করোনাভাইরাস-লকডাউনের মোকাবিলায় ৬ মাসের জন্য ঋণের কিস্তি স্থগিতের (ইএমআই মোরেটরিয়াম) সুযোগ দিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সেই সুবিধা যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁদের সুদের উপর সুদ গুণতে হবে। অর্থাৎ সুবিধা নিতে গিয়ে কার্যত বিপাকে ঋণগ্রহীতারা। এই নিয়েই সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ‘শেষ সুযোগ’ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা সুপ্রিম কোর্টে জমা দিতে হবে বলে নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শৃঙ্খল রুখতে ২৫ মার্চ থেকে দেশে লকডাউন জারি হয়েছিল। তার কয়েক দিন পরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছিল, ঋণগ্রহীতারা চাইলে তিন মাসের জন্য বাড়ি-গাড়ি, পার্সোনাল-সহ প্রায় সব ধরণের ঋণের ইএমআই নাও দিতে পারেন। পরে সেই মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছিল। সব মিলিয়ে মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্ত মোট ছ’মাসের জন্য ঋণের কিস্তি স্থগিতের সুযোগ দেওয়া হয় ঋণগ্রহীতাদের। অর্থাৎ এই ছ’মাস ঋণের কিস্তি না দিলেও ঋণগ্রহীতাকে কোনও জরিমানা দিতে হবে না বা ক্রেডিট স্কোরে কোনও প্রভাব পড়বে না। গত ৩১ অগস্ট সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে এই ঋণের কিস্তি স্থগিত ঋণগ্রহীতাদের কাছে সুবিধাজনক মনে হয়েছিল বটে। কিন্তু ঘোষণার কয়েকদিন পরেই বোঝা যায়, এতে সাময়িক স্বস্তি হলেও ঋণের মেয়াদ শেষে গিয়ে অনেক বেশি টাকা ঘাড়ে চাপবে। অর্থাৎ এই ছ’মাসের ঋণের সুদের উপরেও সুদ দিতে হবে গ্রাহকদের। অর্থাৎ কেউ যদি পাঁচ বছরের মেয়াদে ঋণ নেন এবং ইএমআই শুরু হওয়ার গোড়ার দিকেই ইএমআই স্থগিতের বিকল্প গ্রহণ করেন, তা হলে এই পুরো সময়ের জন্য ছ’মাসের ঋণের সুদের উপর সুদ মিলিয়ে পরিশোধ করতে হবে ব্যাঙ্ককে। বিষয়টি সামনে আসতেই চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয় ঋণগ্রহীতা ও সংশ্লিষ্ট সব মহলে। বিরোধীরাও সরকারের তীব্র সমালোচনা করে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সরকার ঋণগ্রহীতাদের সুবিধা দেওয়ার বদলে আরও বড় ঋণের বোঝা ঘাড়ে চাপিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিকে আরো লাভের পথ করে দিয়েছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়। জনস্বার্থ মামলাও রয়েছে তার মধ্যে। মামলাকারীদের দাবি, ঋণের কিস্তি স্থগিত করা ছ’মাসের জন্য সুদ এবং সুদের উপর সুদ দু’টোই মকুব করতে হবে।