আগরতলায় মমতা। সোমবার বাপি রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
নেহাতই কি কাকতালীয়! নাকি পশ্চিমবঙ্গে একাই দু’শো পেরিয়ে যাওয়া দিদি আগরতলায় পা রাখতেই অশনি সঙ্কেত দেখছে ত্রিপুরার ২৩ বছরের বাম শাসন! নইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে কেন কলকাতা থেকে উড়িয়ে আনা হল সূর্যকান্ত মিশ্রকে! কেনই বা আরও এক বার বোঝানোর চেষ্টা হল, ‘তৃণমূল কতটা ক্ষতিকারক’!
২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট। তার দু’বছর আগে সূর্যবাবুর সতর্ক-বার্তা তারা কতটা শুনল, সেটা সময় বলবে। বরং, আগে দেখে নেওয়া যাক আগরতলায় কেমন অভ্যর্থনা পেলেন দিদি!
এ বার একুশের মঞ্চ থেকেই ত্রিপুরায় বামেদের উৎখাতের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। মানিক সরকারদের হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ৯ অগস্ট ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের বর্ষপূর্তির দিন থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়ে যাবে তাঁর ‘মিশন ত্রিপুরা’। সেই মতোই এখানকার আস্তাবল মাঠে কাল তৃণমূলের সভা। তার আগে আজ বিকেলে যখন আগরতলার মাটি ছুঁয়েছে মমতার বিমান, তত ক্ষণে বাইরে থই থই ভিড়। মুহূর্মুহূ স্লোগান উঠছে তাঁর নামে। বাম শাসন অবসানের ডাক দিয়ে আবহ সঙ্গীত বাজছে। তাঁকে আপ্যায়ন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার সমর্থকের বাইক বাহিনী। সেই উন্মাদনাকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য অতিথিশালার উদ্দেশে যখন রওনা দিলেন দিদি, রাস্তার দু’পাশে স্থানীয় মানুষের উৎসাহও চোখ এড়ানোর মতো নয়! সমর্থকদের ভিড়ের চাপে অতিথিশালায় প্রবেশেও লেগে গেল বেশ কিছুটা সময়!
মমতা আগরতলায় পৌঁছনোর কিছু পরে শহর ছেড়েছেন সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক। ফলে এই ছবিটা হয়তো তাঁরও নজর এড়ায়নি। এবং হয়তো বা এটাই আশঙ্কা করে আজ রবীন্দ্র সভাগৃহে তিনি পইপই করে দলের কমরেডদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ‘‘আধা-ফ্যাসিস্ত কায়দায় বাংলায় বিরোধীদের খতম করার চেষ্টা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খুন হয়েছেন ১৮৬ জন। গ্রামে গ্রামে স্বঘোষিত বিচার ব্যবস্থা চালু করেছে তৃণমূল। সরকারের টাকা দেদার লুঠ হচ্ছে!’
যদিও সূর্যবাবুর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সঙ্গে তাঁর আগরতলা আগমনের কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলায় তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে সিপিএমের প্রচার চলছে। তারই অংশ হিসাবে আমার ত্রিপুরা ও ওড়িশা যাওয়ার কর্মসূচি ঠিক হয়েছিল।’’
আগরতলার রাজনীতি অবশ্য সেই যুক্তি মানতে নারাজ। বরং, স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল সম্পর্কে যে ভাবে তিনি আজ সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন, তার মধ্যেই রাজনৈতিক জমি হারানোর আশঙ্কার ইঙ্গিত আছে। নইলে এর আগেও তো তৃণমূল নেত্রী ত্রিপুরায় এসেছেন। এতটা উদ্বেগ তো দেখা যায়নি বাম শিবিরে!
বস্তুত, বাম শাসনের অবসানের ডাক দিয়ে অতীতে ত্রিপুরায় তিন বার এসেছিলেন মমতা। কিন্তু সেই প্রয়াস ছিল রাজনৈতিক আবেগ সর্বস্ব। এ বারের চেষ্টা যে আলাদা, গত কয়েক মাসের ঘটনাতেই তা স্পষ্ট। বাংলায় বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর পরই ত্রিপুরায় কংগ্রেসের ৬ বিধায়ক রাতারাতি যোগ দেন তৃণমূলে। তার জেরেই ত্রিপুরায় বাম-বিরোধী প্রধান শক্তি এখন তৃণমূলই। তাতে উৎসাহ পেয়েই দিদির নির্দেশে গত কয়েক মাসে ঘন ঘন আগরতলা সফরে এসেছেন মুকুল রায়। কংগ্রেস ছেড়ে আসা সুদীপ রায়বর্মণ, সুরজিৎ দত্তদের নিয়ে তৃণমূলের সংগঠন বিস্তারে নজর দিয়েছেন।
ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেওয়ার আগে আজ আগরতলা বিমানবন্দরের লাউঞ্জেই রাজ্যের তৃণমূল নেতাদের শলা-পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। আর মুকুল বলেছেন, ‘‘ত্রিপুরায় আন্দোলন শুধু কাল দিদির সভা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করবেন বাংলার নেতা-মন্ত্রীরা। শীঘ্রই এখানে যুব তৃণমূলের সভা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
বোঝা যাচ্ছে, ‘মিশন ত্রিপুরা’র গতি এ বার আলাদা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy