Advertisement
০৪ মে ২০২৪
ias officer

IAS: মায়ের সঙ্গে গ্রামে ঘুরে ঘুরে চুড়ি বিক্রি করতেন, সেই ছেলেই আজ আইএএস!

রমেশ বলেন, “কোনও গরিব ছেলেকে দেখলে নিজের মুখ মনে পড়ে, কোনও বিধবাকে সাহায্য করতে গেলে মায়ের ক্লান্ত মুখটা ভেসে ওঠে আমার সামনে।”

রমেশ ঘোলাপ ওরফে রামু। ফাইল চিত্র।

রমেশ ঘোলাপ ওরফে রামু। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২২ ১৪:৩৭
Share: Save:

কোনও গরিব ছেলেকে দেখলে নিজের মুখটা ভেসে ওঠে। কোনও হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা চলছে কি না, তার তদন্তে গেলেই বাবার কথা মনে পড়ে যায়। কোনও বিধবা মহিলাকে সাহায্য করতে গেলেই মনে পড়ে যায় মায়ের ক্লান্ত মুখটা। এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন রমেশ ঘোলাপ ওরফে রামু। মহারাষ্ট্রের সোলাপুরের গ্রাম মহাগাঁওয়ের সেই রামুই আজকের আইএএস রমেশ ঘোলাপ।

শৈশবে পোলিওয় আক্রান্ত হওয়ায় রমেশের বাঁ পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। নিম্নবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। বাবা গোরখ ঘোলাপের সাইকেল সারাইয়ের একটি দোকান ছিল। সেখান থেকে যা আয় হত, তা দিয়েই চার জনের দিন গুজরান হত। রমেশের এক দাদাও রয়েছে। স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন রমেশ। শৈশব থেকে তিনি পড়াশোনায় ভাল। ফলে শিক্ষকদের ‘চোখের মণি’ হয়ে উঠেছিলেন।

সাল ২০০৫। রমেশ তখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য যখন তাঁর স্বপ্ন দেখা শুরু, সেই সময়েই এল বড় ধাক্কা। রমেশের বাবা মারা গেলেন। তখন এমন অবস্থা ছিল যে, বাবার সৎকার করবেন, সেই টাকাও ছিল না রমেশদের কাছে। প্রতিবেশীরাই টাকা জোগাড় করে দেন। সেই টাকা দিয়েই বাবার সৎকার করেন রমেশরা।

বাবার মৃত্যুর পর সাইকেলের দোকানও তেমন আর চলছিল না। ফলে বন্ধ করে দিতে হয়। সংসারে উপার্জনের ভার এসে পড়ে তাঁর রমেশের মায়ের হাতে। আত্মীয়দের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে চুড়ির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। মায়ের সঙ্গে এ গ্রামে ও গ্রামে ঘুরে ঘুরে চুড়ি বিক্রি করা শুরু করেন রমেশ। এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কিন্তু নিজের পড়াশোনার হাল ছাড়েননি তিনি। দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায়, রমেশ ৮৮ শতাংশ নিয়ে পাশ করেছেন।

দ্বাদশ পাশ করার পর শিক্ষকতার পেশাকেই লক্ষ্য করে এগোতে থাকেন। এর জন্য ডিএড করেন তিনি। স্থির করেন, শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে সংসার চালাবেন। মাকে সাহায্য করবেন। পাশাপাশি একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে স্নাতকও করছিলেন। ২০০৯-এ শিক্ষকতার চাকরি পান। কিন্তু এতেও যেন সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না রমেশ।

কাকিমা তাঁদের একটি ঘর থাকার জন্য দিয়েছিলেন। সেই ঘরেই রমেশ এবং তাঁর দাদা ও মা থাকতেন। ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য রমেশের মা সরকারি দফতরে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করেননি। এই ঘটনা ভিতর থেকে রমেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সরকারি হাসপাতালে বাবার চিকিৎসার জন্য ভর্তি করাতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই ঘটনাও তাঁকে বিচলিত করেছিল।

কলেজে থাকাকালীন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন রমেশ। কলেজের বেশ কিছু কাজের জন্য মহকুমাশাসকের কাছে যেতে হয়েছিল। তখনই তিনি দেখেছিলেন, এক জন মহকুমাশাসক বা জেলাশাসকের কত ক্ষমতা। আর সেই ঘটনাই রমেশের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

গ্রাম ছেড়ে পুণেতে চলে যান রমেশ। সেখানে একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। শিক্ষকতার কাজ থেকে ছ’মাসের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। পুণেতে গিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। আইএএস হয়ে গ্রামে ফেরেন রমেশ।

এক সাক্ষাৎকারে রমেশ বলেন, “ছোট গ্রাম থেকে এসেছি। এমপিএসসি বা ইউপিএসসি কী তার মানেই জানতাম না। শুনেছিলাম এই নামগুলো। কৌতূহলবশত এক শিক্ষককে এগুলির মানে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি তখন আমায় এর মানে বুঝিয়েছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, এমপিএসসি বা ইউপিএসসি কী আমি দিতে পারব? মরাঠী ভাষায় কি এগুলি দেওয়া যেতে পারে? তখন ওই শিক্ষক বলেছিলেন, ইউপিএসসি তোমার জন্যই। আর সেই কথাটাই যেন আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। তার পর আজ আমি এক জন আইএএস।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ias officer maharashtra Ramesh Gholap
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE