Advertisement
E-Paper

কাগজে সংক্রমণ? ‘কোনও যুক্তি নেই’

হাঁচি-কাশির সঙ্গে বেরোনো ড্রপলেট বা ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমেই এই সংক্রমণ ছড়ায়।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৫:৪০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অতীতের দু’টি করোনাভাইরাসের (মার্স ও সার্স) সংক্রমণ থেকে কোভিড-১৯-এর চরিত্র ও সংক্রমণের বিস্তার অনেকটাই আলাদা বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে এখনও বিশদে জানা যায়নি। সেই সুযোগে সংক্রমণ ছড়ানোর বহু তত্ত্ব উঠে এসেছে। ওই তত্ত্বের অন্যতম— কাগজ সংক্রমণের একটি মাধ্যম। যার উপরে কোভিড-১৯-এর ভাইরাস বেশ কয়েক ঘণ্টা বাঁচতে পারে।

যদিও বিজ্ঞানী ও শিক্ষকদের একটা বড় অংশ সেই দাবি কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, হাঁচি-কাশির সঙ্গে বেরোনো ড্রপলেট বা ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমেই এই সংক্রমণ ছড়ায়। রোগীর সেই কণা কোনও বস্তুর (অবজেক্ট) উপরে পড়লে যদি অন্য কেউ সংশ্লিষ্ট বস্তুতে হাত রেখে আবার তা নিজের মুখে দেন, তা হলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। রোগীর হাঁচি-কাশির সঙ্গে নির্গত ‘ড্রপলেট’ এক মিটার পরিধির মধ্যে থাকা কোনও ব্যক্তির শ্বাসগ্রহণের সময়ে ভিতরে প্রবেশ করলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন। ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর ডিরেক্টর-প্রফেসর মধুমিতা দোবে জানিয়েছেন, সংক্রমণ ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে আলাদা করে কাগজের উপর জোর দেওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘‘সংক্রমিত রোগীর ড্রপলেট শুধু কাগজ কেন, দরজার হাতল, চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার-সহ অনেক জায়গাতেই পড়তে পারে। তার পরে ওই ভাইরাসের আয়ুষ্কালের মধ্যে (যে আয়ুষ্কাল কার্ডবোর্ডের উপরে ২৪ ঘণ্টা বলে এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত) যদি অন্য কেউ তার উপরে হাত দেন এবং সেই হাত না ধুয়েই নিজের মুখ-নাকে দেন, তখন সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কাগজের ব্যাপারে আলাদা করে মাথা না ঘামিয়ে এই সব জিনিস হাতের সংস্পর্শে আসার পরে হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলার উপরে জোর দেওয়া জরুরি।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কানাইচন্দ্র পাল বলছেন, ‘‘কাগজের মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও আশঙ্কাই নেই। কাগজ যা দিয়ে তৈরি, বিশেষ করে সংবাদপত্রের প্রক্রিয়াকরণের সময়ে যে সমস্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তার উপরে ড্রপলেটের বেঁচে থাকা অসম্ভব। ‘নেকেড’ ভাইরাস কোনও সারফেসেই বাঁচতে পারে না। এদের টিকে থাকার জন্য ড্রপলেটের প্রয়োজন হয়।’’

গবেষকেরা এ-ও পাল্টা প্রশ্ন করছেন— কখনও কি সর্দি বা ফ্লু জাতীয় রোগ খাম বা কাগজের মাধ্যমে ছড়ায়, এমন ঘটনা ঘটেছে? এক গবেষকের কথায়, ‘‘যদি তাই-ই হত, তা হলে পরিস্থিতি আরও অনেক অনেক খারাপ হত। এ সব ক্ষেত্রে নিজের সাধারণ বুদ্ধি প্রয়োগ করলেই হবে। ধরা যাক, কেউ এক জন এমন কয়েনের সংস্পর্শে এলেন, যে কয়েনটি আগে কোনও সংক্রমিত রোগীর কাছে ছিল এবং তাতে ড্রপলেট লাগা রয়েছে। যদি সেই ড্রপলেট হাতে লাগার পরে ওই ব্যক্তি নিজের মুখে তা দেন, তা হলেই একমাত্র সংক্রমণ হবে।’’

তা হলে কাগজ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর তত্ত্ব কী ভাবে উঠে এল?

এপিডিমিয়োলজিস্টরা জানাচ্ছেন, মহামারির উৎস না-জানা পর্যন্ত সব সময়েই এই ধরনের ভ্রান্তি-অনুমান চলতে থাকে। তাঁরা এও জানাচ্ছেন, যুক্তির খাতিরে যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লিখিত ‘অবজেক্ট’-কে কাগজ ধরা হয়, তা হলে সেই যুক্তিতে টাকা-মুদ্রা-প্লাস্টিক, ঘরের দরজা-জানলা-কলিংবেল, মোবাইল, বাসন-সহ আরও যা-যা কিছুর উপরে ভাইরাস বাঁচতে পারে, সব কিছু থেকেই সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। এক গবেষকের কথায়, ‘‘একটা তত্ত্ব এটাও বলছে, ধাতব পদার্থের উপরে সবথেকে বেশিক্ষণ এই ভাইরাস বাঁচে। আবার এটাও বলা হচ্ছে, প্লাস্টিকের দ্রব্যেও ভাইরাস বাঁচে। ফলে সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত ভ্রান্তি বা অনুমানমূলক ধারণা ছড়ানো উচিত নয়।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুখেন্দু মণ্ডল বলছেন, ‘‘কোনও বস্তুতে এই সংক্রমণের ভাইরাস থাকলেও যত ক্ষণ না কেউ তাতে হাত দিয়ে, সেই হাত নিজের মুখ-নাকে দিচ্ছেন, ততক্ষণ সংক্রমণ হবে না। কারণ, এই ভাইরাসের প্রবেশপথই হল মুখ ও নাক। এ ক্ষেত্রে কাগজকে দায়ী করার কোনও যুক্তিই নেই। যে কোনও জিনিসে হাত দেওয়ার পরেই হাত না ধুয়ে মুখে-নাকে-চোখে দিতে বারণ করা হচ্ছে। কাগজের ক্ষেত্রেও সেটুকু মানাই যথেষ্ট।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান বিশ্বদীপ দাস বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যেটুকু জানা গিয়েছে, তা হল ধাতব পদার্থে এই ভাইরাসের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কাগজ সম্পর্কে এখনও তেমন তথ্য নেই।’’

Coronavirus Contamination Paper
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy