বারবার বলা সত্ত্বেও তৈরি করা হয়নি কোনও জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামো। পাকিস্তানকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করার জন্য নতুন পদক্ষেপেরও অভাব রয়ে গিয়েছে।
শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন বিদেশ মন্ত্রকের স্থায়ী সংসদীয় কমিটি তার সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে এ ভাবেই ভৎর্সনা করল নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। আজ লোকসভায় পেশ করা রিপোর্টে অবিলম্বে জাতীয় নিরাপত্তা নীতি তৈরি করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নিজেদের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনার পথ খুলতে। পাশাপাশি পাকিস্তান তথা আইএসআই-এর নাশকতামূলক কাজকর্ম বন্ধ করতে এবং কাশ্মীরে মৌলবাদের প্রসার কমাতে কিছু সুপারিশও করেছে কমিটি।
নতুন বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর লাগাতার জঙ্গি অনুপ্রবেশ, হামলা, সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন ক্রমশ চাপে ফেলছে কেন্দ্রকে। এই পরিস্থিতিতে সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এই কমিটি রাজনৈতিক ভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ, কেন না এর অন্যতম সদস্য রাহুল গাঁধী।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘কমিটি বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা সত্ত্বেও জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির প্রশ্নে বিদেশ মন্ত্রকের নীরবতা খুবই দুঃখজনক। তাই আবারও বলা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রককে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার সব দিকগুলি খতিয়ে দেখে এই কাঠামো তৈরি করা হোক। এ ব্যাপারে কত দূর এগোনো হল, সেটাও জানতে চাইবে কমিটি।’ সমস্ত সম্ভাব্য মঞ্চে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে পাকিস্তানকে আলোচনার রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করুক ভারত — এই পরামর্শ দিয়েছে তারুরের কমিটি। তাদের বক্তব্য, ‘অতীতে দেখা গিয়েছে, ভারত-পাক আলোচনা অনেক ক্ষেত্রে হাতে কলমে কাজে দিয়েছে। সরকার কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও নতুন উদ্যোগের কথা বলতে পারেনি, যার ফলে বকেয়া জটগুলি কাটতে পারে।’
আইএসআই-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের নাশকতামূলক কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করে বেশ কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে কমিটি। যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সীমান্তে ফ্লাড লাইট লাগানো, বিপজ্জনক সীমান্ত পোস্টগুলি চিহ্নিত করে নিয়মিত তার মূল্যায়ন করা, উচ্চ প্রযুক্তির নজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করার মতো বিষয়গুলি। ভারত-বাংলাদেশ ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আরও সেনা বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কমিটি মনে করে, অবিলম্বে ভারত-পাক সীমান্তে আরও ৭ ব্যাটেলিয়ন সেনা মোতায়েন করা প্রয়োজন।
সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্তরে বারবার তাদের ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হতে বলছে কমিটি। কাশ্মীরে অশান্তি জিইয়ে রাখতে ইসলামাবাদের নিরন্তর সক্রিয়তাকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরতেও বলা হয়েছে। কমিটির মতে, পাক সমর্থিত বিছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি যাতে কাশ্মীরের যুবশক্তিকে মৌলবাদের দিকে ঠেলে দিতে না পারে, সে জন্য উপত্যকায় পরিকাঠামো গঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ানো খুবই প্রয়োজন।