প্রথমে নাগা চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন অসম ও অরুণাচলের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা। কিন্তু মোদী সরকারের সঙ্গে কংগ্রেসের সংঘাত তুঙ্গে ওঠায় এ বার সেই চুক্তি নিয়েই আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। তাঁর অভিযোগ, মোদী সরকার এই চুক্তির বিষয়ে অসম, মণিপুর ও অরুণাচলের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনাই করেনি।
কী শর্তে এনএসসিএন (আইএম)-র সঙ্গে মোদী সরকারের শান্তি চুক্তি হয়েছে, সরকার এখনও তা গোপন রেখেছে। শান্তি চুক্তির পরে মোদী ফোন করে সনিয়া-মনমোহন সিংহ-এইচ ডি দেবগৌড়া থেকে শুরু করে সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু সকলেরই দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কোনও তথ্যই জানাননি। সনিয়া বলেন, ‘‘আমি স্তম্ভিত। হতে পারে এই চুক্তি ঐতিহাসিক। কিন্তু অসম-মণিপুর-অরুণাচল— এই তিনটি রাজ্যে এর প্রভাব পড়বে। অথচ এই তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাই হয়নি। এতেই প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের ঔদ্ধত্য বোঝা যায়।’’ একই যুক্তি সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির। তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্যি যে চুক্তি সইয়ের পরে আমাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু চুক্তির শর্ত কিছুই জানানো হয়নি।’’
বিজেপি নেত্রী নির্মলা সীতারমনের পাল্টা অভিযোগ, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে রাজনীতি করছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে ডাকা হলেও তাঁরা আসেননি। চুক্তির স্পর্শকাতর দিকটির কথা মাথায় রেখেই শর্তগুলি গোপন রাখা হয়েছে।
এই যুক্তিতে অবশ্য বিরোধীরা ভুলছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, এই চুক্তি কি মোদী সরকারের ‘ফাঁকা বুলি’? এনএসসিএন (আইএম)-এর এক শীর্ষ নেতা আর জানান, যেটি সই হয়েছে, সেটি আসলে চুক্তির ভূমিকা।
তা হলে মোদী সরকার কেন একে ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ বলে আখ্যা দিচ্ছে? কারণ ১৯৯৭ সালেই কেন্দ্রের সঙ্গে এনএসসিএন (আইএম)-এর সংঘর্ষবিরতি চুক্তি হয়ে গিয়েছিল। তার পরে এত দিন ধরে আলোচনায় বিবাদের মূল বিষয় ছিল এনএসসিএন (আইএম)-এর পৃথক নাগালিম বা বৃহত্তর নাগা রাষ্ট্রের দাবি। ২০১১ সালে নাগা অধ্যুষিত এলাকার উপর কর্তৃত্ব বা স্বশাসনে রাজি হয় তারা।
এই অবস্থায় অসম, মণিপুর বা অরুণাচলে নাগা অধ্যুষিত এলাকাগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, উঠছে সেই প্রশ্ন। মণিপুরেই পঞ্চম তফসিলভুক্ত ছয়টি স্বশাসিত পরিষদ রয়েছে। যার মধ্যে চারটি নাগা অধ্যুষিত। এগুলিকে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনতে গেলে মণিপুর সরকার রাজি হবে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে। একই ভাবে সব নাগা অধ্যুষিত এলাকাকে এক প্রশাসনিক ছাতার তলায় আনতে গেলে অসম-অরুণাচল-মণিপুরের সীমানা অক্ষুণ্ণ থাকবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, সেই কারণেই তরুণ গগৈ চুক্তিকে স্বাগত জানালেও যুক্তি দিয়েছিলেন, অসমের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এখন আসলে চুক্তির একটি কাঠামো সইসাবুদ হয়েছে। চুক্তির তথ্যগুলি আগামী তিন মাসে ঠিক হবে। চুক্তির শর্ত তৈরির আগেই কী ভাবে মোদী সরকার তাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে প্রচারে নেমে পড়ল, সেই প্রশ্নই তুলছেন বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy