Advertisement
০৭ মে ২০২৪

দু’টি বাদে মমতার সব রেল কারখানাই শিকেয়

শিলান্যাসেই শুরু। সেখানেই বোধহয় শেষ! সাধের হাসপাতাল ‘প্রকল্প’ আগেই বাতিল হয়েছে। এ বার কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ঘোষিত রেল কারখানাগুলির পালা? ইঙ্গিত কিন্তু দিতে শুরু করেছে রেল মন্ত্রক। বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে রেলের প্রকল্পগুলির অগ্রাধিকারের যে তালিকা রাখা হয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ঘোষিত মাত্র দু’টি বড় মাপের প্রকল্প স্থান পেয়েছে। কাঁচরাপাড়া ও আনাড়া (আদ্রা)-র কারখানা।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০২
Share: Save:

শিলান্যাসেই শুরু। সেখানেই বোধহয় শেষ!

সাধের হাসপাতাল ‘প্রকল্প’ আগেই বাতিল হয়েছে। এ বার কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ঘোষিত রেল কারখানাগুলির পালা? ইঙ্গিত কিন্তু দিতে শুরু করেছে রেল মন্ত্রক। বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে রেলের প্রকল্পগুলির অগ্রাধিকারের যে তালিকা রাখা হয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ঘোষিত মাত্র দু’টি বড় মাপের প্রকল্প স্থান পেয়েছে। কাঁচরাপাড়া ও আনাড়া (আদ্রা)-র কারখানা।

তিনি যে আগু-পিছু ভাবেন না, এমন অভিযোগ নতুন নয়। প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা, বিনিয়োগের উৎস, জমি-সহ পরিকাঠামোগত জোগান কী হবে, তা না দেখেই ইউপিএ আমলে তিনটি রেল বাজেটে বাংলার জন্য একের পর এক প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেবল পশ্চিমবঙ্গেই ঘোষিত রেল কারখানার সংখ্যা ছিল ষোলো। সঙ্গে অগুনতি আদর্শ ও বিশ্বমানের স্টেশনের পরিকল্পনা, ডবল লাইনের একাধিক প্রকল্প, নতুন লাইন নির্মাণ, নতুন টার্মিনাল- কত কি! রেল কর্তারা বারবার আপত্তি করেছেন, সারবত্তাহীন প্রকল্পে ছাড়পত্র দিতে চায়নি যোজনা কমিশন। প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অর্থ মন্ত্রক। তবুও দমেননি মমতা। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে একের পর এক ঘোষণা করেই থেমে থাকেননি তিনি, প্রকল্পের শিলান্যাস করেই বলতেন, “কারখানা করে দিলাম!” বিরোধীরা সে সময় নাম দিয়েছিলেন ‘শিলা দিদি’। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর আজ প্রশ্ন, “কারখানাগুলি এখন কোথায়? বাস্তবে তো কিছু দেখা যাচ্ছে না।”

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একাধিক রেলমন্ত্রীর জনমোহিনী ঘোষণার পরে এখন কঠিন সিদ্ধান্তের পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিচ্ছে রেল। মন্ত্রক ঠিক করেছে, এমন প্রকল্পগুলিকেই বাস্তবায়িত করা হবে, যেগুলির ভবিষ্যৎ রয়েছে। বাকি প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া হবে। এক রেলকর্তার মন্তব্য, “আমরা এখন একটি বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছি। রেলকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে হলে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। সরকারি বিনিয়োগে বড় মাপের প্রকল্প তৈরির দিন শেষ। টানতে হবে বেসরকারি বিনিয়োগ। আর হাতে যা টাকা রয়েছে, তা ব্যবহার করতে হবে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য ও সুরক্ষায়। আর রাস্তা খোলা নেই।”

হবে নাই বা কেন! জনমোহিনী ঘোষণার চাপে হাঁসফাঁস অবস্থা রেলের। যত প্রকল্প বকেয়া রয়েছে, তা শেষ করতে দরকার প্রায় পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা। অথচ রোজকার খরচ চালাতেই ভাঁড়ার খালি। ভরসা বেসরকারি বিনিয়োগই। কিন্তু সেখানেও গেরো। লাল ফিতের জটিলতা, নীতিপঙ্গুত্বের কারণে টাকা ঢালতে আগ্রহী নন বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। রেলের এই ছবিটি পাল্টাতে এখন সক্রিয় হয়েছেন মন্ত্রী সুরেশ প্রভু।

বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে শুক্রবার বৈঠক ডেকেছিল রেল মন্ত্রক। সেখানে ১৭০ জন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ছিলেন। প্রতিনিধিদের কাছে একটি সংক্ষিপ্ত প্রকল্পের তালিকা তুলে দেন রেলমন্ত্রী। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “যে প্রকল্পগুলি প্রয়োজনীয় ও বেসরকারি বিনিয়োগ হলে লাভের মুখ দেখা সম্ভব, তালিকাটি সে ভাবেই বানানো হয়েছে।” দেশের কয়েক হাজার রেল প্রকল্পকে ন’টি শ্রেণিতে ভাগ করে, বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য মোট ৩৮টি প্রকল্পকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দেশের প্রায় দেড় ডজন বড় মাপের কারখানা। তুল্যমুল্য বিচারের শেষে শিকে ছিঁড়েছে কাঁচরাপাড়ার ইএমইউ কোচ কারখানা ও আনাড়া কোচ মেরামতি কেন্দ্রের। রাজ্যের অন্য প্রকল্পগুলির মধ্যে শুধুমাত্র জায়গা পেয়েছে গোমো থেকে ডানকুনি পর্যন্ত পণ্য করিডর প্রকল্প, কাটোয়া-আজিমগঞ্জ-নলহাটি বৈদ্যুতিকরণ প্রকল্প ও আসানসোলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের।

বাকিগুলির ভবিষ্যৎ? রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, সবই এখন অনিশ্চয়তার গর্ভে। আপাতত ৩৮টি প্রকল্পকেই পাখির চোখ করা হয়েছে। শিল্পপতিদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, রেল মন্ত্রক বিনিয়োগের প্রশ্নে সুস্পষ্ট নীতি নিয়ে আসবে। অন্য প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা ঠিক করতে ফের বৈঠকে বসতে চলেছে মন্ত্রক। কর্তারা মনে করছেন, এমন অসংখ্য প্রকল্প রয়েছে যেগুলি অর্থহীন। স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা পেতে করা হয়েছিল। সেগুলি চিহ্নিত করে প্রয়োজনে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাইফেল চুরি করে চম্পট, কিশোরের গুলিতে হত ১ জম্মু, ৬ ডিসেম্বর: ভোটের মরসুমে জঙ্গি-হামলায় রক্তপাত ভূস্বর্গে নতুন কিছু নয়। কিন্তু শুক্রবার রাতে যে ভাবে জম্মু শহরে কিশোরের গুলিতে প্রাণ হারালেন এক শ্রমিক, তার বিবরণ বিশ্বাস করছেন না অনেকেই। পুলিশের দাবি, ইশফাক নামে বছর চোদ্দোর ওই কিশোর প্রথমে বদর দিন নামে এক কনস্টেবলের কাছ থেকে তাঁর একে-৪৭ রাইফেলটি চুরি করে পালায়। পরে ওই রাইফেল ব্যবহার করেই হামলা চালায় শ্রমিকটির উপর। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম লামগুয়া। ওই কিশোরের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন এক পুলিশ কনস্টেবলও।

জম্মু ও কাশ্মীরে এর আগেও অবশ্য মারমুখী হতে দেখা গিয়েছে কিশোর-তরুণদের। কিন্তু শুক্রবার রাতের ঘটনায় হতবাক জম্মুর বাসিন্দারা। পুলিশ সূত্রে খবর, আদতে রিয়াসি জেলার বাসিন্দা ইশফাক জম্মুর ছানি হিম্মত এলাকায় বদর দিনের বোনের বাড়িতে পরিচারকের কাজ করত। গত কাল বোনের বাড়িতে এসেছিলেন বদর। নিজের সার্ভিস রাইফেলটি টেবিলের উপর রেখে বাথরুমে ঢুকেছিলেন। তখনই ফাঁক পেয়ে সেটি চুরি করে পালায় ইশফাক। তার পর একটি ম্যাটাডরে করে নরওয়াল এলাকায় পৌঁছয়। সেখান থেকে অটোয় উঠে ত্রিকুটা নগরের দিকে যাওয়ার কথা বলে চালককে। কিন্তু ইশফাকের জ্যাকেটের আড়াল থেকে রাইফেল উঁকি মারছে দেখে সন্দেহ হয় চালকের। অটো মার্বেল বাজারের কাছে পৌঁছতেই ঝাঁপ দেন তিনি। তার পর অন্ধকারে পালিয়ে যান। বাধ্য হয়ে ইশফাকও অটো থেকে নেমে পড়ে। ঢুকে যায় একটি শ্রমিক-ঝুপড়িতে।

হঠাৎ করে তাকে দেখে চিৎকার করতে শুরু করে ঝুপড়ির কয়েকটি বাচ্চা। তাদের থামাতে না পেরে শেষমেশ তাদের বাবা লামগুয়ার দিকে গুলি চালায় ইশফাক। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় লামগুয়ার। পুলিশ জানিয়েছে, কাজের খোঁজে মধ্যপ্রদেশের ছত্তরপুর থেকে জম্মু এসেছিলেন তিনি।

লামগুয়ার মতো না হলেও ইশফাকের গুলিতে গুরুতর জখম হন রিয়াজ আহমেদ নামে এক কনস্টেবল। আসলে রাইফেল খোয়ানোর পর বদর সত্বর বিষয়টি জানিয়েছিলেন পুলিশকে। তার পরই ইশফাকের খোঁজে মার্বেল বাজারে পৌঁছয় পুলিশবাহিনী। তখনই কিশোরের ছোড়া গুলিতে আহত হন ওই কনস্টেবল। গুলি চালানোর পর রাইফেল ফেলে পালানোর চেষ্টা করেছিল ইশফাক। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। তার সঙ্গে জঙ্গিদের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা-ও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বদর দিনকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE