Advertisement
০৯ নভেম্বর ২০২৪

ঘাস কই ঘাস, গো-মাতা বিপন্ন মোদীর রাজ্যেই

সেই রাজাও নেই, রাজত্বও নেই। এখন দলিত মানুষজনের বাস এই এলাকায়। গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী এ বার এখান থেকেই ভোটে লড়ছেন। আশেপাশের গ্রামগুলির হাড়পাঁজর বেরিয়ে গিয়েছে। থাকার মধ্যে অতীতের স্মৃতির মতো ছিল বিস্তৃত সবুজ গোচর।

অগ্নি রায়
বডগাম শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৯
Share: Save:

উধাও হয়ে যাচ্ছে সবুজ ঘাস। হারিয়ে যাচ্ছে বিস্তৃত গোচর। খাস গুজরাতেই বিপন্ন গো-মাতা!

উত্তর গুজরাতের বনসকান্ঠা জেলায় ১১০টি গ্রাম নিয়ে এই তালুক। এক সময়ে রাজপুত রাজাদের শাসনে ছিল অঞ্চলটি। ফসল আর গরুর দুধে সম্পন্ন বডগাম রাজস্ব পাঠাতো ব্রিটিশ শাসকদেরও। মাউন্ট আবুর পাশে, এই অঞ্চলের গরুর দুধের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূরে দূরে।

সেই রাজাও নেই, রাজত্বও নেই। এখন দলিত মানুষজনের বাস এই এলাকায়। গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী এ বার এখান থেকেই ভোটে লড়ছেন। আশেপাশের গ্রামগুলির হাড়পাঁজর বেরিয়ে গিয়েছে। থাকার মধ্যে অতীতের স্মৃতির মতো ছিল বিস্তৃত সবুজ গোচর। পঞ্চায়েতের মালিকানায় থাকা সবুজ মাঠে গরু চরাতেন মালধারিরা (গোয়ালা)।

কিন্তু এলাকায় পৌঁছলেই এখন ক্ষোভ আর অভিযোগ কানে আসবে। ‘‘গত কয়েক বছরে ছলে বলে কৌশলে এই সব জমি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিল্পপতি, প্রোমোটারদের। তৈরি হচ্ছে গুদাম। শিল্প গড়ার নামে কিছু নির্মাণও হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য আর কাজ আজও স্পষ্ট নয় আমাদের কাছে”— বলছেন নারায়ন রবারি। এক সময়ে ৩৫টি গরু ছিল তাঁর। ক্রমশ যা কমে আসছে। “গরুর খাবারে টান পড়ছে। ঘাস বিচালি কিনতে হচ্ছে আমাদের। গরু ভাল দুধ দিলে গোশালার খরচ পুষিয়ে যায়। কিন্তু ভাল ঘাস না খেলে দুধের মানও তো পড়ে যায়। সেটাই হচ্ছে”— বললেন আর এক দলিত মালধারি জগদীশ। এই বছরেই কচ্ছে বাজার থেকে কেনা বিষাক্ত ঘাস খেয়ে ৬৫টি গরুর মৃত্যুর ঘটনাও স্থায়ী আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছে।

না, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেই রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে যাবে— এমন আশা করছেন না বডগামবাসীরা। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই অন্য অনেক কিছুর মতোই বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ার করেছেন জিগ্নেশ। তাঁর সহযোগী কংগ্রেস নেতারাও এলাকার জনসভাগুলিতে বলছেন, ‘‘গো-রক্ষা নিয়ে দেশজুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি। অথচ তাদের শাসনেই গোমাতার এমন শোচনীয় হাল।’’

আরও পড়ুন: জেতার জমিতেই সংশয় ভোটের অঙ্কে

এবং শুধু বডগামেই নয়, এ ব্যাপারে গোটা রাজ্যের পরিস্থিতিই উনিশ বিশ। গুজরাতে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারপার্সন অমৃতা পটেল বলেছেন, “গোচরগুলিকে শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রশ্নে রাজ্য সরকারের অনেক বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।” তাঁর বক্তব্য, পশুখাদ্যের যোগান ও শিল্পোন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি। দুধ উৎপাদনের ৭০ শতাংশ ব্যয় হয় পশুখাদ্য থেকে। ফলে ডেয়ারি চালাতে ঘাস সংরক্ষণ জরুরি। এ জন্য খরচ তো বেশি নয়, আর মানুষ ঘাস খায়ও না! ফলে এ টুকু থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে ডেয়ারিগুলিকে?

গুজরাতে বড় ডেয়ারিগুলির কথা আলাদা। কিন্তু এই প্রশ্নের কোনও সঠিক উত্তর নেই গ্রামের ছোট ছোট গোশালার মালিকদের কাছে। তাঁরা শুধু এত টুকুই জানেন, গোটা দেশে দাপিয়ে বেড়ানো গো-রক্ষা বাহিনীর টিঁকির দেখাও পাওয়া যায় না এই সমস্যার সমাধানে।

গুজরাত নির্বাচন নিয়ে সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE