তিনটের মধ্যে দু’টো তৈরি বেলজিয়ামে, একটা অস্ট্রিয়ায়। এফএন এফ-২০০০, এফএন পি-৯০ ও গ্লক পিস্তল। মুখোমুখি লড়াই বা ক্লোজ কমব্যাটে সবচেয়ে কার্যকরী, মারাত্মক ও নিখুঁত নিশানাধারী বলে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রেরই কদর দুনিয়া জুড়ে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)-এর হাতিয়ারও এই তিনটি। উপরন্তু রয়েছে বিস্ফোরক-বোমার হদিস পাওয়ার নানা আধুনিক সরঞ্জাম। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ঘিরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উদ্বেগ দিন-কে দিন বেড়ে চলেছে। কেন?
মন্ত্রকের বক্তব্য: নরেন্দ্র মোদীর সুরক্ষা-বলয়ে পরের পর এমন সব ফাঁক-ফোকর দেখা দিচ্ছে, যা থেকে ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারে। বারবার বলা সত্ত্বেও সুরাহা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে রাজ্যগুলিকে সম্প্রতি হুঁশিয়ারও করেছে কেন্দ্রীয় আইবি।
উদাহরণ প্রসঙ্গে মন্ত্রক-সূত্র তুলছে অ্যাম্বুল্যান্স-কাণ্ডের কথা। ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির নাকের ডগায় বিনা বাধায় চলে এসেছিল রোগীশুদ্ধ অ্যাম্বুল্যান্স, যাকে কনভয়ের কোনও গাড়ি-ই খেয়াল করেনি। মন্ত্রক-কর্তারা জানাচ্ছেন, আপৎকালীন পরিষেবার গাড়িকে আগে যেতে দেওয়াই কনভয়ের উচিত, তবে দেখা দরকার, অ্যাম্বুল্যান্সটিতে সত্যিই রোগী রয়েছে কি না।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা যাচাই করা হয়নি। ‘‘কী গ্যারান্টি যে, রোগী সেজে অ্যাম্বুল্যান্সে জঙ্গিরা হামলা চালাবে না?’’— প্রশ্ন এক গোয়েন্দা-কর্তার।
এর ক’দিন আগে একটি রাজ্যে প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। রাজ্যের এক মন্ত্রীর গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর কনভয়কে প্রচণ্ড গতিতে ওভারটেকের চেষ্টা করে। কনভয়ের ‘টেল কার’ ও অন্য অভ্যাগতদের গাড়িগুলোকে পেরিয়েও যায়। শেষমেশ ‘এসকর্ট টু’ গাড়ির রক্ষীরা তাকে আটকান। আবার সেই রাজ্যেরই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের একটি গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর কনভয়কে অতিক্রমের চেষ্টা করেছিল। ট্র্যাফিক পুলিশ তাকে রোখে।
জায়গায় জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে এ হেন বিপজ্জনক ‘অনুপ্রবেশের’ পুনরাবৃত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিঁদুরে মেঘ দেখছে। এক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এতেই প্রমাণিত, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিযুক্ত পুলিশবাহিনী ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর মধ্যে কাঙ্খিত সমন্বয় থাকছে না।’’
আর একটি ঘটনাও মন্ত্রকের কপালের ভাঁজ বাড়িয়েছে। অন্যের নামে তৈরি পাস নিয়ে এক ঠিকা-শ্রমিক ঢুকে পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানস্থলে। মূল মঞ্চের ঠিক পিছনে ২৪ ঘণ্টা ধরে তিনি কাজ করেন। জানা যায়, আসল শ্রমিক না-আসায় তাঁর নামে তৈরি পাস দ্বিতীয় জনকে দিয়েছিল পুলিশই, যাকে প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা-ব্যবস্থায় ‘মারাত্মক গলদ’ হিসেবে দেখছে মন্ত্রক। এক গোয়েন্দা অফিসারা বলেন, ‘‘ওটা নিয়ে কোনও জঙ্গি ঢুকলেও বলার কিছু ছিল না।’’
এ দিকে দু’সপ্তাহ আগে সব রাজ্যকে পাঠানো এক সতর্ক-বার্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, লস্কর-ই-তইবার ৪ জঙ্গি দিল্লিতে ঢুকেছে। গোয়েন্দারা এ-ও বলছেন, ২৬/১১-র পরে লস্কর ভারতে ফের বড় হামলার ছক কষেছে। তাদের লক্ষ্য নরেন্দ্র মোদী-সহ শীর্ষ কিছু রাজনীতিক।
এই প্রেক্ষাপটেই রাজ্যগুলিকে সতর্ক-বার্তা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী –সহ বিভিন্ন ব্যক্তির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সব রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয়সাধনের প্রক্রিয়া চলছে।’’ ২০১০-এর জুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাশ্মীর সফরকালে তাঁর উপরে লস্করের আত্মঘাতী হানার ছক বানচাল করেছিল এসপিজি। তার শিক্ষা নিয়ে লস্কর এ বার জোরদার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা-ত্রুটিগুলো তাড়াতাড়ি মেরামত করতে না-পারলে তো ওদেরই পোয়াবারো!’’— মন্তব্য এক স্বরাষ্ট্র-কর্তার।
অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়েও এসপিজি’র চিন্তা তাই যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy