Advertisement
০২ মে ২০২৪

বন্ধ গোয়াল, অস্ত্র হাতে সীমান্তে চলল সেনা

শুধু খামার নয়, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সেনার ডাক পরিষেবা, সিগন্যালিং ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে থাকা যে সব বাহিনীর প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে, তাদের হয় বন্ধ করে দেওয়া হবে, না হলে অন্য কোনও শাখার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৫:৩৬
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর জমানায় গোরক্ষার বাড়বাড়ন্ত হলেও গরুর যত্নআত্তির দায়িত্বে থাকা সেনা জওয়ানদের আর আটকে রাখা হবে না। এত দিন যারা সেনাবাহিনীর পশুখামারে গরু-মোষের দেখভাল করতেন, এ বার তাদের হাতে বন্দুক ধরিয়ে সীমান্তে পাঠানো হবে।

শুধু খামার নয়, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সেনার ডাক পরিষেবা, সিগন্যালিং ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে থাকা যে সব বাহিনীর প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে, তাদের হয় বন্ধ করে দেওয়া হবে, না হলে অন্য কোনও শাখার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৫৭ হাজার সেনা অফিসার ও জওয়ানকে অপ্রয়োজনীয় শাখা থেকে তুলে নিয়ে সীমান্ত রক্ষায় বা সন্ত্রাস দমনের কাজে লাগানো হবে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি, ‘‘স্বাধীনতার পরে সম্ভবত প্রথম এই ধরনের সংস্কার হল।’’ গত কয়েক মাসে পাকিস্তানের পাশাপাশি চিনের সেনার সঙ্গেও ভারতীয় সেনার সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই সীমান্তে আরও সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেটলি অবশ্য দাবি করেছেন, ডোকলাম বা অন্য কোনও ঘটনার সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের সম্পর্ক নেই। প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিল।

আরও পড়ুন: পানাগড়িয়ার বিদায়ী তোফায় বিদ্ধ মোদী

প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের ফলে সব দেশই এখন সেনাবাহিনীর জওয়ানের সংখ্যা কমিয়ে সমরাস্ত্র, প্রযুক্তিতে বেশি জোর দিচ্ছে। ব্যতিক্রম ছিল ভারত। ৩৮ হাজার অফিসার ও ১১.৩৮ লক্ষ জওয়ান নিয়ে ভারতীয় সেনা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাহিনী। তবে গত ডিসেম্বরে সামরিক বাহিনীর কম্যান্ডারদের সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তাঁর সরকার এই বিষয়ে অন্য দেশের পথেই হাঁটতে চাইছে। মোদীর যুক্তি ছিল, ‘‘শক্তিশালী দেশগুলি বাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে প্রযুক্তিতে জোর দিচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনও বাহিনী বাড়িয়ে চলেছি। একই সঙ্গে যুদ্ধাস্ত্রের আধুনিকীকরণ আর বাহিনী বাড়ানো কঠিন, অপ্রয়োজনীয়ও।’’

বাহিনীকে ঢেলে সাজতে গত মার্চে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি বি শেখতকরের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়। মেদ ঝরিয়ে, বেতনের খরচ কমিয়ে, সেনাকে আরও দক্ষ করে তুলতে ৯৯ দফা সুপারিশ করে কমিটি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রথম দফায় তারই ৬৫ দফা সুপারিশ মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ তা মন্ত্রিসভায় জানানো হয়েছে। অবশ্য এ সব কার্যকর করতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।

সেনাপ্রধান থাকাকালীন জেনারেল ভি পি মালিক জওয়ানদের সংখ্যা কমিয়ে, খরচ বাঁচিয়ে তা দিয়ে যুদ্ধাস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন। সে সময় শেখতকরও ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সেনা-অন্দরে কোনও কোনও মহলের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এর পরেই কার্গিল ঘটে।

জেটলির দাবি, এতে সীমান্তে নিযুক্ত একজন সেনাকে পিছন থেকে সাহায্য করার জন্য অনেক কম জওয়ানের দরকার হবে। সেনা কর্তাদের যুক্তি, ৩৯টি পশুখামার রয়েছে। ১২টি ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলিও বন্ধ করে দিয়ে গরু-মোষগুলি ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ’-এর হাতে তুলে দেওয়া হবে। বাহিনীর জন্য দুধ বাজার থেকেই কেনা হবে। সিগন্যাল, রেডিও মনিটরিং কোম্পানি, এয়ার-সাপোর্ট সিগন্যাল রেজিমেন্ট, অর্ডিন্যান্স ডিপো, ভেহিকল ডিপোর মতো শাখাগুলিকেও নতুন ভাবে সাজানো হবে। যাতে কম কর্মী দিয়েই কাজ হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE