Advertisement
১১ মে ২০২৪
এনআরসি বিতর্ক

সংশোধনে ২০১৪ সালকেই ভিত্তি ধরার সুপারিশ গগৈয়ের

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ঘিরে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে অসমের সেই সমস্ত মানুষকে এনআরসি-র অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাজ্য সরকার মেনে নেবে। এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০২:৩৮
Share: Save:

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ঘিরে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে অসমের সেই সমস্ত মানুষকে এনআরসি-র অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাজ্য সরকার মেনে নেবে। এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জারি করা এক বিবৃতিকে ঘিরে আজ দিনভর রাজ্য জুড়ে বিভ্রান্তি তুঙ্গে ওঠে। বিবৃতিতে বলা হয়: চা-জনগোষ্ঠী, উপজাতি, সংখ্যালঘু ও অন্যান্য ভূমিপুত্রদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্য সরকার জানাচ্ছে, ভোটার তালিকায় নাম থাকার অর্থই হল ভারতের নাগরিক হওয়া। সেই মতো ভোটার তালিকায় নাম থাকা সকলের নামই যেন এনআরসি-র অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিটি সামনে আসার পরেই প্রশ্ন ওঠে, তরুণ গগৈ কোন ভোটার তালিকার কথা বলছেন? ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা, নাকি ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকা? রাত পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এ বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস সচিব ভরত নরহ প্রথমে বলেন, ‘‘মনে হয় ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকার কথাই বলা হচ্ছে।’’ ফের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করে নেওয়া ভাল বলে, পরে তিনি নিজেই ফোন করে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতিতে কোনও সাল উল্লেখ করতে নিষেধ করেছেন। কেবল ভোটার তালিকা বলতে বলেছেন।’’ জানানো হয়, ‘‘এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।’’ ভরত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাইছেন না।’’ নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি-র দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র কমিশনার প্রতীক হাজেলাও সঠিক ভাবে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বেশি রাতে ভরত নরহ ফোনে জানান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ২০১৪ সালের ভোটার তালিকার কথাই বলতে চেয়েছেন। তাঁর যুক্তি, এই ভোটার তালিকায় কোনও বাংলাদেশির নাম নেই। সন্দেহজনক বা ডাউটফুল ভোটারদেরও (ডি-ভোটার) নাম সেখানে নেই। সুতরাং ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা ভিত্তি করতে কোনও অসুবিধা নেই।

গত কাল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক অর্ধেন্দু দে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, এনআরসি তৈরির ক্ষেত্রে বিস্তর অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ১২৬টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দল-সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে মিলিত মঞ্চ গড়া হবে। তিনি দাবি করেন, প্রয়োজনে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে বিস্তারিত আলোচনার পরে তবেই এনআরসির কাজে হাত দেওয়া হোক। আজ সরকারের এই ঘোষণাকে তাঁদের প্রথম নৈতিক জয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এনআরসি বিতর্কে রাজ্য বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল এআইইউডিএফ-এর দাবি ছিল, ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জি ও তার পরের ভোটার তালিকাগুলি অসম্পূর্ণ। অনেকের নাম ভুল ছিল। সে ক্ষেত্রে কম্পিউটারে সঠিক তথ্যও মিলছে না। সহায়তা কেন্দ্রেও সম্পূর্ণ নাগরিক পঞ্জি ও ভোটার তালিকা মিলছে না। দলের সভাপতি বদরুদ্দিন আজমল চলতি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকিও দেন। পাশাপাশি, বিজেপি দাবি করে, বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে আসা সব হিন্দুদের মানবিক ভিত্তিতে ভারতে আশ্রয় দেওয়া ও নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের সময়সীমা মানলে চলবে না। রাজ্যের আটটি উপজাতির যৌথ সাহিত্য সভা দাবি করে, ভূমিপুত্র উপজাতিদের ক্ষেত্রে কোনও ভিত্তিবর্ষ রাখা চলবে না। বরাকের চার কংগ্রেস বিধায়ক একজোট হয়ে দাবি করেন, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা অনুযায়ী বরাকের নাগরিক পঞ্জি সংশোধন করতে হবে। তাঁদের দাবি ছিল, বরাকের বহু পুরনো বাসিন্দার কাছেই ১৯৭১ সালের আগেকার কোনও প্রামাণ্য নথি নেই। কিন্তু তার জন্য তাঁদের বহিরাগত বলে চিহ্নিত করে দেওয়া চলবে না।

আজ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব এমজিভিকে ভানু, স্বরাষ্ট্র কমিশনার প্রতীক হাজেলা ও সুইটি চাংসানকে নিয়ে এনআরসি বিষয়ে বিশদ আলোচনায় বসেন। চা-জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে জানান: ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তাঁদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করার সব রকম ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করবে। বিভিন্ন কারচুপির অভিযোগ নিয়ে জেলাশাসকদেরও সতর্ক করেন গগৈ। ফর্মের জটিলতা নিয়ে চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী হাজেলাকে নির্দেশ দিয়েছেন, ফর্ম পূরণে সাহায্য করার জন্য সব পরিবারে যেন সরকারের প্রতিনিধি হাজির হয়। পাশাপাশি, অসমের এনআরসি নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হবে কী না তাও রেজিস্ট্রার-জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার কাছ থেকে স্পষ্ট করে জেনে নেওয়ার নির্দেশ দেন হাজেলাকে।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার বিরোধিতা করেছে আসু, অগপ। তাদের বক্তব্য, আগামী বছরের ভোটের দিকে তাকিয়েই তরুণ গগৈ এই রাজনৈতিক চালটি চেলেছেন। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অসম পাবলিক ওয়ার্কস (এপিডব্লিউ) মামলা করেছে। তাদের তরফে অভিজিত্ শর্মা প্রশ্ন তুলেছেন, বিষয়টি উচ্চতম আদালতের বিচারাধীন। সুতরাং এ বিষয়ে তরুণ গগৈ কিছু বলার কে? কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লেখারও কোনও অর্থ নেই বলে তিনি মনে করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajibaksha rakshit Tarun Gogoi Assam NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE