উর্জিত পটেল
বৈঠক তো প্রতি মাসেই হয়। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ডের বৈঠক, তাতে অর্থনীতির খটোমটো আলোচনা— তা নিয়ে ক’জন আর মাথা ঘামায়? এ বার সেই ‘বোরিং’ বৈঠক ঘিরেই ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচের উত্তেজনা!
সোমবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ডের বৈঠক বসছে মুম্বইয়ে। নামেই বৈঠক। আসলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এক দিকে নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং আরএসএস। অন্য দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল এবং তাঁর আস্থাভাজন ডেপুটি গভর্নরেরা। দু’শিবিরই চায় শেষ কথা বলতে। লোকসভা ভোটের আগে অর্থনীতিতে রোশনাই ছড়াতে মোদী সরকার চাইছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সরকারের কথা মতো চলুক। উল্টো দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি, সরকার তাদের কাজে খবরদারি করতে পারে না। অর্থনীতির স্বার্থে তারা বরাবর যে রকম স্বাধীন ভাবে চলেছে, সে ভাবেই চলতে চায়।
সোমবারের ম্যাচের শেষে এক জনেরই উইকেট পড়ার আশঙ্কা। তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল। বৈঠকে মীমাংসা না হলে, মোদী সরকার আইনের সাহায্যে নিজের মতামত পুরোপুরি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপিয়ে দিতে চাইলে, উর্জিতের সামনে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। কিন্তু তিনি আচমকা পদত্যাগ করলে শেয়ার বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে মোদী-জেটলি তা চাইবেন না।
আরও পড়ুন: কেশরীকে টেনে খোঁচা কংগ্রেসকে
গত ২৩ অক্টোবরের বৈঠকে প্রথম ঠোকাঠুকি লাগে। বিবাদের বিষয় মূলত তিনটি। মোদী সরকার চাইছে, অনাদায়ী ঋণের ভারে জর্জরিত সরকারি ব্যাঙ্কগুলির নতুন ঋণ বিলির উপরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কড়া নিষেধাজ্ঞা আলগা করা হোক। যাতে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী তো বটেই বড় শিল্পপতিদেরও ঋণ পেতে অসুবিধা না হয়। ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি নগদ অর্থের অভাবে ঋণ দিতে পারছে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের নগদ জোগাক। যাতে বাজার চাঙ্গা থাকে। সর্বোপরি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের মুনাফার ভাগের পাশাপাশি তহবিলে জমানো পুঁজি থেকে সরকারি কোষাগারে আরও টাকা পাঠাক। যাতে লোকসভা ভোটের আগে মোদী সরকার দরাজ হাতে খয়রাতি করতে পারে।
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর কোনওটাই মানতে চায়নি। ফলে আট ঘণ্টার বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র বের হয়নি। এর পরেই শুরু হয় প্রকাশ্যে তর্কাতর্কি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্যরা সরকারি খবরদারির বিপদ নিয়ে সতর্ক করতেই আসরে নামেন খোদ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও অর্থ বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ। তাঁরা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভুলত্রুটি তুলে ধরতে থাকেন। গর্গ এবং ব্যাঙ্ক পরিষেবা সচিব রাজীব কুমার সোমবারের বৈঠকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে ফের মাঠে নামবেন।
কিন্তু অস্বস্তির কাঁটা আসলে অন্য একজন। আরএসএস-ঘনিষ্ঠ, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা স্বামীনাথন গুরুমূর্তি। সম্প্রতি তাঁকে সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডে মনোনীত করেছে। স্বদেশি অর্থনীতির প্রবক্তা গুরুমূর্তি বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের কাজ গভর্নরকে পরামর্শ দেওয়া। রোজকার কাজে নাক গলানো না। কিন্তু গুরুমূর্তি তথা সঙ্ঘ-নেতৃত্ব চান, সরাসরি নজরদারি।
সোমবারের যুদ্ধের আগে দু’শিবিরই অন্তত প্রকাশ্যে উত্তেজনার পারদ কমানোর চেষ্টা করেছে। উর্জিত পটেল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন বলে সূত্রের খবর। ১৮ সদস্যের বোর্ডে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন, অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি, মনীশ সাভারওয়াল, ভারত দোশীর মতো কর্পোরেট ব্যক্তিত্বরা রয়েছেন। তাঁরা কী ভূমিকা পালন করেন, সেটাও দেখার।
তবে সরকার যে নিজেদের জায়গায় অনড়, তার প্রমাণ শনিবার রাতেই দিয়েছেন অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেখতে হবে, ঋণের জোগান, নগদের জোগান যাতে অব্যাহত থাকে এবং দ্রুত আর্থিক বৃদ্ধির হারও বজায় থাকে।’’
সরকারের মনোভাব বুঝে সরব হয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর অভিযোগ, বেহাল অর্থনীতিকে চকচকে দেখাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর মোদী সরকার যে চাপ দিচ্ছে, আগামী দিনে তার পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে। রবিবার একগুচ্ছ টুইটে চিদম্বরম বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিল ‘দখল’ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।’’ দেশের আর্থিক স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যে ভাবে পুঁজিপুতিদের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে, তারও সমালোচনা করেছেন তিনি।
সরকারি সূত্রের মতে, অন্তত দু’টি বিষয়ে সমাধানসূত্র মিলতে পারে। এক, দেনাগ্রস্ত সরকারি ব্যাঙ্কগুলির নতুন ঋণ বিলির শর্ত শিথিল করতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। দুই, ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নগদ জোগানোর পথ খুলতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সরকারি কথা শুনতে বাধ্য করতে সরকারের হাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ৭ নম্বর ধারা রয়েছে। কিন্তু ওই ধারা এ যাবৎ কোনও সরকার কাজে লাগায়নি। মোদী সরকার ওই আইন কাজে লাগাতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy