Advertisement
০৩ জুন ২০২৪

বৃষ্টিতে আবার বেলাইন সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস

ফের ধস নামল লামডিং-শিলচর রেল লাইনে। আবারও দুর্ঘটনার মুখে পড়ল পূর্বোত্তর সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। শনিবারের মতো গত রাতেও বেলাইন হল ট্রেনটি। তবে আঘাত লাগেনি কারও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাফলং ও শিলচর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৫
Share: Save:

ফের ধস নামল লামডিং-শিলচর রেল লাইনে। আবারও দুর্ঘটনার মুখে পড়ল পূর্বোত্তর সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। শনিবারের মতো গত রাতেও বেলাইন হল ট্রেনটি। তবে আঘাত লাগেনি কারও।

এ বারও পুরো ট্রেনকে পিছনের ইঞ্জিনে টেনে আগের স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। লাইন ঠিকঠাক করার পর আজ দুপুর দেড়টায় সেটি রওনা দেয় দিল্লির উদ্দেশে। তবে এ দিনের জন্য বাতিল করা হয় এই লাইনে চলাচলকারী অন্য সব ট্রেন। শিলচর-গুয়াহাটি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে চন্দ্রনাথপুর থেকে এবং গুয়াহাটি-শিলচর ট্রেনকে লামডিং থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

শনিবার রাতে শিলচর যাওয়ার পথে ডিটেকছড়া ও বান্দরখালের মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়েছিল সম্পর্কক্রান্তি। গত রাতে ফেরার পথে আগের জায়গা নিরাপদেই পেরিয়ে গিয়েছিল। আটকায় মাহুর ও ফাইডিং স্টেশনের মধ্যে। গার্ড সেই স্বপনকুমার ধর। দু’দিন আগে যিনি একার সিদ্ধান্তে ট্রেন পিছিয়ে নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাধুবাদ কু়ড়িয়েছিলেন।

গত রাতের দুর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘তখনও লামডিং পৌঁছনোর ৮৩ কিলোমিটার বাকি। রাত ২টো নাগাদ ফাইডিং স্টেশনের হোম সিগন্যালের মুখে পাহাড় ধসে নেমে আসছিল পাথর ও কাদামাটি। ইঞ্জিন পেরিয়ে যায়। টাল সামলাতে পারেনি মালবাহী এসএলআর কামরা এবং অসংরক্ষিত যাত্রীদের প্রথম কামরাটি।’’ তিনি জানান, দুই কামরার চার চাকা লাইনচ্যুত হয়। সঙ্গে এক কামরার জয়েনিং হুক আরেকটির উপর উঠে যায়। লাইনেরও ক্ষতি হয়।

স্বপনবাবু জানিয়েছেন, ফাইডিং স্টেশনের এক নম্বর লাইন আগে থেকেই ধসে বন্ধ রয়েছে। গত কাল দুই নম্বর লাইনে ট্রেন চলছিল। চাকা লাইন থেকে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষে ট্রেন থামানো হয়। পরে সামনের ইঞ্জিন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কামরাদুটিকে কেটে ভোর পাঁচটা নাগাদ ট্রেনটিকে নিউ হাফলং স্টেশনে ফেরানো হয়।

১১ ঘণ্টা আটকে থাকলেও অনেক যাত্রী খাবার ও জল পাননি বলে অভিযোগ। প্রচণ্ড গরমে কষ্ট পান এসি কামরা-র যাত্রীরাও। বাতানুকূল যন্ত্র কাজ না করায় শিশু-বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পরেন। এর মধ্যে শিলচরের বাসিন্দা রাধেশ্যাম শর্মাকে অ্যাম্বুল্যান্সে হাফলং সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। চিকিতসার জন্য গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাঁকে। এসি থ্রি টিয়ারে পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকায় তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়াও কম যন্ত্রণা নয়। নিউ হাফলং স্টেশন থেকে বেরনোর রাস্তাতেও ধস পড়েছে। ফলে ঘুরপথে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর পরই জেলা প্রশাসন স্টেশনে মেডিক্যাল টিম পাঠায়। যান সেনা-ডাক্তারও।

শিলচর মালুগ্রামের বাসিন্দা অমিতাভ দাস বলেন, ‘‘ডিটেকছড়া থেকে নিউ হাফলং ডাইভারশন অংশ পেরিয়ে যাওয়ার পর নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়ি। রাত ২টা নাগাদ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। ট্রেন থেমে যায়। বসে থাকি। ভোর হওয়ার পর নীচে নেমে দেখি, তখনও লাইনের নীচ দিয়ে জল যাচ্ছে।’’ তিনি অভিযোগ করেন— নিউ হাফলং স্টেশনে ট্রেন নিয়ে গেলেও লাভ হয়নি। জল নেই, খাবারের ব্যবস্থা নেই। ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েন। স্টেশন থেকে বেরনোরও রাস্তা নেই। খাবারের ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা হলেও, করা হয়নি কিছুই।

করিমগঞ্জ জেলার আনিপুরের শিপ্রা দাস জানান, তাঁরা দিল্লি হয়ে জম্মু যাবেন। এ ভাবে ট্রেন আটকে পড়ায় ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন। খাবার নেই, জল নেই। তার মধ্যে গরমে অবস্থা শোচনীয় করে তুলেছিল। হাফলঙের রেলকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন। ১১ দিন ধরে স্টেশনে বিদ্যুৎ নেই। তিন দিন নেই পানীয় জলও। ধস নেমে স্টেশনের রাস্তাটিও বন্ধ হয়ে পড়েছে। কার্যত ধসবন্দি রয়েছেন তাঁরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train Detailed Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE