নেতাজি সংক্রান্ত ১০০টি গোপন ফাইলের মধ্যে একটির ডিজিটাল সংস্করণ পড়ছেন নরেন্দ্র মোদী। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
কৌতূহল ছিল। আবেগও ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত ১০০টি গোপন ফাইল আজ দিনের আলো দেখলেও তাঁর মৃত্যুরহস্যে নতুন করে কোনও আলোকপাত ঘটল না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতীয় লেখ্যাগারে ফাইলগুলি প্রকাশ করার কিছু ক্ষণ পরেই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী কার্যত স্বীকার করে নেন, ওই সব ফাইলে এমন কোনও তথ্য নেই যাতে মনে হতে পারে, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্টের পরেও নেতাজি বেঁচে ছিলেন। ওই দিন জাপানের তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি মারা যান বলেই অনেকে মনে করেন। আজ প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, তার পর বিভিন্ন সময়ে দিল্লির সরকারও নেতাজিকে মৃত বলেই ধরে নিয়েছে।
নেতাজিকে নিয়ে এর আগে দু’টি ফাইল প্রকাশ করেছিল মোদী সরকার। তার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত ৬৪টি গোপন ফাইল প্রকাশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রকাশিত ফাইলগুলিতে বিমান-দুর্ঘটনার তত্ত্ব অস্বীকার করার মতো কিছু নেই। কিন্তু নেতাজি ঘিরে আমজনতার আবেগের কারণে রাজনীতির ময়দানে চাপ বাড়ছিল মোদীর উপরে।
সেই কারণে কেন্দ্রের হাতে থাকা ফাইল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা দীর্ঘায়িত করতে দফায় দফায় ফাইল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। আজ দিল্লিতে মোদী ১০০টি ফাইল প্রকাশ করা মাত্রই সেগুলি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। সন্ধে পর্যন্ত এক লক্ষের বেশি ‘হিট’ হয়েছে সেখানে।
কিন্তু ফাইলে আছেটা কী? সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মার স্বীকারোক্তি, ‘‘ফাইলগুলিতে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ আছে যে, বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন নেতাজি।’’ ঠিক এই কথাটিই নেতাজির দাদা সুরেশচন্দ্র বসুকে ১৯৬২ সালে লিখেছিলেন জওহরলাল নেহরু। যেখানে তিনি বলেছিলেন, নেতাজির মৃত্যুর কোনও সুনির্দিষ্ট ও প্রত্যক্ষ প্রমাণ তাঁর কাছে নেই ঠিকই। কিন্তু পারিপার্শ্বিক সমস্ত প্রমাণ বলছে, নেতাজির মৃত্যু হয়েছে। বহু দিন আগে শাহনওয়াজ কমিটির রিপোর্টও একই কথা বলেছিল। অন্য একটি ফাইলে দেখা যাচ্ছে, নেহরু নিজের মন্ত্রকের চিঠিপত্রেও নেতাজির স্ত্রীকে ‘বিধবা’ বলে উল্লেখ করেছেন। কাজেই নেতাজির মৃত্যু নিয়ে নেহরুর মনে যে সংশয় ছিল না, ওই ফাইলই তার প্রমাণ বলে অনেকের মত।
ফাইল এ-ও বলছে, নেতাজির কন্যা অনিতা বসু পাফকে ভাতা দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন নেহরু। কংগ্রেসের তরফে প্রথমে নেতাজি-জায়াকেই ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তিনি রাজি না হওয়ায় বার্ষিক ৬ হাজার টাকার ওই ভাতা দেওয়া হতো অনিতাকে। ১৯৬৫ সালে অনিতার বিয়ের পর সেই ভাতা বন্ধ হয়।
এই একশোটি ফাইলের মধ্যে শুধু যে ব্রিটিশ আমলেরই ফাইল রয়েছে তা নয়। রয়েছে আশি-নব্বইয়ের দশকের ফাইলও। দেখা যাচ্ছে, জাপানের রেনকোজি মন্দির থেকে নেতাজির ‘চিতাভস্ম’ ফিরিয়ে আনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হয়েছে সরকারে। নরসিংহ রাওয়ের আমলে নেতাজিকে ‘মরণোত্তর’ ভারতরত্ন দেওয়ার তোড়জোড়ও হয়েছিল।
নেতাজির অন্তর্ধানের তদন্তে গঠিত প্রথম দু’টি কমিশনের বক্তব্য ছিল, তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনাতেই মারা গিয়েছেন নেতাজি। কিন্তু তৃতীয় মুখোপাধ্যায় কমিশনের দাবি ছিল, দুর্ঘটনার পরেও বেঁচে ছিলেন নেতাজি। নেতাজির পরিবারের একটা বড় অংশের কাছেও পাখির চোখ হল, অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচন। সে নিয়ে পরিবারে দ্বিমতও রয়েছে। কৌতূহল এবং আবেগ রয়েছে আমজনতার মনেও। কিন্তু সে সব নিরসনের কোনও ইন্ধন অন্তত এ দিন প্রকাশিত তথ্যে নেই।
মোদী জমানায় প্রকাশিত দু’টি ফাইলে দেখা গিয়েছিল, নেতাজির পরিবারের উপরে নজরদারি চালাত নেহরুর সরকার। এ বারের ফাইলে তেমন কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত নজরে পড়েনি। তবে ইতিহাসবিদদের কারও কারও দাবি, একটি ফাইলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলিকে লেখা চিঠিতে নেতাজিকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে সম্বোধন করেছেন নেহরু। ফলে ঈষৎ অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে কংগ্রেসের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy