Advertisement
E-Paper

আলিমুদ্দিন দায় নিল না, পার্টি কংগ্রেস অন্ধ্রে

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট দায় নিতে নারাজ। ত্রিপুরায় যেতে হলে সকলকে বিমানে চাপিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মহারাষ্ট্র রাজ্য কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, ভোটের পরে ফের এত টাকা তারা জোগাড় করতে পারবে না। শেষবেলায় লড়াই এসে দাঁড়ায় অন্ধ্র আর তেলঙ্গানা এই দুই রাজ্যের মধ্যে। হায়দরাবাদে ২০০২ সালেই পার্টি কংগ্রেস বসেছে। অবশেষে তাই সিদ্ধান্ত হল, আগামী বছরের এপ্রিলে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমেই বসবে সিপিএমের ২১তম পার্টি কংগ্রেস।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২১

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট দায় নিতে নারাজ। ত্রিপুরায় যেতে হলে সকলকে বিমানে চাপিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মহারাষ্ট্র রাজ্য কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, ভোটের পরে ফের এত টাকা তারা জোগাড় করতে পারবে না। শেষবেলায় লড়াই এসে দাঁড়ায় অন্ধ্র আর তেলঙ্গানা এই দুই রাজ্যের মধ্যে। হায়দরাবাদে ২০০২ সালেই পার্টি কংগ্রেস বসেছে। অবশেষে তাই সিদ্ধান্ত হল, আগামী বছরের এপ্রিলে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমেই বসবে সিপিএমের ২১তম পার্টি কংগ্রেস।

তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, পার্টি কংগ্রেসকে নিয়ে এই দায় এড়ানোর খেলাই প্রমাণ কী করুণ দশা এখন সিপিএমের সংগঠনের। দিল্লিতে আজ শেষ হয়েছে সিপিএমের তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেখানে কোনও রাজ্যই পার্টি কংগ্রেস আয়োজনের বিষয়ে যেচে উৎসাহ দেখায়নি। এটা দেখে দলের অন্দরমহলে যথেষ্ট উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম নেতৃত্বের মনোবল যে তলানিতেই ঠেকে রয়েছে, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন অন্য রাজ্যের নেতারা। কেন্দ্রীয় কমিটির এক প্রবীণ সদস্য বলেন, “এত দিন কোন রাজ্য পার্টি কংগ্রেস আয়োজন করবে, তার প্রতিযোগিতা চলত। এখন ছবিটা উল্টো। সকলেই দায় এড়াতে চায়।”

কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্য রাজ্যের নেতারা ভেবেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এবং আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের পাশে গোটা দলকে টেনে দাঁড় করাতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা কলকাতায় পার্টি কংগ্রেস আয়োজন করার দাবি জানাবে। এ বছরই সিপিএমের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। যার জন্য দলের মতাদর্শ প্রচারে এ বছরের নভেম্বর মাসে এক মাসের কর্মসূচি নেবে সিপিএম। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি বিভাজনের পরে সিপিএমের প্রথম পার্টি কংগ্রেস বসেছিল কলকাতার ত্যাগরাজ হলে। এ বারও কলকাতায় পার্টি কংগ্রেস বসলে তা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠত। কিন্তু সেই দাবি জানানো তো দূরের কথা, উল্টে শনিবার থেকেই রাজ্যে পার্টির করুণ অবস্থার কথা বলতে শুরু করে দেন আলিমুদ্দিনের নেতারা। রবিবার সকালে যখন পার্টি কংগ্রেসের সম্ভাব্য জায়গা নিয়ে আলোচনা চলছে, তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় কলকাতায় পার্টি কংগ্রেস হোক চাইছেন না বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্ররা।

কিন্তু কেন?

কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, শনিবার রাজ্য কমিটির তরফে সূর্যকান্ত মিশ্র পশ্চিমবঙ্গে দলের হাল হকিকত নিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতেই এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে। রির্পোট বলছে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে ও পরে সিপিএমের ক্যাডাররা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছিলেন। এখন বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূলের হামলা চলছেই। আক্রান্ত বাম কর্মীরা মনে করছেন, হামলা থেকে রক্ষা পেতে গেরুয়া ঝান্ডার তলায় আশ্রয় নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সংখ্যালঘু মানুষের সমর্থনও এখনও ফিরিয়ে আনা যায়নি।

পশ্চিমবঙ্গের হাল শোধরাবে কী করে? কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠিক হয়েছে, পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে দলীয় সংগঠনকে ঢেলে সাজার চেষ্টা হবে। যেখানে যেখানে সম্ভব, সেখানে নেতৃত্ব বদলের চেষ্টা হবে। সাধারণ মানুষের পছন্দের লোককে তুলে আনতে হবে। দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের সরিয়ে সক্রিয় নেতাদের নেতৃত্বে তুলে আনার চেষ্টা হবে।

অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও পার্টি কংগ্রেস আয়োজনে একই রকম অনীহা দেখা দিয়েছে। এখন একমাত্র ত্রিপুরায় সিপিএম ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু কম সময়ে আগরতলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বিমান। পার্টি কংগ্রেসের হাজার খানেকের বেশি প্রতিনিধিকে বিমানে চাপিয়ে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া ব্যয়সাপেক্ষ। মহারাষ্ট্র সম্ভাব্য তালিকায় ছিল। কিন্তু সেখানকার নেতারা জানিয়ে দেন, এ বছরই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। তার পরে দলের সম্মেলনের জন্য অর্থ জোগাড় করা কঠিন। বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিও উৎসাহ দেখায়নি। নতুন রাজ্য তেলঙ্গানায় পার্টি কংগ্রেস করতে হলে হায়দরাবাদে করতে হত। কিন্তু তেলঙ্গানা গঠনের বিরোধিতা করে সেখানেই আবার পার্টি কংগ্রেস করতে যাওয়াটা ঠিক হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তা ছাড়া হায়দরাবাদে ২০০২ সালেই পার্টি কংগ্রেস হয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত বিশাখাপত্তনমেই পার্টি কংগ্রেস হবে বলে ঠিক হয়।

দলীয় সূত্রের খবর, পার্টি কংগ্রেসের জন্য সম্মেলন পর্ব শুরু হবে অক্টোবর থেকে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি যে হেতু পার্টি কংগ্রেস বসবে, তাই ডিসেম্বরের মধ্যে ছোট রাজ্যগুলিকে রাজ্য সম্মেলন সেরে ফেলতে বলা হয়েছে। মাঝারি মাপের রাজ্যগুলি জানুয়ারি এবং বড় রাজ্যগুলি ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্মেলন সেরে ফেলবে। কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর উদার আর্থিক নীতির প্রভাব খতিয়ে দেখতে তিনটি কমিটি তৈরি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী দলের নতুন রাজনৈতিক রণকৌশল তৈরি হবে। যার খসড়া নিয়ে জানুয়ারি থেকে পার্টিতে আলোচনা শুরু হবে।

cpm party congress alimuddin andhra pradesh premangshu chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy