Advertisement
E-Paper

উদ্ধারে ব্যস্ত সেনা, হানার ছক জঙ্গিদের

বন্যার সুযোগ নিয়ে কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক জঙ্গি হামলার ছক কষছে পাকিস্তান। সেনার একাংশ এখনও ব্যস্ত উদ্ধারের কাজে। রাজ্যের একাধিক দুর্গম জায়গায় আটকে বহু সাধারণ মানুষ। আপাতত তাই উদ্ধারকাজের ওপরেই জোর দিচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। ফলে কিছুটা হলেও ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৫
বন্যায় আটকদের উদ্ধার করতে নৌকা নিয়ে অভিযানের প্রস্তুতি সেনার। বুধবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই।

বন্যায় আটকদের উদ্ধার করতে নৌকা নিয়ে অভিযানের প্রস্তুতি সেনার। বুধবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই।

বন্যার সুযোগ নিয়ে কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক জঙ্গি হামলার ছক কষছে পাকিস্তান।

সেনার একাংশ এখনও ব্যস্ত উদ্ধারের কাজে। রাজ্যের একাধিক দুর্গম জায়গায় আটকে বহু সাধারণ মানুষ। আপাতত তাই উদ্ধারকাজের ওপরেই জোর দিচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। ফলে কিছুটা হলেও ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা। এরই মধ্যে জঙ্গিদের কথাবার্তায় আড়ি পেতে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ভারতীয় সেনা ও আধা সামরিক বাহিনী স্থানীয় মানুষদের উদ্ধারে হাত লাগানোর সুযোগ নিয়ে একাধিক জায়গায় আক্রমণ শানাতে নির্দেশ দিয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, নিরাপত্তাবাহিনীর অসতর্কতার সুযোগে হামলা চালালে একাধারে যেমন জঙ্গিদের মনোবল বাড়বে তেমনই ক্ষমতায় আসা পিডিপি-বিজেপির জোট সরকারকেও বার্তা দিতে পারবে জঙ্গিরা।

সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে বন্যার সুযোগ নিয়ে লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদের মতো কট্টর জঙ্গি সংগঠনগুলোকে কাশ্মীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেনা ছাউনি ও রাজনৈতিক নেতাদের উপর হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছে আইএসআই। জঙ্গি নিশানায় পুঞ্চ জেলও রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। ওই জেলে আটক জঙ্গিদের মুক্ত করতেই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে অনুমান করছে নর্থ ব্লক। সাধারণত মার্চের শেষে কাশ্মীরে শীত শেষ হতেই অনুপ্রবেশ অনেক বেড়ে যায়। বাড়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কাও। গোয়েন্দাদের মতে, বরফ গলতে শুরু করায় নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশের জন্য এই সময়কেই চিরাচরিত ভাবে বেছে আসছে জঙ্গিরা। এ বার হঠাত্‌ করে আসা বন্যার ফায়দাও পুরোদমে তুলে নিতে চায় অনুপ্রবেশকারীরা।

গত মাসেই কাশ্মীরের দু’টি স্থানে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণরেখার দু’ধারে ছ’টি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যেরা সক্রিয় রয়েছে। তাদের মধ্যে যেমন রয়েছে জইশ, লস্কর বা হিজবুলের মতো জঙ্গিরা তেমনই আল বদর বা তানিমের মতো অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত জঙ্গিরাও এখন পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে তত্‌পর রয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিপুল ভাবে সাড়া দিয়েছিলেন কাশ্মীরের মানুষ। সেটা ভাল ভাবে নেয়নি পাকিস্তান। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, নতুন সরকার আসার পর-পরই একের পর এক হামলা চালিয়ে প্রশাসনকে অস্থির করে তুলতে চায় আইএসআই। এর জন্য তিন ভাবে আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা।

প্রথম তালিকায় রয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিশেষ করে যাঁরা নরমপন্থী মনোভাবের, তাঁদের চিহ্নিত করে হামলা চালানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জইশ-ই মহম্মদ গোষ্ঠীকে। অতীতেও দেখা গিয়েছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন এমন পঞ্চায়েত প্রধানদের বেছে বেছে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলছে, গণতন্ত্রকামী নেতাদের হত্যা করে কাশ্মীরে আগের অশান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাইছে পাকিস্তান। যাতে আগামী দিনে নির্বাচন প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়া যায়। সন্ত্রাসবাদীদের দ্বিতীয় লক্ষ্য, সেনা ছাউনি ও জেল। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মূলত রাজৌরি এলাকার একাধিক সেনা ছাউনি ও পুঞ্চের জেলে হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তেহরিকি জেহাদ ও আল বদরের মতো অখ্যাত জঙ্গি গোষ্ঠীকে। গত মাসেই সাম্বার সেনা ছাউনিতে হামলা চালায় দুই জঙ্গি। ওই হামলা বৃহত্তর পরিকল্পনার অঙ্গ বলেই মনে করছে দিল্লি।

তা ছাড়া, সেনার অবাধ গতিবিধি রুখতে জাতীয় সড়কের বিভিন্ন প্রান্তে বড় মাপের বিস্ফোরণ ঘটানোর ছকও কষছে জঙ্গিরা। লক্ষ্য, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কাজের জন্য প্রচুর আরডিএক্স সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকাতে সক্রিয় রয়েছে আইএসআই।

আড়ি পেতে গোয়েন্দারা জেনেছেন, কাশ্মীর-সহ গোটা ভারতে জঙ্গি তত্‌পরতা বাড়াতে দু’এক মাসের মধ্যেই কয়েকশো জঙ্গিকে ভারতে প্রবেশ করাতে চায় পাকিস্তান। সেই জন্য মাস দেড়েক আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়েছিলেন জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ সইদ। গোয়েন্দারা জেনেছেন, গত দশ দিনে পাক অধিকৃত একাধিক বর্ডার আউট পোস্টে লস্করের অন্যতম নেতা মহম্মদ হুসেনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, জেহাদিদের অনুপ্রাণিত করতে এবং ভারতে কী ভাবে প্রবেশ করে হামলা চালানো যায় সেই রণকৌশল ঠিক করতেই বড় মাপের জঙ্গি নেতারা ঘন-ঘন সীমান্ত সফরে যাচ্ছেন।

ফের বৃষ্টি কাশ্মীরে

গত দু’দিনে অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছিল আকাশ। কিন্তু কাল রাত থেকে ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে কাশ্মীরে। প্রশাসনের বক্তব্য, বন্যার আশঙ্কা আর নেই। ঝিলম এখন শান্ত। জলস্তরও নেমেছে অনেকটা। এক সরকারি কর্তা যদিও জানান, আগামী দু’দিন টানা বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। ফলে ঝিলমের জলস্তর ফের বাড়তে পারে। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন তৈরি...। প্রয়োজনে বন্যাবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলো থেকে দুর্গতদের উদ্ধার করে এনে রাখার জন্য অস্থায়ী শিবিরও প্রস্তুত রয়েছে।’’ এ দিকে, সরকার তার কাজ ঠিক মতো করছে না, এই অভিযোগ তুলে বিরোধীরা আজ জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখান। ‘দুর্গতদের হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছচ্ছে না’, স্লোগান তুলে মিছিল করে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান তাঁরা। বিক্ষোভের জেরে ১০ মিনিট মুলতবি থাকে বিধানসভার কাজকর্ম।

Kashmir Jammu Terror Jammu and Kashmir Jhelum river
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy