লোকসভা হাতের মুঠোয় ছিলই। সমস্যা ছিল রাজ্যসভা নিয়ে। উত্তরপ্রদেশে বাজিমাত করার পরে রাজ্যসভায় সংখ্যা বৃদ্ধি এখন সময়ের অপেক্ষা। এ বার কি তবে নরেন্দ্র মোদী সাহসী আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটবেন? শনিবার ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই এই আশা হাওয়ায় ভাসছিল।
সেই প্রত্যাশার ফানুসটি ফাটিয়ে দিয়েছেন মোদী ও তাঁর সহকর্মীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বলছেন, শুধু শিল্পপতিদের সুবিধার্থে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার মতো সংস্কারের কথা তাঁরা ভাবছেন না। তা ছাড়া, অর্থনীতিতে এখন এমন কোনও সঙ্কট নেই যে ‘বিগ ব্যাং’ সংস্কার প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সাফ কথা, ‘‘সংস্কার মানেই তা মানুষের বিরুদ্ধে নয়। বৃদ্ধির ইঞ্জিন চলবে সমাজ কল্যাণের জন্যই। আগের জমানার মতো আয় ও কর্মসংস্থান ছাড়া বৃদ্ধি আমরা চাই না।’’
অর্থাৎ, জনপ্রিয়তার পথেই চলবেন মোদী। সরকারের অন্দরমহলের খবর, সংস্কার হবে ঠিকই। কিন্তু ধাপে ধাপে। সরকারের প্রধান নজর থাকবে কী ভাবে গরিব, কৃষক, ভূমিহীন মজুরকে আরও সুরাহা পৌঁছে দেওয়া যায়, সে দিকেই। কারণ মোদী-অমিত শাহ জানেন, এঁদের জন্যই লখনউয়ের তখ্ত দখল সম্ভব হয়েছে। ফলে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে কোনও রাজনৈতিক ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা আর নেই।
এবং অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেই লক্ষ্যেই সরকারের কর্মসূচির তালিকায় সব থেকে উপরে রয়েছে কৃষিক্ষেত্র। কৃষি থেকে আয় বাড়ানোর রাস্তা তৈরি করতে তিনটি মডেল আইন আনতে চলেছে কেন্দ্র। এক, চাষের জমি ঠিকায় বা লিজ দেওয়া বৈধ করার আইন— নীতি আয়োগ যার খসড়া তৈরি করে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দুই, কৃষিপণ্য বিপণন আইনের সংস্কার। যার খসড়া সব মহলের মতামত নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তিন, চুক্তি চাষ সংক্রান্ত আইন। নীতি আয়োগ এর খসড়া তৈরি করছে।
উত্তরপ্রদেশে ব্রাহ্মণ-ঠাকুরের মতো উচ্চবর্ণের ভোটের সঙ্গে অ-যাদব ওবিসি এবং অ-জাটভ দলিত ভোট যোগ করেছেন মোদী-অমিত শাহ, যাঁদের সিংহভাগই গরিব কৃষক বা খেতমজুর। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কৃষিক্ষেত্রের অবস্থা শোচনীয়। নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগড়িয়ার মতে, কৃষির উপর চাপ কমাতে হলে তার উপর নির্ভরশীল অন্তত অর্ধেক মানুষকে কারখানা ও পরিষেবা ক্ষেত্রে নিয়োগ করতে হবে। অর্থনীতির উন্নতি করতে হলে কৃষিক্ষেত্রেও বৃদ্ধি দরকার। কিন্তু তার জন্য কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়ার বদলে সেচে লগ্নি করাই বেশি জরুরি বলে মনে করছে মোদী সরকার।
এক সুরসিক প্রবীণ কংগ্রেস নেতার প্রশ্ন, ‘‘কী বলা যাবে মোদীর এই নতুন মন্ত্রটিকে— ফিরে চল মাটির টানে? নাকি, মা মাটি মানুষ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy