Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বাম-কংগ্রেস জোট ঠেকাতে মরিয়া কারাট

বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের হাওয়া উঠতেই তা ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রকাশ কারাট শিবির। কেরল সহ বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর অনুগামী সিপিএমের কট্টর নেতাদের নিয়ে জোটের পাল্টা ঘুঁটি সাজাচ্ছেন কারাট। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট হবে কি না, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নেতৃত্ব সমস্বরে জোটের পক্ষে সওয়াল করতে চাইছে।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৯
Share: Save:

বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের হাওয়া উঠতেই তা ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রকাশ কারাট শিবির। কেরল সহ বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর অনুগামী সিপিএমের কট্টর নেতাদের নিয়ে জোটের পাল্টা ঘুঁটি সাজাচ্ছেন কারাট।

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট হবে কি না, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নেতৃত্ব সমস্বরে জোটের পক্ষে সওয়াল করতে চাইছে। আর কারাটের নেতৃত্বে কেরল লবি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়ার যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।

পলিটব্যুরো নেতা এস আর পিল্লাইয়ের উপস্থিতিতে কেরলের নেতারা তিরুবন্তপুরমে বৈঠক করে সঙ্কল্প নিয়েছেন, কোনও ভাবেই পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত লাইন থেকে দলকে বিচ্যুত হতে দেওয়া যাবে না। কারাট অনুগামী নেতাদের বক্তব্য, বিশাখাপত্তনমের পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ‘কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম বোঝাপড়া বা নির্বাচনী জোট হবে না।’ এখন সীতারাম ইয়েচুরি যদি সেই রাজনৈতিক লাইন রূপায়ণ করতে না পারেন, তা হলে তাঁর সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। কেরলের একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে এস আর পিল্লাইয়ের এই মতামত প্রকাশিত হওয়ার পর পার্টিতে তুলকালাম শুরু হয়েছে। ইয়েচুরি শিবিরের ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে কৌশলগত সমঝোতার কথাই ভাবা হচ্ছে। তবে প্রকাশ ঘনিষ্ঠ কেরলের নেতাদের পাল্টা যুক্তি, জোট তো নয়ই, বিশাখাপত্তনমে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা না করারই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন দলের নেতৃত্বকে সেই পথেই এগোতে হবে।

সিপিএমের অনেকেই মনে করছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের এই দ্বন্দ্ব শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ বনাম কেরলের নয়। শুধু রাজনৈতিক লাইন বা মতাদর্শের বিরোধও নয়। তার থেকেও অনেক বেশি সীতারাম ইয়েচুরি বনাম প্রকাশ কারাট ও তাঁর অনুগামীদের। বিশাখাপত্তনমের পার্টি কংগ্রেসে কারাটের উত্তরসূরি হিসেবে ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদকের গদিতে বসলেও আসলে দ্বন্দ্ব এতটুকুও মেটেনি। পার্টি কংগ্রেসে এস আর পিল্লাইকে পিছনে ফেলে ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু লড়াই সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। বিশাখাপত্তনমের সেই ভূত আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে দলকে।

সিপিএম সূত্র বলছে, পিল্লাইকে যাঁরা সাধারণ সম্পাদক দেখতে চেয়েছিলেন তাঁরাই এখন ‘অন্তর্ঘাতমূলক রাজনীতি’-র পথ ধরেছেন। প্রকাশের আমলে জাতীয় স্তরে বা বড় কোনও রাজ্যেই দলের ফল ভাল হয়নি। মতাদর্শ আঁকড়ে থাকার নামে জাতীয় স্তরে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে সিপিএম। এখন সীতারামের আমলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের মতো রণকৌশলের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের যদি আসন বাড়ে, তা হলে সেটা ইয়েচুরির সাফল্য হিসেবেই গণ্য হবে। সেটা চায় না কেরল লবি।

ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক হলেও, পাটিগণিতের হিসেবে সিপিএমের ১৬ জনের পলিটব্যুরোতে এখনও প্রকাশেরই পাল্লা ভারি। একই ভাবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতও জোটের বিরুদ্ধে। কাজেই অঙ্কের হিসেবে জোটের পক্ষে সিলমোহর পড়া কঠিন। কাজেই রাজনৈতিক যুক্তিই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের নেতারা বিধানসভার ভোটকে আলাদা করে দেখাতে চাইছেন। তাঁদের বক্তব্য, জাতীয় স্তরে রাজনৈতিক লাইন যেমন আছে থাক। রাজ্যের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে দেওয়া হোক। কিন্তু পাল্টা যুক্তি হল, সিপিএম পার্টিতে কখনওই এই ভাবে জাতীয় ও আঞ্চলিক রণকৌশল আলাদা হয়নি। সেই প্রবণতা একবার দেখা দিলে দলের মধ্যে আঞ্চলিক ঝোঁক বাড়বে।

তবে কেরলের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে জোট হলে কেরলে সিপিএমের কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়তে অসুবিধা হবে। বিশেষত এ বার কেরলে কংগ্রেসকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় বামেরা। যার বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি হল, যে হেতু কংগ্রেসের সঙ্গেই জোট হচ্ছে, তা-ই কেরলের প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসেরও কিছু বলার থাকবে না। দু’পক্ষই এই প্রসঙ্গ ভোটে এড়িয়ে যাবে। রাহুল গাঁধী আগামী মঙ্গলবার কেরলে যাচ্ছেন। তিনি সেখানে গিয়ে কী বলেন, তা দেখতে চাইছেন কারাট শিবিরের নেতারা। কেরলের সিপিএমের যুক্তি, জোট হলে বিজেপি সেখানে সুবিধা নিতে চাইবে। তাঁরা সিপিএমকে কংগ্রেসের ‘বি-টিম’ আখ্যা দেবে। যদিও সিপিএমে জোটপন্থীরা বলছেন, কয়েক দশক ধরেই বিজেপির বৃদ্ধির এই গল্প শোনানো হচ্ছে। বাস্তবে কিছুই হয়নি।

১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পলিটব্যুরো-কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আগে ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় রাজ্য কমিটির বৈঠক বসবে। বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্ররা বারবার বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে দুর্বল করাটা জরুরি। তৃণমূল রাজ্যে সিপিএমের সংগঠনের কোমর ভেঙে দিয়েছে। জেতার মতো সংগঠন থাকলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কথা ভাবতে হত না। ইয়েচুরি নিজে এর সঙ্গে একমত। কিন্তু বাস্তব হল, পশ্চিমবঙ্গের নেতাদেরই পলিটব্যুরো বৈঠকে এসে জোটের পক্ষে সওয়াল করতে হবে। সেখানেই সমস্যা। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের নেতারা এ কে গোপালন ভবনে প্রকাশ কারাটকে দেখলেই চুপ করে যান। তখন আর তাঁদের মুখে কথা সরে না।’’

সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটির বৈঠকে লিখিত প্রস্তাব গৃহীত হলে সূর্যকান্ত মিশ্ররা তা পলিটব্যুরোর সামনে রাখতে পারেন। অতীতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পলিটব্যুরোর বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে আসতে না পারলেও অনেক সময়েই চিঠি লিখে নিজের মতামত জানাতেন। কিন্তু এখন তিনি পলিটব্যুরোয় নেই। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রয়েছেন। সিপিএমের অনেকেই মনে করছেন, যা পরিস্থিতি, তাতে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের ভীত-সন্ত্রস্ত মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জোটের পক্ষে সওয়াল করে কেরল লবির সঙ্গে তাঁদের ঝুঝে নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prakash Karat alliance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE