E-Paper

অঙ্কের হিসাবে ১৫ ঘণ্টা, তবে লাগতে পারে ৩ দিনও

বুধবার রাত ২টো নাগাদ উত্তরকাশী জেলায় ভূমিকম্প টের পাওয়া গিয়েছে। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৩.১। তবে সুড়ঙ্গের ধসে তার কী প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:১৭
uttarkashi.

উত্তরাখণ্ডের ভেঙে পড়া সুড়ঙ্গে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই।

নতুন যন্ত্র দিয়ে নতুন উদ্যমে উত্তরকাশীর নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা শুরু হল। বুধবার তিনটি খণ্ডে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে দিল্লি থেকে উত্তরাখণ্ডে উড়িয়ে আনা হয় ‘আমেরিকান অগার’ নামে ২৫ টন ওজনের ওই খনন-যন্ত্র। সব ক’টি খণ্ড সিল্কিয়ারার বিপর্যয়স্থলে পৌঁছনোর পরে রাত ১১টা নাগাদ জোড়া শুরু হয়। আজ বেলার দিকে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের উপস্থিতিতে শুরু হয় ধ্বংসস্তূপ খনন। কাজ শুরুর আগে, বুধবার প্রকল্পের অন্য যে শ্রমিকেরা দুশ্চিন্তায় আর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন, তাঁরা পুজোপাঠ করেন।

সিল্কিয়ারা থেকে বারকোটের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে রবিবার সকাল থেকে আটকে রয়েছেন ৪০ জন শ্রমিক। পশ্চিমবঙ্গের হুগলির দু’জন এবং কোচবিহারের এক জন আছেন তাঁদের মধ্যে। উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কর্নেল দীপক পাটিল। তিনি জানান, ‘নিউ অস্ট্রিয়ান টানেলিং মেথড’ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। এতে সামনে থাকা পাথরের প্রকৃতি বুঝে খননের পদ্ধতি ঠিক করতে করতে এগোনো হয়। প্রথম যে যন্ত্র দিয়ে খনন শুরু হয়েছিল, শক্ত পাথরের সামনে সেটি বিকল হয়ে পড়ে।

খননের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপের ভিতর দিয়ে লোহার পাইপ জুড়তে জুড়তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, পাইপের কমবেশি তিন ফুটের গহ্বর দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিকেরা কোনও রকমে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন। কেউ যদি হামাগুড়ি দেওয়ার মতো অবস্থায় না থাকেন, তাঁকে এক রকমের বেল্টের জ্যাকেট পরিয়ে বা স্ট্রেচারে শুইয়ে টেনে বার করার কথা ভাবা হয়েছে।

মন্ত্রী ভি কে সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি, আর দুই থেকে তিন দিনে উদ্ধার অভিযান শেষ করার। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’’ জাতীয় বিপর্যয় উদ্ধার বাহিনী সূত্রে খবর, ঘণ্টায় পাঁচ মিটার মতো খুঁড়তে পারে নতুন যন্ত্রটি।খননের চেষ্টা চলাকালীন ছাদ থেকে যে পাথর খসে পড়েছে, তা যোগ করে খুঁড়তে হবে মোট ৭০ মিটারের মতো। সেই হিসাবে সব মিলিয়ে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লাগার কথা। তবে ছাদের ঢালাই থেকে বেরিয়ে আসা লোহার মতো বাধা পড়তে পারে সামনে। বা ছাদ থেকে ধসতে পারে আরও পাথর। রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে, এ দিন ১২ মিটার মতো ধ্বংসস্তূপ খনন করা গিয়েছে।

বুধবার রাত ২টো নাগাদ উত্তরকাশী জেলায় ভূমিকম্প টের পাওয়া গিয়েছে। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৩.১। তবে সুড়ঙ্গের ধসে তার কী প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি। আজ মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পরে রাজ্যের সমস্ত সুড়ঙ্গ তৈরির প্রকল্প এ বার খতিয়ে দেখা হবে। ধামী বলেছেন, ‘‘এ রকম সুড়ঙ্গ আমাদের আরও দরকার এবং তৈরিও হচ্ছে। তৈরি যেখানেই হোক না কেন, আমরা সেগুলি খতিয়ে দেখছি।’’

সুড়ঙ্গে অক্সিজেন পাঠানোর সরু পাইপ দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় রসদ পাঠানোর পাশাপাশি ওই পাইপ দিয়েই তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন পরিজন ও আধিকারিকেরা। তাঁদের মনোবল অটুট রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের দুই শ্রমিকের সঙ্গে তেমন কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে। একটিতে মহাদেব নামে এক শ্রমিককে কোনও আধিকারিক ওড়িয়ায় বলছেন, বাবা-কাকাকে উদ্বিগ্ন না হতে বলতে। মহাদেব বলছেন, ‘‘আমি ঠিক আছি, ঠিক আছি কাকা।’’

ঝাড়খণ্ড থেকে চলে এসে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ভাই বিশ্বজিতের সঙ্গে এ দিন কথা বলেছেন ইন্দ্রজিৎ কুমার। পরে তিনি বলেন, ‘‘কথা বলে মন হালকা হল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওরা ঠিক বেরিয়ে আসতে পারবে।’’ মন্ত্রীও এ দিন আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেন।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার দরকার পড়বে। তাঁদের রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য ঠিক না-ও থাকতে পারে। দীর্ঘক্ষণ মাটির নীচে ঠান্ডায় থাকার ফলে বেরিয়ে আসার পরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে পারে তাঁদের শরীর। সুড়ঙ্গের কাছেই চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি রাখা হয়েছে। তবে উদ্ধারের পরে আতঙ্কের চোটটাই সব থেকে বড় হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Uttarkashi Tunnel Collapse Rescue Work

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy