আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য সদর দফতরের দোতলায় যে ঘরটিতে সাংবাদিক বৈঠক হয় এবং রাজ্য কমিটির বৈঠকও হয়, সেই ঘরের পিছনের দেওয়ালে ঝোলানো আছে এক বিশাল বিশ্ব মানচিত্র। কিন্তু এই মানচিত্রটি সত্তরের দশকে লাগানো এবং এখনও এই মানচিত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন অবিভক্ত। যে সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। ধূলি-ধূসরিত এই মানচিত্রটিতে সেই বলকানাইজেশনের কোনও প্রতিফলন নেই। ঘরটিতে এখনও প্রাচীন কিছু ছবি আছে। যেগুলি ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। যেখানে আছেন স্টালিন। এবং সেই দেওয়ালে ছেঁড়া ক্যালেন্ডারে সেলোটেপ লাগানো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেশিনও ঘরটিতে নেই।
দলের আর একটি প্লেনাম যখন আসন্ন, সেই সময় দাবি উঠেছে এই ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কার মানচিত্রটি বদল হোক। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হবে কি হবে না, সে সব পরের কথা। দলের সংগঠনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে গেলে এই মান্ধাতার আমলের মানসিকতা থেকে তো বেরোতে হবে! বিষয়টি সম্পর্কে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বিমান বসু অবহিত। বুদ্ধবাবু নির্দেশও দিয়েছেন ঘরটিকে নতুন করে সাজানোর জন্য। সূর্যকান্ত মিশ্র নিজে এই ঘরে আজকাল সাংবাদিক বৈঠক করেন। টেলিভিশনের যুগে সব রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় অফিসে হাল-হকিকত বদলে দিয়েছে। যাতে একটা ঝা চকচকে ছবি ক্যামেরার সামনে ফুটে ওঠে। বিমান বসু দলীয় সহকর্মীদের জানিয়েছেন, নতুন মানচিত্রের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এত বড় ও এত ভাল একটি বিশ্ব মানচিত্র পাওয়াও যাচ্ছে না। কমিউনিস্ট পার্টির তো একটি বিশ্ব দীক্ষা আছে, তাই বিমান বসুও মনে করেন একটি বিশ্ব মানচিত্র থাকাটা খুব জরুরি।
বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র দলে জিবি (জেনারেল বডি) বৈঠকে গেলে কমরেডদের বলছেন, সংবাদমাধ্যম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাপারে সমালোচনায় মুখর হলেও এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পরাস্ত হবে আর সিপিএম ক্ষমতায় আসবে। ৩৪ বছরের মানুষের অসন্তোষ এত সহজে ঘোচানো যাবে না। আর তাই আগে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। মানুষের আস্থা ফিরে পেতে হবে। মানুষ যেন ভাবতে শুরু করে, পুরনো সিপিএম নয়, এ বার আসবে নতুন সিপিএম। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের ভাষায়: ‘‘ফজলি থেকে ফজলিতর আম হয় না। বাজারে নতুন ওঠা এমন আতা।’’