বঙ্গে সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আর বেসরকারি ক্ষেত্রে এখন নমুনা পরীক্ষার খরচ হল ১৫০০ টাকা। তবে বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হলে তার জন্য প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা অতিরিক্ত ধার্য করতে পারে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের বাড়ি থেকে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার নিকটবর্তী কেন্দ্র হবে যাতায়াতের খরচ নির্ধারণের মাপকাঠি।
বেসরকারি ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার মূল্য কমানোর প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ দিল্লির পথ ধরবে কি না, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাঁর কথায়, “দিল্লিতে অনেক বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। প্রতি দিন কত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে খরচের বিষয়টি তার সঙ্গে জড়িত।” স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, “কর্নাটক নমুনা পরীক্ষার খরচ কমিয়েছে, উত্তরপ্রদেশও ভাবনাচিন্তা করেছে এ বিষয়ে। আমরাও বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে কথা বলে দেখছি, নমুনা পরীক্ষার খরচ কতটা কমানোর সুযোগ রয়েছে।’’
পিয়ারলেসের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “রিএজেন্ট এবং জিএসটি কমলে নমুনা পরীক্ষার খরচ কমাতে আপত্তি নেই। আমাদের রাজ্যে ১২ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হচ্ছে। সেটি ৫ শতাংশ হলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে বলে আশাবাদী।” সুরক্ষার কর্ণধার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে নমুনা পরীক্ষার দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, নমুনা পরীক্ষার খরচ ১২০১ টাকা করা হল বলে জানিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল স্বাস্থ্য ভবন। বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলি এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে। ঘটনাচক্রে, তার পর
দ্রুত বিজ্ঞপ্তিটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে ২২৫০ টাকার পরিবর্তে নমুনা পরীক্ষার খরচ ১৫০০ টাকা করে রাজ্য। বস্তুত, এ রাজ্যে সাধারণ মানুষের অনেকেই করোনা-উপসর্গ থাকলেও নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না বলে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তার একটি কারণ বেসরকারি ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার চড়া মূল্য হলে, আর একটি কারণ সামাজিক বিড়ম্বনার মুখে পড়ার আশঙ্কা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে জ্বর হলেই পরীক্ষা করানোর জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে যে ধরনের প্রচার করা হয়, করোনার পরীক্ষার প্রচারে সেই আর্জি দেখা যায়নি।
আইসিএমআর মে মাসেই জানিয়েছিল, কেন্দ্রীয় ভাবে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার খরচ নির্দিষ্ট করা হচ্ছে না। কিন্তু রাজ্যগুলি প্রয়োজন মনে করলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতেই পারে। দেশ জুড়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার খরচ কমিয়ে ৪০০ টাকার মধ্যে বেঁধে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ইতিমধ্যেই অজয় আগরওয়াল নামে এক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই পরীক্ষার খরচ ২০০ টাকার বেশি নয়। ল্যাবরেটরির খরচ যোগ করলে তা কোনও মতেই ৪০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। এই মামলায় প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত মঙ্গলবার নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব এবং স্বাস্থ্যসচিবকে। দু’সপ্তাহের মধ্যে এর উত্তর দিতে হবে তাঁদের।