Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩

কংগ্রেসের হাত ধরতে চেয়েও সতর্ক সীতারাম

এক দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে আলিমুদ্দিনের আগ্রহ, অন্য দিকে তত্ত্ব আঁকড়ে থাকা পলিটব্যুরোর বড় অংশের পিছুটান। এই দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্যের খেলা খেলতে খেলতেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের অঙ্ক কষছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৬
Share: Save:

এক দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে আলিমুদ্দিনের আগ্রহ, অন্য দিকে তত্ত্ব আঁকড়ে থাকা পলিটব্যুরোর বড় অংশের পিছুটান। এই দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্যের খেলা খেলতে খেলতেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের অঙ্ক কষছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

Advertisement

কংগ্রেসের হাত ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছেন রাজ্য সিপিএমের যে শীর্ষ নেতারা, তাঁরা ভালই জানেন, এই স্বপ্নে প্রধান বাধা তিনটি। এক, কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে না-যেতে গত পার্টি কংগ্রেসের কট্টর অবস্থান। দুই, পলিটব্যুরো থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি— সর্বত্রই প্রকাশ কারাট ও তাঁর সঙ্গীদের সংখ্যাধিক্য। তিন, কেরল ও ত্রিপুরার নিজস্ব রাজনীতির সমীকরণ, যেখানে দলের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস।

এই চাপ অস্বীকার করে কী ভাবে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা যায়, তা নিয়ে এখন ভাবছেন ইয়েচুরি। তাই কৌশলে সব দিক বাঁচিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। যেমন বুধবার হায়দরাবাদে পশ্চিমবঙ্গে জোটের সম্ভাবনা সরাসরি খারিজ করে দেননি তিনি। বরং মন্তব্য করেছেন, বিজেপি ও তৃণমূলের ম্যাচ ফিক্সিং হয়ে গিয়েছে। এখন রাজ্যে সিপিএম, কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যাবে কিনা, সে ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরো যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সিপিএম সূত্রের খবর, ইয়েচুরির এই কৌশলের পিছনে কয়েকটি অঙ্ক কাজ করছে। যেমন পলিটব্যুরোর ১৬ জন সদস্যের মধ্যে প্রকাশ কারাট, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, মানিক সরকার, পিনারাই বিজয়ন, বি ভি রাঘবালু, বৃন্দা কারাট, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন, এম এ বেবি, এ কে পদ্মনাভন, সুভাষিণী আলিরা কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি জোটের প্রবল বিরোধী। তাঁরা বলছেন, দল অতীতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করেছে, কখনও বা তামিলনাডুর মতো রাজ্যে ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে পরোক্ষে নির্বাচনী সমঝোতাতেও গিয়েছে। কিন্তু তা-ও জাতীয় স্তরে কংগ্রেস সম্পর্কে মূল্যায়নকে পাশ কাটিয়ে প্রকাশ্য জোটের ছাড়পত্র দেওয়া ঠিক হবে না। শুধু তত্ত্বগত বিষয় বাস্তবতার নিরিখেও প্রকাশ শিবিরের প্রশ্ন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটে যে সাফল্য আসবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? উল্টে তাঁদের বক্তব্য, কংগ্রেসের একাংশের সমর্থক জোটের সমীকরণ মেনে না নিয়ে তৃণমূলের দিকেও ঝুঁক়তে পারে!

Advertisement

প্রকাশ শিবিরের এই অঙ্ক মানতে নারাজ বঙ্গ বিগ্রেডের নেতারা। তাই তাঁরাও সীতারামের উপর পাল্টা চাপ রেখে চলেছেন। বোঝাচ্ছেন, বারবার প্রকাশ কারাটের কট্টর ভাবনার খেসারত দিতে হয়েছে দলকে। এ বার যেন বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেননা, সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা হলেও তা দিয়ে ভোটে সাফল্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে জোটে গিয়ে ভোটের সমীকরণে বদল আনা দরকার। আলিমুদ্দিনের নেতারা অঙ্ক কষে দেখাচ্ছেন, বাম-কংগ্রেস ভোট একজোট হলে বহু আসনেই তৃণমূল বিপদে পড়বে। সীতারাম এখন বঙ্গ সিপিএমের এই চাপকে সামনে রেখে কংগ্রেসের সঙ্গে কৌশলগত সমঝোতার দিকে দলকে নিয়ে যেতে সফল হন কিনা, সেটাই দেখার। এক সিপিএম নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের সামনে প্রবল চাপ সেটাই, যখন পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপর তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকে। ইয়েচুরিকে সেই চাপই সামলাতে হচ্ছে।’’

জোট নিয়ে সীতারামের মতো চাপ সনিয়া বা রাহুল গাঁধীর নেই। এ বিষয়ে তাঁরাই শেষ কথা। প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা জোটের জন্য বারবার আর্জি জানাতে পারেন, কিন্তু সকলেই জানেন, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ১০ জনপথই নেবে। জোট নিয়ে তাঁদের আগ্রহের কথা হাইকম্যান্ডের কানে তোলার কাজে ক্ষান্তি দিচ্ছেন না রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘জোট আমরাই করি বা সাধারণ মানুষই করুক, শতাংশের হিসেবে দিদি (মমতা) নিজের ভোট ধরে রাখতে পারবেন না। দিদিও জানেন জোট হলে তাঁর পরাজয় নিশ্চিত।’’

বাম-কংগ্রেস জোট হলে অনেক অঙ্কই যে পাল্টে যাবে, একান্ত আলোচনায় তা কবুল করছেন তৃণমূল নেতারা। তবে পাল্টা কৌশল হিসেবে প্রকাশ্যে তাকে পাত্তা দিচ্ছেন না তাঁরা। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যেমন এ দিন আলিপুরদুয়ারে দাবি করেছেন, সিপিএম-কংগ্রেসের জোটে কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা সাড়া দেবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.