Advertisement
১১ মে ২০২৪

জট বাড়াল চালকের চিঠি, বেপাত্তা গয়াল

রেলের কর্তারা ৬২ জনের মৃত্যুর দায় চাপাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার উপরে। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি আজ ফের জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় রেলের কোনও দোষ নেই। অহেতুক রেলকে দায়ী করাটা অর্থহীন।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
অমৃতসর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

দশেরার রাতে অমৃতসরে এত বড় রেল দুর্ঘটনার পরে একটি টুইট করেছিলেন তিনি। তার পর থেকে মুখে কুলুপ রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের। শুধু তা-ই নয়, শুক্রবার রাতের ওই ঘটনার পর থেকে কার্যত নিখোঁজ তিনি! ফলে রেলমন্ত্রী কোথায় তা নিয়েই শুরু হয়েছে এক প্রস্ত জল্পনা। রেলমন্ত্রী কোথায় তার কোনও সদুত্তর নেই রেলমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিভাগ (সেল)-এর কাছেও। এর মধ্যে জট বাড়িয়েছে সে রাতের ডেমু ট্রেনের চালকের একটি চিঠি। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ভিড় দেখে ট্রেন থামিয়েছিলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আদৌ থামেনি ট্রেনটি।

এ সব নিয়ে চাপে পড়লেও রেলের কর্তারা ৬২ জনের মৃত্যুর দায় চাপাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার উপরে। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি আজ ফের জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় রেলের কোনও দোষ নেই। অহেতুক রেলকে দায়ী করাটা অর্থহীন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার খবর সামনে আসতেই রেলমন্ত্রী গয়াল টুইট করে জানান, তিনি আমেরিকায় রয়েছেন। বিদেশের সব অনুষ্ঠান বাতিল করে দ্রুত ভারতে ফিরে আসছেন। সেটিই শেষ টুইট রেলমন্ত্রীর। তাঁর ওই টুইটে এ যাবৎ প্রায় দশ হাজার মানুষ লাইক করলেও, রেলমন্ত্রী দু’দিনেও কেন দেশে পৌঁছাতে পারলেন না সে জবাব নেই কারও কাছে। রেল মন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর, মৃতের সংখ্যা আর না বাড়ায় আমেরিকায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে প্রশ্ন করলেই চটে যাচ্ছে রেলমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আধিকারিকেরা। বলছেন, ‘‘মিথ্যা খবর।’’

এরই মধ্যে আজ অভিশপ্ত ট্রেনের চালকের হাতে লেখা বিবৃতি সামনে এসেছে। তাতে ডেমু চালক অরবিন্দ কুমার দাবি করেছেন, ঘটনাস্থলের কাছের সিগন্যালটি সবুজ ছিল। তিনি যখন পোস্ট নম্বর ৫০বি/১১-তে কাছে পৌঁছন তখন হঠাৎই দেখতে পান লাইনে প্রচুর মানুষ বসে। যা দেখে হর্ন বাজানোর পাশাপাশি আপৎকালীন ব্রেকও কষেন তিনি। কিন্তু তত ক্ষণে বেশ কয়েক জন ওই ট্রেনের তলায় চলে আসেন। অরবিন্দের দাবি, ব্রেক কষার ফলে ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। যা দেখে স্থানীয় লোকেরা ট্রেনের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে। ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি সেখান থেকে ট্রেন নিয়ে অমৃতসর স্টেশনে চলে যান। চালকের ওই বয়ানকে রেল ধ্রুব সত্য বলে মানলেও, সেই সন্ধ্যায় লাইনের পাশের বাড়ির ছাদ থেকে গোটা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাধা ভট্ট বললেন, ‘‘ট্রেন আদৌ থামেনি। হর্ন দিতে দিতে দ্রুতগতিতে চলে যায়।’’ একই দাবি, গুরবিন্দর, রাজেশের মতো অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীর।

চালক অরবিন্দ কুমারের বিবৃতি।

ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে জোড়া ফটক লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যানের ভূমিকা নিয়ে। রাবণ পোড়ানো দেখতে যেখানে লাইনে অন্তত হাজার খানেক জনতা উপস্থিত হয়েছে, সেখানে কেন তিনি কেবিনম্যান বা স্টেশন মাস্টারকে জানাননি— তার কোনও উত্তর মিলছে না। ঘরোয়া মহলে রেলকর্তারা এখনও মনে করছেন, গেটম্যানের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি সক্রিয় হলেই পরিস্থিতি এত খারাপ হত না। দুর্ঘটনার সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সুজিত কুমার। তাঁর দাবি, ‘‘ট্রেনের ধাক্কায় তখন এক নম্বরে লাইনে থাকা ভিড় দু’দিকে ছিটকে পড়েছে। আমি দু’নম্বর থেকে এক নম্বরে যাচ্ছি, কী হয়েছে দেখতে। তখন দেখি এক ব্যক্তি হাতে সবুজ আলো নিয়ে জোড়া ফটকের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার ঠিক এক মিনিট আগে রাবণের মূর্তিতে আগুন লাগে। তা হলে কি আর পাঁচ জনের মতো ওই গেটম্যান লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে রাবণ পোড়ানো দেখতে এসেছিলেন?

নিয়ম

দিনের আলো কমে এলেই ইঞ্জিনের মাথার উপরে থাকা সার্চ লাইট জ্বালানো।

বাঁকে হর্ন বাজানো।

সিগন্যাল দেখে গাড়ি চালানো।

লাইনে কোনও সমস্যা থাকলে আপৎকালীন ব্রেক কষা।

কী হয়েছিল

ট্রেনের সার্চ লাইট জ্বলছিল। কিন্তু বাজির রোশনাইয়ে ট্রেনের আলো দূর থেকে চোখে পড়েনি।

বাঁকে হর্ন বাজিয়েছিলেন বলে দাবি চালকের।

গেট সিগন্যাল ডবল হলুদ থাকায় নিয়ম মতো হর্ন দিতে দিতে যান বলে দাবি চালকের। কিন্তু বাজির প্রবল আওয়াজে তা চাপা পড়ে যায়।

ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিমি গতি থাকলে আপৎকালীন ব্রেক ব্যবহার হলেও ট্রেন ৬০০-৭০০ মিটার এলাকা পেরিয়ে থামে। এ ক্ষেত্রে চালক ১৫০-২০০ মিটার দূরত্ব থেকে ভিড় দেখতে পান। ঘণ্টা পিছু ৯১ কিলোমিটার গতিতে থাকা ট্রেন ৫০০ মিটার পেরিয়ে গিয়ে থামে।

এই সবের উত্তর খুঁজতেই ইচ্ছুক নয় রেল। রেলের এই দায়দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলার মানসিকতার সমালোচনা করে প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘এত লোক মারা গেল রেল লাইনের উপরে। রেল তদন্ত তো করলই না উল্টে, তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই রেল জানিয়ে দিল তাদের কোনও দোষ নেই! অবাক করার মতো ঘটনা।’’ বিরোধীদের ওই দাবি অবশ্য মানতে নারাজ রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান। অশ্বিনী লোহানি। তাঁর কথায়, ‘‘যা সত্য তা বলার সময় এসেছে। যদি রেলের কোনও দোষ না থাকে, তা হলে অহেতুক দোষ খুঁজে লাভ নেই। রেলকর্মীরা অন্য ধাতের মানুষ। যদি তাঁদের পাশে দাঁড়ানো যায়, তা হলে তারা মন্ত্রকের উন্নতিতে ভূমিকা নেবেন। ভগবান আমাদের শক্তি দিন যা সত্য, সেটা বলার।’’

কিন্তু, সত্যটা কী? তদন্ত না করে তাঁরা জানছেন কী করে? সেটাই প্রশ্ন বিরোধীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train Accident Death Amritsar letter Driver
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE