Advertisement
E-Paper

ভোটের ভাবনায় চুপ দুই মুখ্যমন্ত্রীই

প্রশ্ন উঠছিল, প্রধানমন্ত্রী চুপ কেন। গত কাল লখনউয়ে বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতার সময়ে আবেগ-অস্ত্রে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন নরেন্দ্র মোদী।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৯
চন্দ্রশেখর রাও ও চন্দ্রবাবু নায়ডু

চন্দ্রশেখর রাও ও চন্দ্রবাবু নায়ডু

প্রশ্ন উঠছিল, প্রধানমন্ত্রী চুপ কেন। গত কাল লখনউয়ে বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতার সময়ে আবেগ-অস্ত্রে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা নিয়ে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও এখনও মৌনী। রোহিতের জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশে। নীরব সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুও।

রোহিতের মৃত্যু নিয়ে আন্দোলন শনিবারও পুরোমাত্রায় চলেছে। আজ অনশনের চতুর্থ দিনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সাত পড়ুয়া। তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মুহূ্র্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। নীরবতা ভেঙে আজ মুখ খুলেছেন রোহিতের মা রাধিকাও। বলেছেন, “উপাচার্যের পদত্যাগ ও দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ধর্না থেকে সরছি না। যত দিন না সুবিচার পাচ্ছি, তত দিন ছাত্রদের সঙ্গে আমি ও আমার পরিবার ধর্না চালিয়ে যাব।” সোমবার পদযাত্রারও ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তাঁরা আদৌ খুশি নন। তাঁদের দাবি, রোহিতকে ভারতমাতার সন্তান বলে তাঁকে অপমান করেছেন মোদী। কারণ, তাতে রোহিতের গায়ে বিজেপির রং লাগানোর চেষ্টা রয়েছে। রোহিত ও অনগ্রসর শ্রেণির অন্য পড়ুয়ারা বরাবরই বিজেপির হিন্দুত্ব ও মনুবাদী রাজনীতির বিরোধী। মোদীর বক্তব্যে তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থেরই প্রতিফলন হয়েছে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

রোহিতের আত্মহত্যার সাত দিন পরেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করাতেও বেড়েছে পড়ুয়াদের ক্ষোভ। আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতা জি এষারের কথায়, “এখানে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা এত বড় একটি আন্দোলনে নামা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার চুপ।’’ রোহিতের বন্ধুদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের নির্দেশেই তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ ধীরে চলো নীতি নিয়েছে। দোষীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বদলে রোহিত দলিত ছিল কি না তা প্রমাণেই বেশি ব্যস্ত পুলিশ।

হায়দরাবাদের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে জাতীয় স্তরে। প্যাঁচে পড়েছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আজ বিষয়টি নিয়ে কলকাতায় মুখ খুলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও। তাঁর কথায়, ‘‘হায়দরাবাদে ছাত্রের মৃত্যু দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু গোটা দেশে দলিতদের অধিকারের দাবিতে যে লড়াই চলছে তা ইতিবাচক।’’ মুম্বইয়ে বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের অফিসে হামলা হয়েছে আজ। সেই ঘটনা রোহিত-কাণ্ডের প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

কিন্তু যে ঘটনায় বিজেপিকে প্যাঁচে ফেলতে প্রায় সব বিরোধী দল তৎপর, তা নিয়ে চন্দ্রশেখর রাও চুপ কেন? রাজনৈতিক সূত্রে খবর, এই প্রশ্নের জবাব খুব সহজ। সামনেই হায়দরাবাদ শহর ও শহরতলি এলাকায় পুরভোট। গোটা রাজ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ দলিত। কিন্তু হায়দরাবাদ ও তার আশপাশের এলাকায় উচ্চবর্ণের প্রভাব বেশি। মূলত উচ্চবর্ণের মানুষই পুরভোটে নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে চলেছেন। এই কারণে ভোটের মুখে দলিত ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে বেশি সক্রিয়তা দেখালে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণেই এই কৌশলগত নীরবতা। তেলঙ্গানা আন্দোলনের সময়ে দলিত নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনগ্রসর শ্রেণির সমর্থন পেয়েছিলেন চন্দ্রশেখর রাও। সেই প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি এখনও। ফলে দলিত ভোট তিনি আর পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের। তাই উচ্চবর্ণের ভোট হারাতে রাজি নন তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির প্রধান।

তা ছাড়া চন্দ্রশেখরের অন্যতম প্রতিপক্ষ এমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি রোহিত কাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন। ফলে পাল্টা চালে রোহিত প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলার রাজনীতি করছেন চন্দ্রশেখর রাও। চন্দ্রশেখরের ঘনিষ্ঠেরা যুক্তি দিচ্ছেন, এটি একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে নিয়ন্ত্রণের রশি রয়েছে দিল্লির হাতে। তাই বিষয়টিতে নাক গলাতে চাইছে না রাজ্য।

প্রশ্ন উঠেছে চন্দ্রবাবু নায়ডুকে নিয়েও। রোহিতের জন্মভূমি অন্ধ্র। কিন্তু সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবুও নীরব। রাজনীতিকেরা বলছেন, এখানেও ভোটের অঙ্ক। চন্দ্রবাবু বিজেপির শরিক। পুরভোট সামনে। তাই ঝুঁকি নিতে চান না নায়ডুও।

কেউ কেউ রোহিতের মৃত্যু নিয়ে সরব হয়ে ভোট পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কেউ কেউ নীরব থেকে।

national news telangana cm chandrashekar rao rohith vemula
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy