Advertisement
০৯ মে ২০২৪
দিল্লিতে ভরাডুবি

মোদী-শাহের ঘাড়ে দোষ ঠেলছে সঙ্ঘ

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী চাইছিলেন, সঙ্ঘের হিন্দুত্ববাদী প্রচারে যেন উন্নয়ন চাপা না পড়ে যায়। সে কথা তিনি জানিয়েওছিলেন সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্বকে। যার জন্য ‘ঘর ওয়াপসি’র মতো কর্মসূচিতে কিছুটা হলেও রাশ টেনেছেন মোহন ভাগবতেরা। কিন্তু দিল্লিতে হারের পরেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটিকে আক্রমণ শুরু করেছেন সঙ্ঘ নেতারা। তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন দলের একাধিক প্রবীণ নেতাও। সকলেরই এক বক্তব্য, মোদী-শাহের হাতে ক্ষমতা ‘কেন্দ্রীভূত’ হওয়ার ফলেই দিল্লিতে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৩৫
Share: Save:

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী চাইছিলেন, সঙ্ঘের হিন্দুত্ববাদী প্রচারে যেন উন্নয়ন চাপা না পড়ে যায়। সে কথা তিনি জানিয়েওছিলেন সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্বকে। যার জন্য ‘ঘর ওয়াপসি’র মতো কর্মসূচিতে কিছুটা হলেও রাশ টেনেছেন মোহন ভাগবতেরা। কিন্তু দিল্লিতে হারের পরেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটিকে আক্রমণ শুরু করেছেন সঙ্ঘ নেতারা। তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন দলের একাধিক প্রবীণ নেতাও। সকলেরই এক বক্তব্য, মোদী-শাহের হাতে ক্ষমতা ‘কেন্দ্রীভূত’ হওয়ার ফলেই দিল্লিতে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আজ এই নিয়ে সঙ্ঘের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। সেখানে মোদীর বিরুদ্ধে কী ভাবে আক্রমণ চালিয়েছেন সঙ্ঘ নেতারা, তার উদাহরণ মিলেছে ওঁদেরই এক জনের কথায়। তিনি জানিয়েছেন, দিল্লিতে ভরাডুবির অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে সন্দেহ নেই যে, মানুষ মোদী-সরকারের বিরুদ্ধেও ভোট দিয়েছে। আর অমিত শাহের উপরে নেতা-কর্মীরা ক্ষেপে গিয়েই অন্তর্ঘাত করেছেন। ভোটে মোদী-শাহ জুটির তৈরি কৌশল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। সঙ্ঘের সেই নেতার মতে, মোদী সরকার আসার পর সঙ্ঘ যে ভাবে নিজেদের বিস্তারের পরিকল্পনা করছিল, দিল্লির হারে তা-ও ধাক্কা খাবে। অদূর ভবিষ্যতে সঙ্ঘের কর্মসূচি বাস্তবায়িত করাও কঠিন হবে। সে জন্য ৩-৪ দিনের মধ্যে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী কৌশল স্থির করতে চায় আরএসএস।

কিন্তু বিজেপির একটি অংশই প্রশ্ন তুলেছে, দিল্লিতে হারের দায় কি পুরোপুরি মোদী-শাহ জুটির? নাকি বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সঙ্ঘ নেতারা যে ভাবে হিন্দুত্ববাদী প্রচারে সরব হয়েছেন, সে জন্য আরও বেশি করে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে মানুষ? বিজেপির এই অংশের বক্তব্য, ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ন’মাস যাবৎ উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে দিতে চাইছেন মোদী। এমনকী, দিল্লিতে জনমোহিনী প্রচার করে অরবিন্দ কেজরীবাল জয় পেলেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এমন কোনও রাস্তায় হাঁটতে নারাজ। তিনি চান সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং মানুষকে তার শরিক করতে। সেটা তিনি স্পষ্টও করে দিয়েছেন। অথচ ন’মাসে সঙ্ঘ নেতারা বিভিন্ন সময়ে হিন্দুত্ববাদী প্রচার করে মানুষের মনে সংশয় তৈরি করছেন। কেউ বলছেন, হিন্দুদের প্রত্যেকের চারটি করে সন্তান হোক। কেউ চালিয়ে যাচ্ছেন ধর্মান্তরণের ‘ঘর ওয়াপসি’ কর্মসূচি। উন্নয়ন ছাপিয়ে এ সব মানুষের মনে দাগ কেটেছে এবং তার উল্টো প্রভাব পড়েছে দিল্লির ভোটে এমন কথা বলেছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই। অমিত-ঘনিষ্ঠ এক নেতার প্রশ্ন, “সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতারা যে ভাবে চার সন্তান, অপশব্দ ব্যবহার করে ভোটের হাওয়া বিগড়ে দিয়েছেন, তার দায় কে নেবে?”

অমিত-ঘনিষ্ঠ ওই নেতা আরও বলেছেন, দিল্লিতে দল হারলেও ভোট বেড়েছে দু’লক্ষের মতো। ভোটব্যাঙ্কও প্রায় অটুট। কিন্তু সেটি আসনে কেন পরিণত হয়নি, তা পর্যালোচনার বিষয়। মোদী যে বারবার ‘ঘর ওয়াপসি’র মতো কর্মসূচি বন্ধ করতে বলেছিলেন, সঙ্ঘ নেতারা একে তো সে পথে হাঁটেননি, উল্টে এ দিন মোহন ভাগবতের সঙ্গে বৈঠকে মোদী-শাহের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, এ বছরের শেষে বিহারের ভোট। সেখানে নীতীশ-লালু-কংগ্রেস এককাট্টা। তাই দিল্লির দশা সেখানেও হতে পারে। ফলে ধাক্কা খেতে পারে সঙ্ঘের কর্মসূচি।

তাই মোদী-শাহের কর্তৃত্ব কমাতে চাইছেন তাঁরা। এ দিনের বৈঠকে সেটাই বারবার উঠে এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

delhi vote bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE