—ফাইল চিত্র
নরেন্দ্র মোদী দিল্লির মসনদে বসতেই বিজেপিতে ক্ষমতার যে নিঃশব্দ রূপান্তর ঘটে গিয়েছে, তাতেই সিলমোহর বসতে চলেছে আগামিকাল।
বিজেপিতে নতুন সভাপতি হলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁকে পরিষদের অনুমোদন নিতে হয়। আপাত ভাবে দলের নতুন সভাপতি অমিত শাহের নামে সেই আনুষ্ঠানিক সিলমোহর বসাতেই কাল বিজেপি পরিষদের বৈঠক। মোদী প্রধানমন্ত্রী ও তাঁরই ঘনিষ্ঠ অমিত শাহ দলের সভাপতি হওয়ার পর বিজেপি পরিষদের এটাই প্রথম বৈঠক। বলা যায়, প্রকাশ্য অভিষেক হতে চলেছে মোদী ও অমিত জুটির। এই জুটি কালই প্রথম আসরে নামছে, ভবিষ্যতে দল ও সরকার কোন পথে হাঁটবে, তার দিশা-নির্দেশ করতে। প্রত্যাশিত ভাবেই নতুন জমানায় এই বৈঠকে মোটেই আর আগের মতো গুরুত্ব পাচ্ছেন না লালকৃষ্ণ আডবাণীরা।
বিজেপি পরিষদের এই বৈঠক কিছুটা আলাদা অন্য ভাবেও। পরিষদের সঙ্গে কর্মসমিতির বৈঠক হচ্ছে না এ বার। অন্যান্য বার কর্ম সমিতি ও পরিষদ মিলিয়ে অন্তত ২-৩ দিন ধরে বৈঠক চলে। কিন্তু এ বারের বৈঠকটি হতে চলেছে সংক্ষিপ্ততম। মাত্র ৬ ঘণ্টায় এর পাট চুকিয়ে ফেলতে চায় দল। বৈঠকস্থল দিল্লির নেহরু স্টেডিয়ামের চার পাশে এখন শুধুই মোদী-অমিতের ছবি। অটলবিহারী বাজপেয়ী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ যে কোনও বৈঠক শেষ হওয়ার রেওয়াজ ছিল দলের বর্ষীয়ান নেতা আডবাণীর বক্তৃতা দিয়ে। সেই রেওয়াজটিও সম্ভবত ভাঙতে চলেছে কাল। দলের কর্মসূচি বলছে, মোদীর বক্তৃতা দিয়েই শেষ হবে পরিষদের বৈঠক।
তার মানে কি আডবাণী বক্তব্য রাখবেন না? মুখতার আব্বাস নকভি বললেন, “গোটা বৈঠকটিই সংবাদমাধ্যমের জন্য খোলা থাকছে। ফলে কোন নেতা কখন বলবেন, সকলেই জানতে পারবেন। মোদীর বক্তৃতা দিয়েই শেষ হবে বৈঠক। আর মোদীর আগে বলবেন অমিত শাহ।”
বিজেপির এক নেতা আজ এই প্রসঙ্গে কবুল করেন, বিপুল জনমত নিয়ে জিতে আসার পর বিজেপিতে ক্ষমতা-কেন্দ্রের বদল ঘটে গিয়েছে। প্রবীণরা এখন ব্রাত্য। দু’মাস হয়ে গেলেও আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীর মতো নেতাদের কোথাও কোনও পদ দেওয়া হয়নি। এমনকী, দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংসদীয় বোর্ড থেকেও এই প্রবীণ নেতাদের বাদ দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। বাদ দেওয়ার তালিকায় সুষমা স্বরাজের নাম নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে, যিনি এক সময় মোদীর ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। বিজেপি সংসদীয় দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও রাখা হয়নি আডবাণী, সুষমাকে। দলে এখন নতুন যুগ এসেছে। ফলে সবাইকে সেই মোতাবেকই চলতে হবে। কাল সম্ভবত তারই এক দফা প্রতিফলন দেখা যাবে।
তবে মোদী শিবিরের নেতাদের মতে, এর একটা ভাল দিকও রয়েছে। ইউপিএ আমলের সমস্যা ছিল ক্ষমতার দু’টি কেন্দ্র। সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহ। দু’জনের সমন্বয়ের অভাবেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল সরকার। মোদী-অমিত জুটির ক্ষেত্রে তেমন সম্ভাবনা নেই। সরকার ও সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় রাখার যুক্তি দেখিয়েই অমিত শাহকে সভাপতি করার ব্যাপারে সঙ্ঘ নেতৃত্বকে রাজি করিয়েছেন মোদী। এই জুটি কাল প্রথম বার গোটা দেশ থেকে আসা প্রায় হাজার দুয়েক নেতার সামনে দলের ভবিষ্যৎ রণনীতি তুলে ধরবেন।
বিজেপি সূত্রের মতে, লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পিছনে সব থেকে বড় কারণ ছিল মোদী-ঝড়। কিন্তু সেই ঝড় এখন থিতিয়ে গিয়েছে। যে কারণে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্টও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে অরবিন্দ কেজরীবাল দিনরাত বিজেপিকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। ফলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে অমিত শাহ আরও কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে চলেছেন। আগামিকালের বৈঠকে মোদী ও অমিত লোকসভা ভোটের সময়ের সেই হাওয়াটাই ফের জাগিয়ে তোলার মন্ত্র দেবেন। যদিও এবিপি নিউজের সমীক্ষা বলছে, হরিয়ানায় মোদী-ঝড় অব্যাহতই রয়েছে। এবং সেখানে বিজেপিই ক্ষমতায় আসতে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy