তীর্থযাত্রার জন্য গুয়াহাটির ২৬ জনের দল নেপাল গিয়েছিল। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন ১৯ জন। বেশির ভাগই জখম।
আজ অসমে ফিরে তাঁদের কয়েক জন জানালেন, ২৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ হোটেলের এক তলা থেকে প্রাতরাশের ডাক আসে। ১১ জন নীচে নেমেছিলেন। সে দিনই কাটমাণ্ডু পৌঁছনো ওই পর্যটক দলের বাকিরা ছিলেন ঘরেই। আচমকা প্রবল ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে হোটেল। কয়েক জন ছুটে বের হয়ে যান। বাকিদের নিয়েই ধসে যায় হোটেলটি। রাজগড়ের মানসী অধিকারীর মা কল্পনা অধিকারী স্নান করছিলেন। হোটেল কাঁপতে দেখে মা’কে জাপটে ধরে নীচে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মেয়ে। তখনই হুড়মুড় করে মাথার উপরে ভেঙে পড়ে ছাদ। সংজ্ঞাহীন মানসীকে পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা গেলেও, মায়ের খোঁজ মিলছিল না। অবশেষে কল্পনাদেবীর নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। হোটেলের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া ১১ জন পর্যটক বেঁচে গিয়েছেন। মানসীদেবীরা জানান, ভারতীয় দূতাবাস ও পুলিশের সাহায্যে তাঁরা বিমানবন্দরে পৌঁছন। এ দিন গুরুতর জখম মানসীদেবীকে দিল্লি থেকে গুয়াহাটি আনা হয়। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। মানসীদেবীর বাবা, চিকিৎসক বিষ্ণুপ্রসাদ অধিকারী স্ত্রীর দেহ নিতে নেপালে গিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ওই দলে থাকা ৭ জন মহিলার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দিল্লির বিদেশ মন্ত্রক। অসমের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানান, ভূকম্পনে ওই পর্যটক দলের সদস্য তথা গুয়াহাটির হেঙেরাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জয়শ্রী বরা, ভূমিকা দাস, ভণিতা ডেকা, রীনা দাস ও পদ্মাবতী মজুমদারের মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছেন গুয়াহাটির নারকেল বস্তির বাসিন্দা তথা শংকরদেব বিদ্যানিকেতনের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা হেমা শইকিয়া। শইকিয়ার পরিবার কাটমাণ্ডু রওনা হয়েছেন। তাঁরা সেখানেই শইকিয়ার অন্ত্যেষ্টি করবেন। বাকিদের দেহ ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে কেন্দ্র। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ জানিয়েছে, এ দিন রাতেই দেহগুলি দিল্লি পৌঁছবে। ওই বিভাগের অধিকর্তা পি কে তিওয়ারি জানান, এখনও পর্যন্ত নেপালে ৯০ জন অসমিয়ার সন্ধান মিলেছে। তাঁদের মধ্যে ৪০ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। ১৮ জনকে বিমানে ইতিমধ্যে গুয়াহাটি নিয়ে আসা হয়েছে। আরও ৬ জন নিজেরা সড়কপথে ফিরেছেন। কয়েক জনকে উদ্ধার করে দিল্লিতে রাখা হয়েছে। কিন্তু, এখনও কয়েক জনের খবর মেলেনি। উদ্বেগে রয়েছে তাঁদের পরিবার। গুয়াহাটি বিমানবন্দরে ফিরে ঈশ্বরে ধন্যবাদ জানান অসীমা জৈন। তিনি জানান, তিন বছরের মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তিনি একটি শপিং মলে ছিলেন। কম্পনের পরেই সকলে দৌড়ে নীচে নামতে চায়। মেয়ে হাত থেকে ছিটকে পড়ে। কোনওমতে মেয়েকে ফের তুলে তাঁরা রাস্তায় পৌছন।
নেপাল থেকে দেহগুলি আনতে ও জখম-নিখোঁজদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে এ দিন রাজ্য পুলিশের এডিজি উমেশ যাদব নেপাল গিয়েছেন। তেজপুর থেকে স্থলসেনা ও বায়ুসেনার ৯৩ জনের একটি বিশেষ দলও উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য নেপাল গিয়েছে। অসম পর্বতারোহণ সংস্থার সম্পাদক সত্যেন শর্মা জানান, দু’দিনের ভূমিকম্প ও তুষার ধস সামলে অসমের ১১ জন পর্বতারোহী অক্ষত রয়েছেন। অরুণাচলের তিন বার এভেরেস্টজয়ী পর্বতারোহী আনসু জানসেমপারাও তুষার ধসের মুখে পড়েছিলেন। তাঁরা সকলে প্রাণে বাঁচলেও আনসুর এক শেরপার কাঁধ ভেঙেছে। আপাতত আনসুরা বেস ক্যাম্পে পৌঁছে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা ও জখমদের সাহায্য করায় ব্যস্ত। এ দিকে আজ সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে গুয়াহাটিতে ফের জোড়া কম্পন অনুভূত হয়। কম্পনে গুয়াহাটিতে কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy