করে বিজেপি যে ভাবে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে তা অন্যায়। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী পাশ হলে শহিদদের বলিদান ব্যর্থ হবে।
এ দিন প্রফুল্লবাবু রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অসমের পরিস্থিতির বিষয়ে জানান। তিনি জানান, অসম ইতিমধ্যে অনেক বহিরাগত মানুষের বোঝা নিয়েছে। এ বার আইন করে শরণার্থীদের রাজ্যে নাগরিকত্ব দিলে আরও কয়েক লক্ষ মানুষের বোঝা অসমকে নিতে হবে। কিন্তু রাজ্যের সেই ক্ষমতা নেই। আইন পাশ হলে, বাংলাদেশ থেকে আরও শরণার্থীরা নিশ্চিন্তে অসমে ঢুকে পড়বেন। সেই প্রবাহ থামানো যাবে না। আইন সংশোধনে অনুমতি দেওয়ার আগে বিষয়গুলি ভেবে দেখার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন মহন্ত।
অসম গণ পরিষদ আগেই জানিয়েছে, অসম চুক্তি রূপায়ন ও বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব নিয়ে তারা আগের মতোই অনড়। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে তাঁদের মতের অমিল রয়েছে। কিন্তু মহন্তর আন্দোলন ও তাঁর মন্তব্য প্রসঙ্গে দলের সভাপতি দূরত্ব বজায় রেখে জানিয়েছেন, মহন্তর মত ও পথ তাঁর ব্যক্তিগত। তার সঙ্গে দলীয় কর্মসূচির যোগ নেই। মহন্ত শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে না আসায় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই ও সাংসদ কামাখ্যাপ্রসাদ তাসা বলেন, ‘‘মহন্তর ডাকেই এত মানুষ শহিদ হয়েছেন। তাঁর ভিন্ন মত থাকতেই পারে। কিন্তু শহিদ দিবসে না এসে তিনি অন্যায় করেছেন। মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।’’
অসম আন্দোলনে শহিদ ব্যক্তিদের পরিবারগুলিও আইন সংশোধনীর প্রস্তাবে ক্ষিপ্ত। শহিদদের আত্মীয়দের মতে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব আইনসিদ্ধ হলে এত মানুষের প্রাণত্যাগ অর্থহীন হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy