Advertisement
E-Paper

বাড়তি ভর্তুকির দায় নিতে নারাজ রেল

যাত্রিভাড়ায় ভর্তুকি কমাতে নতুন সমীকরণের পথে রেল।এমনিতেই টিকিটপিছু যাত্রিভাড়ায় ভর্তুকি দিয়ে থাকে রেল। তার মধ্যে আবার রয়েছে বাড়তি ছাড়ের নানা শর্ত। যে তালিকায় রয়েছেন বয়স্ক মানুষ, প্রতিবন্ধী, পড়ুয়া, পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্ত থেকে সাংবাদিকরাও।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০০

যাত্রিভাড়ায় ভর্তুকি কমাতে নতুন সমীকরণের পথে রেল।

এমনিতেই টিকিটপিছু যাত্রিভাড়ায় ভর্তুকি দিয়ে থাকে রেল। তার মধ্যে আবার রয়েছে বাড়তি ছাড়ের নানা শর্ত। যে তালিকায় রয়েছেন বয়স্ক মানুষ, প্রতিবন্ধী, পড়ুয়া, পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্ত থেকে সাংবাদিকরাও। তাঁদের ছাড় কোথাও মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ, কোথাও আবার ১০০। ভর্তুকির এই দু’মুখো চাপ কমাতে এ বার নতুন পথে হাঁটতে চাইছে রেল।

রেলের প্রস্তাব— কারা এই ছাড় পান তাদের একটি তালিকা বানিয়ে দেখা হবে ছাড়প্রাপ্তরা কোন মন্ত্রকের আওতায় আসছেন। যেমন শিক্ষামূলক ভ্রমণে ছাড় হলে শিক্ষা মন্ত্রক, আবার বয়স্ক যাত্রীদের ছাড় হলে সামাজিক ন্যায় মন্ত্রক ওই যাত্রীর বাড়তি ছাড়ের ভাড়া গুনে দেবে রেলকে। চলতি মাসেই এই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে পাঠাতে চলেছে রেল। তাদের হিসেবে এর ফলে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি রেলকে কম দিতে হবে।

সাধারণ ভাবে দূরপাল্লার টিকিটে দূরত্বের উপর নির্ভর করে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে থাকে রেল। কিন্তু তার পরেও বয়স্ক নাগরিক, শিক্ষামূলক ভ্রমণার্থী বা সাংবাদিকদের টিকিটে বাড়তি ছাড় দিয়ে থাকে রেল। যেমন বর্ষীয়ান নাগরিক (মহিলা) বা সাংবাদিকদের টিকিটে মূল ভাড়ার কেবল পঞ্চাশ শতাংশই দিতে হয়। একই ভাবে ক্যান্সার বা হৃদ‌রোগীদের ভাড়ায় যথাক্রমে ১০০ ও ৭৫ শতাংশ ছাড় দেয় মন্ত্রক। তেমনি অর্জুন বা দ্রোণাচার্য পুরস্কার জয়ীদেরও মূল ভাড়ার একশো শতাংশ ছুট দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

টিকিটে এই বিশেষ ভর্তুকির দায় এ বার নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া রেল। তারা চাইছে, পড়ুয়া বা সাংবাদিকদের দেওয়া ৫০ শতাংশ ভর্তুকি বহন করুক যথাক্রমে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। আবার শহিদ সেনার স্ত্রীকে ভাড়ায় যে ৭৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয় তার দায় নিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। একই সূত্র মেনে অর্জুন ও দ্রোণাচার্য পুরস্কার বিজেতাদের ভর্তুকি আসুক ক্রীড়া মন্ত্রকের কাছ থেকে।

যাত্রিভাড়ায় ভর্তুকি দীর্ঘ দিন ধরেই রেলের গলার কাঁটা। ইউপিএ আমলে প্রায় আট বছর ভাড়া না-বাড়ানোর কুফল এখন রেলের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এমন, খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া বাড়াতে হলে দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিটের দাম দেড় থেকে দু’গুণ বেড়ে যাবে। যাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন স্লিপার শ্রেণির যাত্রীরা। রেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে রাজধানী ও শতাব্দীতে পরিবর্তনশীল ভাড়া চালু করেছিল রেল। সাধারণত সচ্ছল যাত্রীরা এই ট্রেনে চড়েন। কিন্তু তাতেই যা হইচই শুরু হয়েছে, এর পরে স্লিপার শ্রেণিতে ভাড়া বাড়ানোর ঝুঁকি কে নেবে!’’

বর্তমানে যাত্রিভাড়ায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি ফি বছর দিতে হয় রেলকে। এই টাকা পণ্য মাসুল থেকে জোগাড় করতে হয় রেলকে। এ জন্য বছরে অন্তত দু’বার পণ্য মাসুল বাড়াতে হয় রেলকে। আর এই জন্য পণ্য পরিবহণের পরিমাণ কমছে। সড়ক পরিবহণের কাছে ক্রমশ মার খাচ্ছে রেল। এই পরিস্থিতিতে সরাসরি যাত্রিভাড়া না বাড়িয়ে টিকিটের এই বাড়তি ভর্তুকির টাকা জোগাড়ে তৎপর হয়েছে রেল। চলতি মাসেই ছাড়প্রাপ্তরা কে কোন মন্ত্রকের আওতায় আসছে, তা বানিয়ে অর্থ মন্ত্রকে প্রস্তাব পাঠাতে চলেছেন সুরেশ প্রভু।

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে সাংসদদের টিকিটে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা কী ভাবে আদায় হবে?

রেলের বক্তব্য, তারা সাংসদদের বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ দেয় বলে যে ধারণা আছে, তা ঠিক নয়। সাংসদের টিকিটের সম্পূর্ণ ভাড়া সংসদীয় মন্ত্রকের কাছ থেকে আদায় করে নেয় রেল। কার্যত সেই সমীকরণই এ বার অন্য মন্ত্রকগুলির জন্য চালু করতে চাইছে রেল।

Indian railway Subsidies Passenger
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy