Advertisement
E-Paper

আরও বেশি পাল্টা জবাব, নির্দেশ বিএসএফকে

সীমান্তে লাগাতার পাক হানার মুখে বিএসএফ-কে আরও বেশি করে প্রতি-আক্রমণের নির্দেশ দিল কেন্দ্র। শুক্রবার রাতে পাক রেঞ্জার্সের গোলায় প্রাণ গিয়েছিল সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের এক শিশু-সহ দুই বাসিন্দার। শনিবারেও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ২৫টি সেনা ছাউনি ও ১৯টি গ্রাম লক্ষ করে গুলি ও মর্টার শেল ছুড়েছে পাক বাহিনী। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৬
পাক সেনার ছোড়া মর্টার দেখছেন গ্রামবাসীরা। রবিবার জম্মুর ত্রেভা গ্রামে। ছবি: পিটিআই

পাক সেনার ছোড়া মর্টার দেখছেন গ্রামবাসীরা। রবিবার জম্মুর ত্রেভা গ্রামে। ছবি: পিটিআই

সীমান্তে লাগাতার পাক হানার মুখে বিএসএফ-কে আরও বেশি করে প্রতি-আক্রমণের নির্দেশ দিল কেন্দ্র।

শুক্রবার রাতে পাক রেঞ্জার্সের গোলায় প্রাণ গিয়েছিল সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের এক শিশু-সহ দুই বাসিন্দার। শনিবারেও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ২৫টি সেনা ছাউনি ও ১৯টি গ্রাম লক্ষ করে গুলি ও মর্টার শেল ছুড়েছে পাক বাহিনী। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও। সীমান্তে কেউ হতাহত না হলেও কুপওয়ারায় দু’টি পৃথক সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে দুই ভারতীয় সেনার। গুলিতে মারা গিয়েছে চার জঙ্গিও।

বিএসএফের ডিজি ডি কে পাঠক দিন কয়েক আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা পাক হামলার ‘মু তোড় জবাব’ দেবেন। বলেছিলেন, মৃদু প্রত্যুত্তর নয়, সেই জবাব হবে সমানে-সমানে কিংবা তার চেয়েও বেশি। আজ ডিজি-র সঙ্গে বৈঠকেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়ে দেন, আক্রমণের পাল্টা আরও বেশি আঘাত ফিরিয়ে দিতে হবে সীমান্তের ও-পারে। বৈঠকের পর ডিজি বলেন, “গত ১৬ অগস্ট থেকে টানা হামলা চলছে। নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পার থেকে যে হামলা হচ্ছে, আমরা তার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় জবাব দিচ্ছি। তবে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই হামলা চালাচ্ছি আমরা।” ডিজি জানান, তাঁরা গুলি চালাচ্ছেন দু’টি নীতি মেনে। প্রথমত, কখনওই পাক বাহিনীকে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, কোনও জনবসতিকে নিশানা করা হচ্ছে না।

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজনাথ। পাশাপাশি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ কলকাতায় বলেছেন, “ভূগোল বদলানো যাবে না। পাকিস্তান যদি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে থাকতে চায়, তা হলে তারা যেন নিজেদের পথ দেখে। কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের সেই ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে সেই কথা জানিয়ে দিয়েছি।” ২৬/১১ হামলা সত্ত্বেও ভারত-পাক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে বৈঠকে বসেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সে সময় ইউপিএ সরকারের যুক্তি ছিল, আলোচনার টেবিলে বসেই সন্ত্রাস বন্ধে চাপ দিতে হবে পাকিস্তানকে। কিন্তু জেটলি আজ সাফ বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদ আর আলোচনা কিছুতেই একসঙ্গে চলতে পারে না।”

উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র। রবিবার জম্মু-কাশ্মীরের কিস্তওয়ার
জেলার বিমলনাগ এলাকায়। ছবি: পিটিআই

বস্তুত, কড়া পাক নীতির ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলেছে মোদী সরকারের তরফে। সম্প্রতি কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে পাক হাই কমিশনারের বৈঠকের জেরে দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করে দিয়েছে দিল্লি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরিফ দু’দেশের সম্পর্কের বরফ গলাতে চাইলেও প্রথম থেকেই তা ভেস্তে দিতে চাইছে সেনা ও আইএসআই। সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে ভারতীয় বাহিনীকে ব্যস্ত রেখে তারা আসলে এ দেশে জঙ্গি ঢোকাতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিকে, মোদী সরকারেরও উভয়-সঙ্কট। এক দিকে নভেম্বরে জম্মু-কাশ্মীরে ভোট, অন্য দিকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন এই অবস্থায় বিজেপি সরকার যে পাকিস্তানকে ছেড়ে কথা বলবে না, দলের নেতাদের কথায় তা আজ বারবারই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা অবশ্য দুষেছেন কেন্দ্রকেই। ভারত-পাক আলোচনা-প্রক্রিয়া একেবারেই ভেঙে পড়েছে বলে আজ শ্রীনগরের এক জনসভায় মন্তব্য করেন তিনি। ওমর বলেন, “দেশবাসীকে ‘আচ্ছে দিনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু প্রতিদিন যে ভাবে সীমান্তে সংঘর্ষ বাড়ছে, তাতে উপত্যকার মানুষ আরও খারাপ দিন দেখছেন।” কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে দু’দেশের মধ্যে বৈঠকই একমাত্র রাস্তা বলে জানিয়েছেন ওমর।

সেনা-সূত্রে খবর, গত কাল রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ জম্মুর আরনিয়া এবং আর এস পুরা সাব-সেক্টরে হামলা শুরু হয়। রাতভর মর্টার ও গুলিবৃষ্টির পর তা থামে আজ সকাল সাড়ে ৭টায়। পাকিস্তান যে ভারতের সীমান্ত-ঘেঁষা গ্রামগুলোকেই নিশানা করছে, তা আঁচ করে ওই সব গ্রাম থেকে বহু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জম্মুর ডিভিশনাল কমিশনার শান্ত মনু জানান, সাত-আটটি গ্রাম থেকে প্রায় ৩০০০ মানুষকে সরিয়ে এনে রাখা হয়েছে সরকারি স্কুল ও আইটিআই-তে। ফলে প্রাণহানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। তবে মারা পড়েছে বেশ কিছু গবাদি পশু।

গত রাতেই কুপওয়ারার কেরন সেক্টরে জঙ্গি গতিবিধির খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছয় সেনার একটি দল। জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে জখম হন রাহুল কুমার নামে এক জওয়ান। আজ সকালে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। কুপওয়ারারই কালারুস এলাকায় জঙ্গিরা ঢুকে পড়েছে খবর পেয়ে সেখানেও তল্লাশি শুরু করে সেনা। লস্কর-ই-তইবার সন্দেহভাজন চার জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করতে বললে গুলি চালায় তারা। তখন সেনার পাল্টা গুলিতে প্রাণ হারায় ওই চার জঙ্গি। গুলিবিদ্ধ হয়ে সেনা হাসপাতালে মারা যান নীরজকুমার সিংহ নামে আর এক জওয়ান।

এ দিন জম্মুর কিস্তওয়ার জেলায় এক বিশাল অস্ত্রভাণ্ডারেরও খোঁজ পেয়েছে সেনা। রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ও সন্ত্রাস-দমন অভিযান শাখার কয়েকটি দল আজ ওই জেলায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের একটি গোপন ঘাঁটি থেকে ৭৩টি হ্যান্ড গ্রেনেড, তিন হাজার রাউন্ডেরও বেশি গুলি, বেশ কিছু পিস্তল, একে ৫৬ ও একেএস-৭৪ইউ রাইফেল উদ্ধার করে। বাহিনী সূত্রে খবর, একেএস-৭৪ইউ রাইফেল এর আগে কখনও পাওয়া যায়নি কাশ্মীরে। অস্ত্রভাণ্ডারের হদিস মেলায় জঙ্গি নাশকতার বড়সড় ছক বানচাল করা গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।

bsf rangers pakistan ceasefire rajnath singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy