পাঁচ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর্নাটকে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। তার মধ্যে মহিলাদের জন্য নিখরচায় বাসযাত্রা চালুও করে দিয়েছে নতুন সরকার। কিন্তু আর এক প্রতিশ্রতি, গরিব পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে ১০ কেজি খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রকল্পটি কার্যকর করার পথে কেন্দ্রীয় সরকার বাগড়া দিতে শুরু করেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া বা এফসিআই-কে কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন রাজ্যকে খাদ্যশস্য বিক্রি না করে।
২০১৩ সালে প্রথম দফায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কর্নাটকে অন্ন ভাগ্য যোজনা প্রকল্প চালু করেছিলেন সিদ্দারামাইয়া। এ বারের বিধানসভায় জিতলে বিপিএল কার্ডধারী পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে দেওয়া খাদ্যশস্যের পরিমাণ পাঁচ কেজি থেকে বাড়িয়ে দশ কেজি করে প্রকল্পটি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। গত ২৩ জুন এফসিআই-কে ৩৪ টাকা কেজি দরে (কেজি প্রতি ২.৬ টাকা পরিবহণ খরচ-সহ) প্রায় ২.৩ লক্ষ টন চাল দিতে বলে চিঠি লেখে কর্নাটক সরকার। ১২ জুন তাতে সম্মতি জানিয়ে পাল্টা চিঠিও দেয় এফসিআই। কিন্তু এর ঠিক পরের দিনই কেন্দ্রীয় সরকার এফসিআই-কে খোলা বাজারে ‘ওএমএসএস(ডি)’ প্রকল্পের আওতায় রাজ্যগুলিকে খাদ্যশস্য বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেয় বলে সিদ্দারামাইয়ার অভিযোগ।
কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক যদিও এক বিবৃতিতে বলেছে, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া হয়নি। গত ৮ জুনের এক বৈঠকে সুপারিশ করা হয়েছিল যে, খোলা বাজারে চাল-গমের জোগান ঠিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য সরকারগুলির কাছে ‘ওএমএসএস(ডি)’ প্রকল্পের আওতায় খাদ্যশস্য বিক্রি বন্ধ করা যেতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হওয়া রাজ্য কিংবা উত্তর-পূর্ব এবং পার্বত্য এলাকার রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে ১৩ জুন সব রাজ্যকে চিঠিতে তা জানানো হয়। কর্নাটকে পুরনো নিয়ম কার্যকর ছিল ও তার ভিত্তিতেই প্রথমে রাজ্যকে উত্তর দেওয়া হয়েছিল। ১৩ জুনের নির্দেশ পেয়ে সেই চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু খাদ্যশস্য না মিললে প্রকল্প চালু হবে কী ভাবে? কেন্দ্রকে ‘গরিব-বিরোধী’ বলে আক্রমণ করে সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, ‘‘প্রকল্প (১ জুলাই) চালু করতে আমরা বদ্ধপরিকর। ছত্তীসগঢ় ও তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ করেছি, তাঁরা যেন আমাদের রাজ্যকে চাল বিক্রি করেন। দু’-এক দিনের মধ্যেই ছবিটা স্পষ্ট হবে।’’ এই প্রসঙ্গে টুইটারে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ লিখেছেন, ‘বিজেপি সভাপতি (জে পি) নড্ডাজি বলেছিলেন, বিজেপিকে ভোট না দিলে কর্নাটক মোদীজির আশীর্বাদ পাবে না। এর মানে তা হলে এই।’ রমেশের অভিযোগ, এফসিআই-কে খোলা বাজারে চাল-গম বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক শ্রেণিকেই আঘাত করছে। কর্নাটকে হারের ‘হতাশা’ এ ভাবেই মেটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)