Advertisement
E-Paper

মন্ত্রীর লেখায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বপ্ন দেখছে বাংলাঘাট

কাছাড় জেলার বাংলাঘাটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের দাবি উঠেছিল ১৯৮৯ সালে। সে বছরই এলাকাবাসী ১০ বিঘা জমি দান করে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগকে। কিন্তু সেখানেই শেষ। এখনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ একটুও এগোয়নি।

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:৫৯

কাছাড় জেলার বাংলাঘাটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের দাবি উঠেছিল ১৯৮৯ সালে। সে বছরই এলাকাবাসী ১০ বিঘা জমি দান করে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগকে। কিন্তু সেখানেই শেষ। এখনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ একটুও এগোয়নি।

২৬ বছর পর গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এলাকাবাসীর আবেদনের উপর লিখে দেন— ‘হাসপাতাল তৈরির দাবি বিবেচনা করা যেতে পারে।‘ তাতেই খুশি বাংলাঘাটের মানুষ। দু’দিন ধরে তাঁরা একে অপরকে ফোন করে জানাচ্ছেন, এত বছরে স্বপ্ন এ বার পূরণ হতে চলেছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘দীর্ঘ দিনের সংগ্রাম সফল হল।’ কবে শুরু হবে হাসপাতালের কাজ? স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা জানালেন— মন্ত্রী এ ভাবে কাগজে লিখে দিলেই কি আর হাসপাতাল হয়!

স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবে বাংলাঘাট ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগে। বিশেষ করে, রাতবিরেতে প্রসূতিদের হাসপাতালে পৌঁছনো কষ্টকর, ঝুঁকিবহুলও। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। কাছাকাছি চিকিৎসাকেন্দ্র বলতে ১৬ কিলোমিটার দূরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বড়খলায়। ১৭ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি আলগাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। সে হিসেবে হাইলাকান্দি জেলার আলগাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও যেতে পারেন তাঁরা। কিন্তু সেটির দুরত্ব ৪০ কিলোমিটার। যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, বেহাল রাস্তা ধরে যেতে গিয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাঘাট হাসপাতাল আন্দোলনের নেতা অজিতকুমার পাল বলেন, ‘‘জমি না পেয়ে অনেক সরকারি প্রকল্পে কাজ শুরু হয় না। কাছাড় জেলাতেও এমন উদাহরণ রয়েছে। আমরা জমি দিয়েছি। কিন্তু হাসপাতাল তৈরির মঞ্জুরি মিলছে না।’’ তিনি জানান, ১৯৮৯ সালের ১২ মার্চ ১০ বিঘা টিলাজমি দানপত্র করে স্বাস্থ্য বিভাগকে দেওয়া হয়। সেই জমি ফাঁকাই পড়ে আছে। মাঝেমধ্যেই হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। জমি বেদখলের প্রয়াস ঘিরে এলাকায় বেশ কয়েক বার অশান্তিও হয়েছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ আড়াই দশক ধরে জমিটি আগলে রেখেছেন। সেখানে হাসপাতাল তৈরি করেই ছাড়বেন— এমনই মনোভাব অজিতকুমার পাল, গিয়াসউদ্দিনদের। তাঁদের দাবি, বাংলাঘাটে হাসপাতাল তৈরি হলে চেংকুড়ি, ভজন্তীপুর, তোপখানা, শ্রীকোণা, তারাপুর ও রামনগর পঞ্চায়েতের লোক উপকৃত হবেন।

আন্দোলনের ইতিহাস টেনে তাঁরা জানান, ১৯৮৯ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও জেলাশাসকের কাছে হাসপাতালের দাবিতে স্মারকপত্র দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, জমি দিলে হাসপাতাল গড়ে দেওয়া যেতে পারে। ছোটাছুটি করে তাঁরা জমির বন্দোবস্ত করেন। চাতলা মৌজার ৩৪ নম্বর দাগের জমিটি ছিল চেংকুড়ি চা বাগিচা কর্তৃপক্ষের। সেই জমি লিজ নিয়েছিলেন এলাকার বারীন্দ্রকুমার দাস, নিরইরাম দাস, বিনোদবিহারী দাস ও নলিনীকুমার পাল। সেটি গো-চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সবার কথায় জমিদানে রাজি হন তাঁরা। সেই অনুসারে দানপত্রের মাধ্যমে ১৯৮৯ সালের ১২ মার্চ জমিটি স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

২৬ বছরে দফায় দফায় রাজ্যের শাসক বদলেছে। বদলেছেন অনেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সবার সঙ্গেই দেখা করেছে বাংলাঘাট প্রতিনিধি দল। কিন্তু হবে-হচ্ছে করে বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে। গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নজরুল ইসলাম শিলচরে সফরে এলে তাঁরা দেখা করেন। এ বার অবশ্য কোনও আশ্বাস বা হচ্ছে-হবে নয়। মন্ত্রী আবেদনপত্রের উপর জেলাশাসক ও স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়ে যান। সেখানে যে একটি হাসপাতাল হতে পারে, সে কথাও উল্লেখ করেন।

অজিতবাবু জানান, জেলাশাসকের ব্যস্ততার জন্য এখনও মন্ত্রীর নোটের প্রতিলিপি তাঁকে দেওয়া যায়নি। তবে বিভাগীয় মন্ত্রীর ‘নির্দেশ’ ফোটোকপি করে স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় কর্তাদের দিয়ে আসা হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা সুদীপজ্যোতি দাস জানান, আবেদনের উপর মন্ত্রীর এমন লেখায় হাসপাতাল মঞ্জুর হতে পারে না। এ জন্য মন্ত্রীকে তাঁর সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। প্রকৃতই হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে মন্ত্রীই নির্দেশ দেবেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি ব্লকে একটি করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালন কমিটি রয়েছে। প্রথমে তাঁদের কাছে দাবি পেশ করতে হবে। তাঁরা দাবির যথার্থতা বিচার করে সেটি পাঠাবেন জেলাস্তরে। তখন জমিটি সরেজমিনে দেখা হবে, জমিটি হাসপাতাল নির্মাণের উপযোগী কি না, তা বিশ্লেষণ করা হবে। তার পর রাজ্য পর্যায়ে সুপারিশ পাঠানো হবে।’’ সুদীপবাবুর কথায়, ‘‘শুধু হাসপাতাল তৈরি করে দিলেই বিভাগের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সেখানে কর্মী নিয়োগ করতে হবে, চিকিৎসক বহাল করতে হবে। তাঁদের নিয়মিত বেতনের ব্যবস্থাও করতে হবে। তাই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সে সব নিয়ে কথা হয়, সিদ্ধান্ত হয়। সুদীপবাবুর স্পষ্ট বক্তব্য— নির্ধারিত পথে না এগোলে জমি দিলেও হাসপাতাল মিলবে না। তিনি জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরে কাটিগড়ার লেভারপুতায় একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মঞ্জুরি দেওয়ার কথা ছিল। প্রক্রিয়া মেনে এগোনোয় মন্ত্রী সেখানে হাসপাতাল তৈরির নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন।
এখন জমি দেখা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে সেখানে দু’টি জমি রয়েছে। সমস্ত দিক বিবেচনা করে একটিকে বাছাই করা হবে।

কিন্তু হাল ছাড়ছেন না বাংলাঘাটের মানুষ। দু-এক দিনের মধ্যে তাঁরা দেখা করবেন জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের সঙ্গে। মন্ত্রীর নোটের প্রতিলিপি তুলে দিয়ে দাবি জানাবেন— যে চার জমিদাতা দানপত্রে সই করেছেন, তাঁদের কেউ বেঁচে নেই। অন্তত জমিদাতাদের ছেলেমেয়েরা যেন হাসপাতালটি দেখে যেতে পারেন।

রাস্তা বেহাল, দুর্ভোগ। বেহাল রাস্তায় নাজেহাল হাইলাকান্দি পুর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিকরা। ওই এলাকার নারায়ণপুর-শীতলাবাড়ি সড়ক দিয়ে শহরের হারবার্টগঞ্জ বাজারে যান অনেকেই। ওই রাস্তা দিয়ে নারায়ণপুর ও কাঞ্চনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকেরাও যাতায়াত করেন। বর্তমানে রাস্তাটি অত্যন্ত বেহাল হয়ে পড়েছে। তার জেরে কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

কয়েক দিন আগে বিজেপির প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। দলীয় সূত্রে খবর, প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর জেলাশাসক দ্রুত ওই রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।

Balaghat Primary health center hospital narayanpur sitalbari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy