প্রধানমন্ত্রী নন, আপাতত চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ইজরায়েল সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে প্যালেস্তাইন এবং জর্ডনও থাকছে তাঁর সফর তালিকায়।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে, রাষ্ট্রপতির সফর নিঃসন্দেহে ইতিহাসে ঢুকে পড়তে চলেছে। তার কারণ, দু’দেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের সফর বিনিময় হলেও এটি হতে চলেছে কোনও ভারতীয় রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম ইজরায়েল সফর। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদে ইজরায়েল-বিরোধী একটি প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির সময় নয়াদিল্লি ভোটদান থেকে বিরত থেকে ইজরায়েলের সুবিধা করে দেয়। ভারতের এই পদক্ষেপের পর নয়াদিল্লিকে ধন্যবাদ জানায় জেরুজালেম। সেই সময় থেকেই সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন ওঠে, শীঘ্রই সে দেশে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।
তবে আপাতত মোদীর ইজরায়েল সফরের কোনও সম্ভাবনা নেই। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক মাসে মোদীর ঠাসা সফরসূচি রয়েছে। সামনে আমেরিকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন, তার পর তুরস্কতে জি-২০ ভূক্ত দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলন। এর পর সৌদি আরব এবং ইরান যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের একটি সফর হোক ইজরায়েলে। আর সে কারণেই, প্রধানমন্ত্রী যেতে না পারলেও রাষ্ট্রপতি ভবনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ধর্মীয় মেরুকরণকে ঘিরে যখন গোটা দেশে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তখন আপাতত নিজে ইজরায়েল সফর থেকে বিরত থাকতে চাইছেন মোদী। ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ককে নিচু তারে বেঁধে রাখাটা ভারতের ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। দেশের বিশাল মুসলমান সম্প্রদায়ের (যাদের মধ্যে বেশির ভাগই সুন্নি) কাছে যাতে কোনও ভুল বার্তা না যায় সেটিও দেখতে হচ্ছে মোদীকে। পাশাপাশি, এটা ঘটনা যে শক্তির চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরব দেশগুলি ক্রমশ ভারতের কাছে শক্তির প্রধান উৎস হয়ে উঠছে। লাখো লাখো অনাবাসী ভারতীয়ও এই সব দেশে ছড়িয়ে রয়েছেন যাঁরা বৎসরান্তে মোটা অর্থ পাঠান দেশে। ফলে আরব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটাও জরুরি।
তাদের মতে, এই বিবেচনাগুলি করেই মোদী নিজে ইজরায়েল সফরে যাচ্ছেন না। কিন্তু, তাঁর সরকারের সঙ্গে এমনিতেই সে দেশের সম্পর্ক এতটাই ভাল যে মোদী না গিয়ে রাষ্ট্রপতি গেলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টোল খাবে না বলেই মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। মোদী ক্ষমতায় আসার পর চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি হয়েছে ভারত-ইজরায়েল সম্পর্কে। দু’দেশের মধ্যে সামরিক সমঝোতার ক্ষেত্রটি বিস্তৃত করার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে তো বটেই, পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে দ্বিপাক্ষিক আদান প্রদান বাড়ানো যেতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন উদ্যোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্র, কৃষি, পর্যটন সংস্কৃতির মত বিভিন্ন ক্ষেত্র। গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ইজরায়েল সফর করেছেন। তার আগে সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে মোদী মিলিত হন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নাতানিয়াহুর সঙ্গে। আবার গত বছরই ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রক, ইজরায়েল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি থেকে বারাক-১ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্র কেনে। আমেরিকাকে এই ক্ষেপনাস্ত্রগুলির বরাত দেওয়ার পরেও তা ফিরিয়ে নিয়ে ইজরায়েলের কাছ থেকেই তা কেনে সাউথ ব্লক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার মতে, ‘‘বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির জন্য ইজরায়েল ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস। তা সে কৃষিই হোক কি অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম।’’ পশ্চিম বিশ্ব অনেক সময় প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে টালবাহানা করলেও, ইজরায়েলে সর্বদাই হাত বাড়িয়ে রেখেছে বলেই জানাচ্ছেন তিনি।
তবে মোদী সরকার কিন্তু ইজরায়েলকে সমর্থন করার প্রশ্নে তার ভারসাম্যের কূটনীতি থেকে সরছে না। তাই ইজরায়েলের পাশাপাশি প্যালেস্তাইনেও যাবেন রাষ্ট্রপতি। গোটা অঞ্চলের যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি এই বার্তাই যাচ্ছে যে প্যালেস্তাইনের প্রতি সমর্থন থাকলেও ক্রমশ ইজরায়েলের দিকে বেশি ঝুঁকছে ভারত। বিশেষ করে গত বছর গাজায় ইজরায়েলের যুদ্ধাপরাধী ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে একটি প্রস্তাবে ভোটাভুটি হওয়ার পর। সেই ভোটে ভারত অংশগ্রহণ না-করায় স্পষ্টতই অখুশি প্যালেস্তাইন। অন্য দিকে, ইজরায়েলের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে পরে জানানো হয় যে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নাতানিয়াহু নিজে ফোন করে মোদীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy