তাওয়াংয়ের বাঁধ নির্মাণ ঘিরে বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত পরিবেশ সংক্রান্ত আন্দোলনের সীমানা পেরিয়ে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘর্ষে পরিণত হল।
বাঁধ-বিরোধী লামা লবসাং গাৎসেকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁর মুক্তির দাবিতে আজ লামা ও লবসাংয়ের সমর্থকদের একাংশ থানায় হামলা চালিয়ে আগুল লাগিয়ে দেয়। এলাকাবাসীর দাবি, পুলিশ গুলি চালালে দু’জনের মৃত্যু হয়। কয়েক জনের দাবি, নিহতের সংখ্যা তিন। গুলি, লাঠিচালনা ও খণ্ডযু্দ্ধে অনেক মানুষ জখম হয়েছেন। রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। চিন সীমান্তে থাকা গুরুত্বপূর্ণ এই বৌদ্ধ ধর্মস্থলের অশান্ত পরিবেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও উদ্বেগে।
ঘটনার সূত্রপাত বছর পাঁচেক আগে। তাওয়াংয়ে একাধিক বড় বাঁধ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে জন্য ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গও খোঁড়ার কথা। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বড় বাঁধ তৈরি আর প্রায় ৫০ হাজার বহিরাগত শ্রমিকের তাওয়াংয়ে ঢোকার আশঙ্কায় কয়েক জন লামা প্রতিবাদী মঞ্চ গড়ে তোলেন। কর্নাটকের সেরা মনাস্টিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা লবসাং গাৎসে গড়ে তোলেন ‘সেভ মন রিজিয়ন ফেডারেশন’। তাঁদের অভিযোগ, অর্থলোভী তাওয়াংয়ের খাণ্ডু পরিবার, অন্যান্য নেতারা তাওয়াং মঠের গুরু টুলকু রিনপোচেকে কাজে লাগিয়ে দরিদ্র মানুষদের ভুল বুঝিয়ে তাঁদের জমি বাঁধ তৈরির জন্য দখল করছেন। পদাধিকারবলে তাওয়াং মঠের গুরুই সেখানকার মন পা উপজাতিদের প্রধান। বাঁধ বিরোধী প্রতিবাদে আগেও উত্তাল হয়েছে তাওয়াং। মানুষের মধ্যে লবসাংয়ের জনপ্রিয়তা ও বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাড়ছে। লবসাংয়ের দায়ের করা মামলার জেরে জাতীয় গ্রিন ট্রিবিউনাল সম্প্রতি ৭৮০ মেগাওয়াটের নামজাং চু প্রকল্পের কাজও বন্ধ করে দেয়।
বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দফতরে রাজনৈতিক নেতা, বাঁধের পক্ষে থাকা পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে লবসাংয়ের কথা কাটাকাটি হয়। তখনই একটি অডিও শোনান জেলা পরিষদ সদস্যরা। সেখানে শোনা যায়, লবসাং গুরু টুলকুর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে তাওয়াংয়ের বিষয় থেকে দূরে থাকতে বলছেন। এর পরই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়। গুরুকে অসম্মান করার অভিযোগে পুলিশ লবসাংকে গ্রেফতার করে। তাঁকে সোমবার পর্যন্ত পুলিশ হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর বিরুদ্ধে মন পা-রা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
আজ লবসাংকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সকাল থেকে অনেক লামা ও লবসাংয়ের সমর্থক থানা ঘেরাও করেন। সামনের সারিতে ছিলেন সন্ন্যাসিনী আনি দাওয়া দ্রেমা। প্রথম দফায় লবসাংকে জামিন দেওয়া হয়নি। তাঁকে পিছনের দরজা দিয়ে ফের থানায় ঢোকানো হয়। সেই খবর পাওয়ার পরেই উত্তেজিত জনতা থানা আক্রমণ করে। আগুন লাগিয়ে দেয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস বা রাবার বুলেট না চালিয়ে সরাসরি গুলি চালাতে থাকে। দুই যুবকের মৃত্যু হয়। তাঁদের মাথায় গুলি লাগে। পরিস্থিতি সামলাতে জেলা দায়রা আদালত তড়িঘড়ি লবসাংকে জামিন দিয়ে দেয়। পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে। সেনাবাহিনীকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাওয়াংয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিকেল থেকে ফ্ল্যাগ-মার্চ করছেন জওয়ানরা। পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। জনতার দাবি, গুলিতে আরও এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তার দেহ লুকিয়ে রেখেছে পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুল ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জানান, রাজ্যের ইতিহাসে এমন ঘটনা কলঙ্কের। এই পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে তা দেখা হবে। তিনি অবিলম্বে জেলায় সব শ্রেণির প্রতিনিধিদের নিয়ে শান্তি কমিটি গড়তে বলেন। সেখানে লবসাংয়ের সমর্থকদেরও রাখতে নির্দেশ দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার মানুষের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে শুনবে ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’ জেলাশাসক ও এসপিকে মানুষের অসুবিধা না করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে বলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy