Advertisement
E-Paper

উপাচার্যের দাবি, নিছক ইভ টিজিং!

তাৎপর্যপূর্ণ হল, উপাচার্যের বয়ানের সঙ্গে আজই সুর মিলিয়েছে আরএসএস-ও

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৪
সরব: সংবাদমাধ্যমের সামনে বিএইচইউ-এর উপাচার্য। ছবি: পিটিআই।

সরব: সংবাদমাধ্যমের সামনে বিএইচইউ-এর উপাচার্য। ছবি: পিটিআই।

শ্লীলতাহানি নয়, নিছক ইভ টিজিং-এর ঘটনা!

বৃহস্পতিবার রাতে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর সঙ্গে এমনটাই ঘটেছিল বলে দাবি করলেন খোদ উপাচার্য গিরিশচন্দ্র ত্রিপাঠী। তাঁর দাবি, নরেন্দ্র মোদীর সফরের আগে বহিরাগতরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। উপাচার্যের এমন মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে পড়ুয়া-শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট মহলে।

একটি ইংরাজি সংবাদপত্রে ত্রিপাঠীর দাবি, ‘‘এটা বহিরাগতদের হাতে তৈরি ঘটনা।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বারাণসীতে আসার কথা ছিল। মনে হয়, সে জন্যই এ সব ঘটানো হয়েছে।’’ গোটা দেশেই উচ্চশিক্ষায় নামী প্রতিষ্ঠানগুলিতে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন ত্রিপাঠী।

নিজের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করতে নির্যাতিতা ছাত্রীটিকেও টেনে এনেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘ছাত্রীটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। যে ভাবে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করেছে, তাতে সে সন্তুষ্ট। তবে কিছু লোক রাজনীতির স্বার্থে ওই ঘটনাকে ব্যবহার করতে থাকায় ছাত্রীটি ক্ষুব্ধ।’’ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিরাপত্তার অভাব নেই— এই দাবি করে উপাচার্যের মন্তব্য, ‘‘যদি প্রতিটি ছাত্রীর কথা শুনে চলতে হয়, তা হলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোই যাবে না।’’

তাৎপর্যপূর্ণ হল, উপাচার্যের বয়ানের সঙ্গে আজই সুর মিলিয়েছে আরএসএস-ও। ছাত্রীদের লাঠিপেটা করার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে যোগী আদিত্যনাথকে ফোন করেন মোদী। আর আজ সঙ্ঘ-নেতা ইন্দ্রেশ কুমার টুইট করেন, ‘‘কমরেডস বা আমাদের তথাকথিত বিরোধীরা রাজনীতির করতেই ছাত্রীদের ব্যবহার করছেন।’’ প্রায় একই দাবি করে উপাচার্যের বক্তব্য, শনিবার রাতে লাঠি চালানোর সময়ে পড়ুয়াদের পাশে ছিল দুষ্কৃতীরা। তারা পেট্রোল বোমা ও ঢিল ছুড়েছে। এবং পুলিশ ছাত্রীদের উপরে নয়, লাঠি চালিয়েছে দুষ্কৃতীদের উপরে।

পড়ুয়া থেকে প্রত্যক্ষদর্শী— কেউই উপাচার্যের এই দাবি মানতে নারাজ। প্রত্যেকেরই বক্তব্য, গদি বাঁচাতে সঙ্ঘের সুরে কথা বলছেন উপাচার্য। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, উপাচার্যের কথা সত্যি হলে এক হাজার পড়ুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর করল কোন যুক্তিতে? উপাচার্যের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। সেই সঙ্গেই যোগী সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে মুখ্যসচিব, ডিজিপি ও উপাচার্যকে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে তারা।

উপাচার্য যা-ই বলুন, লাঠি চালানোর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেই উত্তরপ্রদেশ সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছেন বেনারসের ডিভিশনাল কমিশনার নিতিন গোকর্ণ। রিপোর্টের বক্তব্য, অভিযোগ স্পর্শকাতর হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্যাতিতা ছাত্রীর সঙ্গে ঠিক ব্যবহার করেনি। পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠক করতে আজ দিল্লি আসেন ত্রিপাঠী। তাঁর দিল্লি আসা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। কেউ কেউ দাবি করেন, কৈফিয়ত চাইতেই তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। যদিও মন্ত্রক জানিয়েছে, ত্রিপাঠীকে আদৌও ডেকে পাঠানো হয়নি। তিনি নিজের কাজে দিল্লি এসেছেন। পরে উপাচার্য জানান, ‘‘আমার কাছে মন্ত্রকের কোনও শমন আসেনি।’’ ঘটনার তদন্তে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি এস দীক্ষিতের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। বলেন, ‘‘ব্যক্তির সম্মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সম্মানের কথাও মাথায় রাখতে হবে।’’

Eve Teasing Varanasi Hindu University বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy