Advertisement
E-Paper

সন্ত্রাস নিয়ে কড়া বার্তা পাকিস্তানকে, করমর্দন না, হাত ছুঁলেন রাজনাথ

ভাল করে করমর্দন পর্যন্ত করলেন না। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণমন্ত্রী চৌধুরি নিসার আলির হাতে কোনওমতে হাত ছুঁইয়ে সৌজন্য সারলেন রাজনাথ সিংহ। সকালটাই বুঝিয়ে দিল দিনটা কেমন যাবে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৪

ভাল করে করমর্দন পর্যন্ত করলেন না। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণমন্ত্রী চৌধুরি নিসার আলির হাতে কোনওমতে হাত ছুঁইয়ে সৌজন্য সারলেন রাজনাথ সিংহ। সকালটাই বুঝিয়ে দিল দিনটা কেমন যাবে!

জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির হত্যা আর তার পর কাশ্মীর উপত্যকায় হিংসাকে ঘিরে থমথমে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। চাপানউতোর এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে একটা সময় মনে করা হচ্ছিল ইসলামাবাদে সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকই বয়কট করবে ভারত। নয়াদিল্লির কর্তারা অবশ্য বলেন, সার্কের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বৈঠক বয়কট করা উচিত হবে না। তা ছাড়া, সন্ত্রাসে মদত দেওয়া নিয়ে পাকিস্তানকে তুলোধনা করা যাবে ওই বৈঠকে।

আজ ঠিক সেটাই করেছেন রাজনাথ। পাকিস্তানের নাম না-করেই তিনি বলেন, ‘‘আমরা বার বার দেখছি জঙ্গি হানা চালানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে হুমকি। সন্ত্রাসবাদ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ। পঠানকোট, ঢাকা, কাবুল-সহ নানা শহরে জঙ্গিরা কাপুরুষের মতো হামলা চালিয়েছে।’’ এর পরেই জঙ্গিদের প্রশংসা করা নিয়ে ইসলামাবাদকে ঠুকতে শুরু করেন তিনি। বুরহান ওয়ানিকে ‘শহিদ’ বলেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ওয়ানির সমর্থনে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের অন্যান্য এলাকায় প্রকাশ্যে সভা করেছেন সৈয়দ সালাউদ্দিন, হাফিজ সইদের মতো জঙ্গি নেতারা। রাজনাথের কথায়, ‘‘জঙ্গিরা কোনও দিনই শহিদ হতে পারে না। ভাল জঙ্গি, খারাপ জঙ্গির কথা বলে বিষয়টি গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন কেবল জঙ্গি নয়, যে সব রাষ্ট্র তাদের সাহায্য করে তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ভারত যে কড়া সুরে তাদের আক্রমণ করবে, সেটা আগেভাগেই বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তান। পাল্টা প্রস্তুতি ছিল তাদেরও। এক দিকে প্রারম্ভিক বক্তৃতায় শরিফ বোঝানোর চেষ্টা করেন সন্ত্রাস দমনে তাঁরা কতটা আন্তরিক। অন্য দিকে তার পরেই বলতে উঠে কাশ্মীর প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তোলেন নিসার আলি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কাশ্মীরে নিরীহ মানুষের উপরে যে ভাবে বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে তা সন্ত্রাসেরই সামিল। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দাবির আড়ালে স্বাধীনতার দাবিকে লুকিয়ে রাখা উচিত নয়। সন্ত্রাস আর স্বাধীনতার লড়াইয়ে পার্থক্য আছে।’’

তবে পরেই অবশ্য সুর কিছুটা নরম করে নিসার বলেন, ‘‘পাকিস্তান সব বিষয়েই সার্কের অন্য সদস্য দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায়। ভারতের সঙ্গেও আমাদের আলোচনার পথ বন্ধ হয়নি। এটা কেবল একে অপরের দিকে আঙুল তোলার মঞ্চ নয়।’’

কিন্তু ঘটনাচক্রে পরিস্থিতি গরম হয়ে ওঠে এর পরেই। শরিফ এবং নিসারের বক্তৃতার পরেই বৈঠকের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় পাক সরকারি চ্যানেল। অন্য কোনও সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকারও ছিল না। ফলে রটে যায়, পাকিস্তান রাজনাথের বক্তব্য ব্ল্যাকআউট করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলে দেন, ‘‘এটাই পাকিস্তানি গণতন্ত্রের মডেল।’’ পরে অবশ্য বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, এই ধরনের বৈঠকে আয়োজক দেশের প্রতিনিধিরা প্রথমে বক্তৃতা দেন। তার পরে আর কিছু সম্প্রচার করার রীতি নেই। কারণ, তাতে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ পাওয়া যায়।

তবে ‘খোলামেলা’ রাজনাথ কী বলেছেন, তা দেশের মানুষকে জানিয়ে দিতে তাঁর পুরো বক্তৃতাটাই তড়িঘড়ি প্রকাশ করে দিয়েছে মোদী সরকার। যেখানে সন্ত্রাস প্রশ্নে বাংলাদেশ, আফগানিস্তানকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পঠানকোটের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ঢাকা ও কাবুলের জঙ্গি হানার ঘটনা।

ফলে দিনের শুরুটা যত তিক্ত ছিল, শেষটাও তাই। বৈঠক শেষে মধ্যাহ্নভোজে পর্যন্ত যোগ দেননি রাজনাথ। পাকিস্তানে পাত না-পেড়ে সটান দেশে ফেরার উড়ান ধরেন। ফিরেই দীর্ঘ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এ দিন পাক সফর যে ভাবে সামলেছেন রাজনাথ, তাতে দিল্লি মোটের উপর খুশি। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ইসলামাবাদকে একটা কড়া বার্তা দেওয়ার দরকার ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেটা ভালমতোই দিয়ে এসেছেন।’’

terrorism Rajnath Singh সৈয়দ সালাউদ্দিন Syed Salahudeen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy