তখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রী নন। পৃথক রাজ্য তেলঙ্গানার জন্য লড়াই করছেন। সেই সময়ে প্রচার অভিযানে বেরিয়ে চন্দ্রশেখর রাও জনতার দরবারে দাঁড়িয়ে বারংবার ‘মানত’ করতেন। কী সেই মানত? নয়া রাজ্যের মিশন সম্পূর্ণ হলে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানার বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দেবেন। পাশাপাশি ওই সব মন্দিরে আরাধ্য দেবদেবীদের ‘উপহার’ দেবেন বহুমূল্য অলঙ্কার।
এখন তিনি তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে ২০১৪তে নয়া এই রাজ্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু, মানতের কথা ভোলেলনি তত্কালীন জননেতা চন্দ্রশেখর। সরকার গড়েই তিনি বিভিন্ন মন্দিরে সপরিবার এবং সপারিষদ ‘পুজো’ দেওয়া শুরু করেন। শুধু পুজো দেওয়াই নয়, মানত পূরণ করতে কোটি কোটি টাকার অলঙ্কারও তিনি মন্দিরে ‘নিবেদন’ করছেন। এবং গোটাটাই সরকারের খরচে। অর্থাত্ আয়করদাতাদের টাকায়। আগামী সপ্তাহে তাঁর যাওয়ার কথা কুরভীতে। সেখানকার বীরভদ্রস্বামীর মন্দিরে অলঙ্কার ভেট দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন, ‘গুজরাতের গাধা’দের জন্য নাম না করে বিগ-বিকে প্রচারে বারণ অখিলেশের
সেই তালিকায় এ বার জুড়ল তিরুপতি মন্দিরের নাম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরিবার এবং তাঁর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের নিয়ে তিরুমালা যাবেন চন্দ্রশেখর। সেখানে বুধবার পুজো দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার গয়নাও ‘নিবেদন’ করবেন তিনি। তিরুপতি মন্দিরে আরাধ্য বালাজির একটি মুকুট এবং পদ্মাবতীর জন্য একটি নথ— সব মিলিয়ে যার দাম পড়েছে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা! সরকারি খরচে তৈরি ওই অলঙ্কার মুখ্যমন্ত্রী দেবতাকে ‘নিবেদন’ করবেন।
এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত অক্টোবরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের ১২ কিলোগ্রাম ওজনের একটি মুকুট ‘নিবেদন’ করেছিলেন বরঙ্গলের ভদ্রকালী মন্দিরে। তিরুমালার ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে মুকুট ও নেকলেস এবং বিজয়ওয়াড়ার কনকদুর্গা মন্দিরে দিয়েছেন দেবাতার নাকের একটি নথ। সেখানেও খরচ করেছিলেন কয়েক কোটি টাকা।
চন্দ্রশেখর রাও।

তবে, জনগণের দেওয়া করের টাকা এ ভাবে খরচ করে মোটেও অনুতপ্ত নন চন্দ্রশেখর। তিনি জানিয়ে দেন, ওই টাকা মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল এবং বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর দেওয়া অনুদান থেকেই খরচ করা হয়। এই অলঙ্কার সংক্রান্ত বিষযে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সরকারি ভাবে এই অলঙ্কার তৈরির বরাত পেয়েছেন তেলঙ্গানার বিশিষ্ট এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী।
আরও পড়ুন, প্রেম ভাঙার প্রতিশোধ! প্রেমিকার নগ্ন ছবি টুইট করলেন প্রাক্তন প্রেমিক
সরকারের প্রধান হওয়ার পরে শুধু এই ‘গয়না নিবেদন’ই নয়, অন্য অনেক ক্ষেত্রেই করদাতাদের টাকা বেহিসাবি ভাবে খরচের অভিযোগ উঠেছে চন্দ্রশেখরের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে অন্যতম, হায়দরাবাদ শহরের প্রাণকেন্দ্রে নয় একর জমির উপর গড়ে তোলা মুখ্যমন্ত্রীর বিপুল আবাসন। সেখানে রয়েছে ২৫০ জন দর্শকাসনের একটি বিনোদন হল। বেশ কিছু সিনিয়র সরকারি অফিসারকে সেখানে নিয়ে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে তাঁদের দফতরও। ওই আবাসন তৈরির প্রাথমিক খরচা ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু, পরে যখন নির্মাণ সংস্থা বিল জমা দেয়, তখন দেখা যায় বিলের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা।