Advertisement
০৫ মে ২০২৪

গ্র্যামি-আসরে তেহাই বাঙালির

ছেলের পড়াশোনায় মন নেই। দিনভর ডেস্ক বাজায়। অথবা মাটিতে তাল ঠোকে। পটনার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের শিক্ষক ছেলেটির বাবাকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন। বলেছিলেন, ডাক্তার দেখান।

গ্র্যামি পুরস্কার হাতে সন্দীপ দাস। ছবি: পিটিআই

গ্র্যামি পুরস্কার হাতে সন্দীপ দাস। ছবি: পিটিআই

দিবাকর রায়
পটনা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share: Save:

ছেলের পড়াশোনায় মন নেই। দিনভর ডেস্ক বাজায়। অথবা মাটিতে তাল ঠোকে। পটনার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের শিক্ষক ছেলেটির বাবাকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন। বলেছিলেন, ডাক্তার দেখান।

ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাবা ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন তবলার শিক্ষকের কাছে। সেই ছেলেই তবলায় তাল ঠুকে জিতে নিয়েছেন সঙ্গীতের অস্কার বলে খ্যাত, গ্র্যামি পুরস্কার।

সন্দীপ দাস। পণ্ডিত রবিশঙ্করের পরে তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি গ্র্যামি জিতলেন। এর আগেও দু’বার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তৃতীয় বারে জয় এল। চিনা-মার্কিন চেলো শিল্পী ইয়ো ইয়ো মা-এর ব্যান্ড ‘সিল্ক রোড অনসম্বল’-এর অ্যালবাম ‘সিং মি হোম’ এ বার ওয়র্ল্ড মিউজিক বিভাগে জিতেছে। ওই অ্যালবামেই তবলা বাজিয়েছেন সন্দীপ। চেলোতে ইয়ো ইয়ো নিজে আর সানাইয়ে সিরীয়-মার্কিন শিল্পী কিনান আজমাহ। এই ওয়র্ল্ড মিউজিক বিভাগেই ষষ্ঠ বারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন রবিশঙ্কর-তনয়া অনুষ্কা শঙ্করও।

আদতে পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের বাসিন্দা, সন্দীপের বাবা কাশীনাথ দাস কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির সূত্রে পটনায় চলে গিয়েছিলেন। তিনিই আট বছর বয়সে সন্দীপকে নিয়ে যান তবলা শিক্ষক শিবকুমার সিংহের কাছে। কিনে দিয়েছিলেন তবলা। এক বছর পরে সোজা বারাণসী। সেখানে গুরু কিষেন মহারাজের কাছে তালিম শুরু। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার পটনা থেকে ট্রেনে চেপে বারাণসী যেতেন সন্দীপ। গুরুর বাড়িতেই রাত্রিবাস। রবিবার ফিরে আসা। ১৫ বছর বয়সে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে সঙ্গত করেন সন্দীপ। সন্দীপের ভবিষ্যত যে উজ্জ্বল, তখনই বলে রেখেছিলেন পণ্ডিতজি। রবিশঙ্করের পরে দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে গ্র্যামি জিতে সেই ভবিষ্যদ্বাণীকেই সত্যি করলেন সন্দীপ।

থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই। বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে প্রথম বিভাগে স্নাতক। সেখান থেকে দিল্লি হয়ে বস্টন। স্ত্রী তৃপ্তি ও দুই মেয়ে সাক্ষী ও সোনাক্ষীর সঙ্গে পাকাপাকি ভাবে সেখানেই। তবে নিয়ম করে এখনও খোঁজ নেন পটনার বন্ধুদের। বড় দাদার সঙ্গে মা থাকেন দিল্লিতে। মেজদাদা-বৌদি রাঁচীতে। কাল রাতে পুরস্কার জেতার পরে আজ দুপুরে দাদা-বৌদিকে ফোন করেছিলেন সন্দীপ। পুরস্কার-পার্টি-স্বপ্ন, সব নিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা হয়েছে তাঁদের। রাঁচীর বাড়ি থেকে ফোনে দাদা গৌতম দাস বলেন, ‘‘ভাইয়ের কৃতিত্বে আমরা খুব খুশি। গোটা পরিবারের সম্মান কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ও।’’

শিষ্যের এমন সাফল্যে খুশি তাঁর প্রথম গুরু শিবকুমার সিংহও। ৭৩ বছরের বৃদ্ধ এ দিন পটনার বাড়িতে বসে বলেন, ‘‘প্রথম দিন তাল ঠোকা দেখেই বলেছিলাম ওর মধ্যে ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে। এখনও নিয়মিত ফোন করে।’’ সন্দীপ নিজেও পুরস্কার জিতে খুশি। কুর্তা-পাজামায় পুরোদস্তুর ভারতীয় সাজেই মঞ্চে উঠেছেন। শুধু একটাই অনুযোগ তাঁর, ধ্রুপদী সঙ্গীত নিয়ে ভারতে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না আর! সংবাদমাধ্যমও সিনেমা তারকাদের নিয়ে হইচই করতেই ব্যস্ত থাকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeep Das Grammy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE