Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩
Mamata Bandyopadhyay in Tripura

বাংলা-ত্রিপুরা ভাইবোন, মাত্র আধ ঘণ্টা দূরত্ব! বিজেপির ‘বহিরাগত’ অভিযোগ খণ্ডন মমতার

বাংলা আর ত্রিপুরার ভাষা এক। সংস্কৃতি এক। রান্নাবান্নার ধরনও এক। সর্বোপরি বাংলা আর ত্রিপুরার দূরত্ব মাত্র আধ ঘণ্টা। আগরতলায় এই কথা জানিয়েই বিজেপির ‘বহিরাগত’ কটাক্ষ ওড়ালেন মমতা।

Image of Mamata Banerjee in Agartala

মমতা আগরতলার জনসভায় বললেন, বাংলা তাঁর ‘ঘর’ হলে ত্রিপুরাও একটি ‘ঘর’। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আগরতলা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১১
Share: Save:

ত্রিপুরা আসলে বাংলার মতোই। বাংলা তাঁর ‘ঘর’ হলে ত্রিপুরাও একটি ‘ঘর’। এই রাজ্য তাঁর কাছে নতুন নয়। গোটা রাজ্যটাই তাঁর ঘোরা। মঙ্গলবার আগরতলায় দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার পদযাত্রা শেষে এক জনসভায় এমনটাই বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বোঝালেন প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরার সঙ্গে তাঁর ‘আত্মিকতা’র কথা। পাশাপাশি, খারিজ করলেন বিজেপির ‘বহিরাগত’ তত্ত্বকেও।

Advertisement

২০২১ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির গায়ে ‘বহিরাগত’ তকমা সেঁটেছিল তৃণমূল। সেই সময়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়মিত বাংলায় আসতেন। সে কারণে তাঁদের ‘ডেলি প্যাসেঞ্জার’ বলেও কটাক্ষ করতেন মমতা এবং তাঁর দলের বক্তারা। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে ২৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। যার প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন বিজেপি এ বার তাদের বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত’ অভিযোগ তুলেছে। তৃণমূলকে ‘পরিযায়ী’ আখ্যাও দিয়েছে। মমতা সেই অভিযোগই খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন ভোটের প্রচারে গিয়ে। স্পষ্ট জানিয়েছেন, ত্রিপুরা আর বাংলা তাঁর কাছে একই রকম। ত্রিপুরার মানুষ তাঁকে সুযোগ দিলে তাঁদেরও তিনি দেখবেন।

ত্রিপুরা যে তাঁর কতটা কাছের, তা বোঝানোর কাজটা সেখানে পৌঁছেই শুরু করেছিলেন মমতা। সোমবার আগরতলায় নেমে তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে। মঙ্গলবারের ভাষণে সেই মন্দিরের সংস্কার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘একটা মাতাবাড়ি মন্দির, সেটাও সুন্দর করে সাজাতে পারো না? যান দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ, তারকেশ্বর। দেখে আসুন কী করে দিয়েছি!’’

সোমবার ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির থেকে জনসংযোগে বেরিয়েছিলেন মমতা। ছিলেন অভিষেকও। স্থানীয় দোকান ঘুরে স্থানীয়দের ভাষাতেই কথা বলেন মমতা। বার বার হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন, তিনি তাঁদের ‘ঘরের লোক’। জবাব দেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কটাক্ষেরও। গত রবিবার নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেছে তৃণমূল। সেখানে বাংলার মতো ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-সহ একগুচ্ছ পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাতে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক তৃণমূলকে ‘পরিযায়ী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। পরোক্ষে তার জবাব দিতে গিয়ে সোমবার ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির থেকে ফেরার সময় একটি শিঙাড়ার দোকানে ঢুকে ময়দার লেচি বেলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। পাশের দোকানে ঢুকে সেজেছেন পান। মঙ্গলবারের জনসভায়ও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ত্রিপুরায় তিনি আগেও এসেছেন। অলিগলি ঘুরেছেন। তখন সঙ্গী ছিলেন অধুনাপ্রয়াত কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেব। যে সন্তোষমোহনের কন্যা সুস্মিতা এখন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ। মমতার কথায়, ‘‘এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে আমি আর সন্তোষ’দা যাইনি। গিয়েছিলাম একটা জায়গায়— রতনপুর। সেখানে ছ’জনের দেহ মিলেছিল। উদয়পুর থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেছি। ত্রিপুরা আমার কাছে নতুন নয়।’’

Advertisement

মঙ্গলবার পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে রোড শো করার পর জনসভাতেও মমতা বলেছেন, ‘‘বাংলার সংস্কৃতি, ত্রিপুরার সংস্কৃতি একেবারে এক। পার্থক্য নেই। আপনার কথাও এক, আমার কথাও এক। আপনার ভাষাও এক। আমার ভাষাও এক। আপনার রান্নাও এক, আমার রান্নাও এক। আপনাদের শঙ্খধ্বনি এক, আমাদের শঙ্খধ্বনিও এক। আপনাদের উলুধ্বনিও এক। আমাদের উলুধ্বনি এক। আপনার ধর্ম সর্বধর্মসমন্বয়, আমাদের ধর্মও এক।’’

পাশাপাশিই আগরতলায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেছেন, ত্রিপুরাকে ‘উদ্ধার’-এর ভার তিনি অভিষেকের কাঁধেই দিয়েছেন। মমতার কথায়, ‘‘আমি অভিষেককে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। নবীন প্রজন্ম এগিয়ে আসুক। ত্রিপুরাবাসীকে উদ্ধার করুক। কিন্তু আমি প্রত্যেকটা ঘটনার উপর নজর রাখতাম।’’

মমতা আগামী দিনেও ত্রিপুরা আসবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশিই জানিয়েছেন, এ বার তাঁকে অভিষেকই ত্রিপুরায় আসতে বারণ করেছিলেন। মমতা বলেন, ‘‘অভিষেক বলছিল, দিদি যেয়ো না। সব ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আমি তো জেদি! যাবই!’’ প্রসঙ্গত, প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পরেই গত জানুয়ারি মাসে তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর মতো আরও কয়েক জন নেতা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে আশঙ্কা শীর্ষনেতৃত্বের। এই সম্ভাব্য ‘দলবদলু’-দের মঙ্গলবারের সভা থেকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি বলব, যখন তোমার কেউ ছিল না, তখন ছিলাম আমি। ভোটের সময় দলবদলুরা, রাজা হয়েছ তুমি। এ জিনিস চলবে না। রাজনীতিতে স্বচ্ছতা, সততা দরকার।’’

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট। ফলপ্রকাশ ২ মার্চ। এই প্রথম ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটে লড়ছে তৃণমূল। তবে এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে আগরতলায় পুরভোটেও লড়েছিল তৃণমূল। খাতা খুলতে পারেনি। ৫১টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। তবে প্রথম বার লড়ে নিজেদের ‘ছাপ’ রাখতে সমর্থ হয়েছিল তৃণমূল। ৫১টির মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল এবং সিপিএম মিলিত ভাবে বিজেপির থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল। যা থেকে মনে করা হয়, সিপিএম-তৃণমূলের ভোট ভাগাভাগিতেই বাড়তি সুবিধা পেয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল অভিযোগ করেছিল, সন্ত্রাস ছড়িয়েই ভোটে জয় পেয়েছে বিজেপি। যদিও সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলেছে বলে মঙ্গলবার দাবি করেছেন মমতা। তার কৃতিত্ব তিনি তৃণমূলকেই দিয়েছেন। মমতার কথায়, ‘‘দু’বছর আগে কেউ ঘর থেকে বার হতে পারতেন না। স্বাধীনতা ছিল না সাংবাদিকদেরও। আজ এখানে জনসভায় এসে দাঁড়িয়েছেন। সেই কৃতিত্ব তৃণমূলের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.